× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চলে গেলেন সিলেট বিএনপি’র প্রবীণ নেতা এমএ হক

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট থেকে
৪ জুলাই ২০২০, শনিবার

করোনা উপসর্গ নিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন সিলেট বিএনপি’র প্রবীণ নেতা এমএ হক। গতকাল সকাল ১০টার দিকে তিনি নগরীর নর্থইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। তার মৃত্যুতে সিলেটে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। প্রিয় এই নেতাকে হারিয়ে  বিএনপির নেতাকর্মীরা কাঁদছেন। জনসেবায় এক নিবেদিত প্রাণ রাজনীতিবিদ ছিলেন এমএ হক। শেষ জীবনে এসে তিনি বিএনপির অভিভাবকের দায়িত্ব পালন করছিলেন। দলের দুর্দিনে তিনি ছিলেন অন্যতম কাণ্ডারী। প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ঘনিষ্টজন ছিলেন তিনি।
এমএ হক বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ছিলেন। এর আগে তিনি সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির সভাপতি ও আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, করোনাকালীন সময়ে ত্রাণ বিতরণে সক্রিয় ছিলেন এমএ হক। সপ্তাহ খানেক আগে তিনি নগরীর যতরপুরস্থ বাসায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রাথমিকভাবে ডাক্তারের পরামর্শে চিকিৎসা চললেও পরে গত মঙ্গলবার বিকালে তাকে সিলেটের নর্থইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে করোনা আইসোলেশন সেন্টারে রেখে তার চিকিৎসা চলে। বুধবার রাতে তার শারীরিক অবস্থার আরো অবনতি হলে আইসিইউ সাপোর্টে নেয়া হয়। গতকাল সকালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতা নর্থইষ্ট হাসপাতালে ভিড় করেন। শোকের ছায়া নেমে আসে সিলেটে। নর্থইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী মানবজমিনকে জানিয়েছেন- এমএ হক করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে নেয়া হয়। ডা. শাহরিয়ার বলেন- এমএ হকের মৃত্যু সিলেটবাসীর জন্য বড় ক্ষতি। এমন নেতা পাওয়া বিরল। তার মৃত্যুতে সবাই শোকাহত। এমএ হকের ছেলে ব্যারিস্টার আদনান জানিয়েছেন- নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর তার পিতাকে নর্থইষ্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়া হয়। এরপর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে নেয়া হয়। তিনি সিলেটবাসীর কাছে তার পিতার রূহের মাগফেরাত কামনা করে দোয়া চেয়েছেন। এমএ হক ছিলেন বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ। সিলেটের উন্নয়ন, ঐক্যবদ্ধ সামাজিকতায় তার অবদান ছিলো বেশি। এম এ হক এর পুরো নাম মুহাম্মদ আব্দুল হক। তিনি ১৯৫৪ সালের ১লা জুলাই সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি বালাগঞ্জ উপজেলার দেওনাবাজার ইউনিয়নের কলুমা গ্রামে। এম এ হক বিভিন্ন সময় সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির সভাপতি ছিলেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। এদিকে- গতকাল বাদ জুম্মা নগরীর মানিকপীর (রহ.) মাজারস্থ লাশঘরে তার মরদেহ গোসল করানো হয়। এরপর সেখানেই তার প্রথম জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। রাত ৮টায় দ্বিতীয় জানাযা শেষে বালাগঞ্জের কলুমা গ্রামে তাকে চির সমাহিত করা হয়। তার জানাযায় সিলেটের রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এমএ হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। এদিকে- এমএ হকের মৃত্যুতে শোক জ্ঞাপন করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও বিএনপ্থির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। এক শোক বার্তায় তিনি বলেন- বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এম এ হক-এর মৃত্যুতে দলের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। নিজের ফেসবুক আইডিতে এমএ হকের মৃত্যুর খবর জানিয়ে শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। তিনি মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। এমএ হকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার। শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি। এক শোক বার্তায় কামরুল হুদা জায়গীরদার বলেন, ‘বর্তমানে রাজনৈতিক বৈরিতার এই দুঃসময়ে এম এ হকের বিদায়ে আমরা অভিভাবকশূন্য হলাম। এম এ হক আজীবন দেশ-জাতি ও সিলেটের উন্নয়নে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে গেছেন। দেশের যেকোনো দুর্যোগ মুহুর্তে তিনি জাতির সেবায় এগিয়ে এসেছেন। সিলেট বিভাগে বিএনপির কার্যক্রম সুসংহত করতে তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন। শ্রদ্ধেয় অভিভাবককে হারিয়ে আমরা গভীর শোকাহত। আল্লাহ আমাদের অভিভাবক এম এ হক ভাইকে জান্নাতের মেহমান হিসেবে কবুল করুন ও  তার পরিবারবর্গকে এই শোক সইবার শক্তি দিন।’ শোক প্রকাশ করেছেন সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল কাহের চৌধুরী শামীমও। শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান তিনি।

এমএ হক একজন মিতভাষী মানুষ ছিলেন: সেকিল চৌধুরী
এনআরবি-এর চেয়ারপার্সন এমএস সেকিল চৌধুরী বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গনে হাসিমুখে সাধারণ মানুষের কথা শুনার মতো একজন  রাজনীতিবিদ ছিলেন এমএ হক। তার দল যখন ক্ষমতায় ছিল তখনও তাকে নরম সুরে কথা বলতে দেখেছি। সামাজিক কাজে যখন ২/১ বার তার কাছে গিয়েছি, দেখেছি চারপাশে বহুলোক বিস্তর রাজনৈতিক কথাবার্তায় ব্যস্ত, তবু তিনি অরাজনৈতিক দু’একটি কথা বলার সুযোগ দিয়েছেন, শুনেছেন। বিমানবন্দর ও বিমানের সিলেট-ঢাকা রুটে বহুবার দেখা হয়েছে। সর্বদাই তিনি হাসিমুখে এগিয়ে এসেছেন।
সিলেটের ব্যবসায়ী থেকে তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করে রাজনৈতিবিদ হয়ে উঠেছিলেন এবং একজন ধার্মিক মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার সুন্দর ব্যবহারের জন্য তিনি সিলেটের মানুষের মাঝে বেঁচে থাকবেন। শোক জানাই তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি। প্রবাসীদের নানা সমস্যা মোকাবিলায় আন্তরিকতার জন্য তার প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর