দেশে করোনার স্রোতকে কোনো ক্রমেই ঠেকানো যাচ্ছে না। সংক্রমণ শুরুর ১১৭ দিনের মাথায় আক্রান্ত দেড় লাখ ছাড়িয়েছে। এই দিন দেশে সর্বোচ্চ ৪ হাজার ১৯ জন শনাক্ত হয়েছেন। শনাক্ত এক লাখ থেকে দেড় লাখ হতে সময় লেগেছে মাত্র ১৪ দিন। ১০৩ দিনের মাথায় দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের সংখ্যা ছিল ১ লাখ ২ হাজার ২৯২ জন। প্রকোপ শুরুর পর প্রথম ৫০ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছিল ৮৭ দিনের মাথায় এরপর তা ১ লাখে পৌঁছাতে সময় লেগেছে মাত্র ১৬ দিন। গত ৮ই মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়।
এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর মধ্যে রাজধানী ঢাকা সিটিতেই ৮৫ হাজারের ওপরে আক্রান্ত হয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টায় আরো ৪ হাজার ১৯ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এটাই একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। মারা গেছেন আরো ৩৮ জন। এ নিয়ে শনাক্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৭৭ জন এবং মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৯২৬ জনে দাঁড়িয়েছে।
বিভাগগুলোর মধ্যে ঢাকা বিভাগে মোট আক্রান্তের ৬৯ দশমিক ৬০ শতাংশ রয়েছে। এ বিভাগে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৬ হাজার ৬৮৪ জন। দেশে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৭৭ জন। সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তথ্যমতে, ২রা জুলাই পর্যন্ত করোনায় ঢাকা সিটিতে ৮৩ হাজার ৫২৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর ঢাকা সিটিতে মারা গেছেন ৪৬৩ জন। রাজধানী ছাড়া ঢাকা বিভাগে আক্রান্ত হয়েছেন ২৩ হাজার ১৫৯ জন। এই বিভাগে মোট মারা গেছে (ঢাকা সিটি ও অন্যান্য জেলাসহ) ৯৭৬ জন।
ময়মনসিংহ বিভাগে মোট ৩ হাজার ২৩৯ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এ বিভাগে মারা গেছেন ৪৯ জন। এখন পর্যন্ত ২২ হাজার ২২৪ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগে। এ বিভাগে ভাইরাসটিতে মারা গেছেন ৫৩৩ জন। রাজশাহী বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৫ হাজার ৯১৬ জন। বিভাগটিতে মারা গেছেন ৮৮ জন। রংপুর বিভাগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৮৪৬ জন। এ বিভাগে মারা গেছেন ৫২ জন। খুলনা বিভাগে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৪ হাজার ৭৬৮ জন। এ বিভাগে মারা গেছেন ৮০ জন। বরিশাল বিভাগে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোট ৩ হাজার ১৭ জন। এ বিভাগে মারা গেছেন ৭০ জন। সিলেট বিভাগে ৪ হাজার ৫৮৩ জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে। মারা গেছেন ৭৮জন।
এদিকে, গতকাল করোনা নিয়ে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন চার হাজার ১৯ জন। এটিই এ পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্ত। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত মোট শনাক্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫৩ হাজার ২৭৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরো ৩৮ জন মারা গেছেন। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো এক হাজার ৯২৬ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন চার হাজার ৩৩৪ জন। এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৬৬ হাজার ৪৪২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ১৭ হাজার ৯৪৭টি। আগের নমুনাসহ ২৪ ঘণ্টায় মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৬২টি। এখন পর্যন্ত আট লাখ ২হাজার ৬৯৭টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষার মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন চার হাজার ১৯ জন। পরীক্ষার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ২১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৪৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৬ শতাংশ। মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ৩২ জন পুরুষ এবং ৬ জন নারী। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১ থেকে ৯০ বছরের মধ্যে দুই জন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে সাত জন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে আট জন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে দুই জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ১৬ জন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে দুই জন এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ১২ জন, বরিশাল বিভাগে দুই জন, রাজশাহী বিভাগে পাঁচ জন, খুলনা বিভাগে পাঁচ জন, সিলেট বিভাগে দুই জন এবং রংপুর বিভাগে একজন রয়েছেন। এদের মধ্যে হাসপাতালে মারা গেছেন ৩৩ জন এবং বাসায় মৃত্যুবরণ করেছেন পাঁচ জন।
এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে বয়স বিবেচনায় মৃত্যুর হার ৬০ বছরের উপরে ৪৩ দশমিক ৩১ শতাংশ(৮৩৪ জন), ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে ২৯ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ(৫৬০ জন), ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে ১৪ দশমিক ৮০ শতাংশ (২৮৫ জন), ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে ৭ দশমিক ৫৮ শতাংশ( ১৪৬ জন), ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ(৬৭ জন), ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ১ দশমিক ১৪ শতাংশ (২২ জন) এবং শূন্য থেকে ১০ বছরের মধ্যে শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ (১২ জন) রয়েছেন।
গত ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশনে রাখা হয়েছে ৯৬০ জনকে। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৫ হাজার ৭৫৭ জন। ২৪ ঘণ্টায় আইসোলেশন থেকে ছাড়া পেয়েছেন ৭৭৫ জন, এখন পর্যন্ত মোট ছাড়া পেয়েছেন ১২ হাজার ৭৭৫ জন। এ পর্যন্ত মোট আইসোলেশন করা হয় ২৮ হাজার ৫০২ জনকে। গত ২৪ ঘণ্টায় প্রাতিষ্ঠানিক ও হোম কোয়ারেন্টিন মিলে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে দুই হাজার ৮৯৪ জনকে। এখন পর্যন্ত তিন লাখ ৬৯ হাজার ১৮৯ জনকে কোয়ারেন্টিন করা হয়েছে। কোয়ারেন্টিন থেকে গত ২৪ ঘণ্টায় ছাড়া পেয়েছেন তিন হাজার ১৬৮ জন, এখন পর্যন্ত ছাড়া পেয়েছেন তিন লাখ পাঁচ হাজার ১৮১ জন। বর্তমানে মোট কোয়ারেন্টিনে আছেন ৬৩ হাজার ৬০৮ জন।
গত ৮ই মার্চ দেশে প্রথম শনাক্ত হলেও করোনায় প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ই মার্চ। প্রথম রোগী শনাক্তের ২৮ দিন পর ৬ই এপ্রিল শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১০০ ছাড়ায়, ১৪ই এপ্রিল ছাড়ায় এক হাজার। ১০ হাজার ছাড়ায় গত ৪ঠা মে।