× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মাস্ক কেলেঙ্কারি

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
৪ জুলাই ২০২০, শনিবার

মাস্ক নিয়ে কেলেঙ্কারি। দেশে দেশে কত কি-ই না হচ্ছে এ মাস্ক নিয়ে। হচ্ছে ওলট-পালট। পদ হারাচ্ছেন প্রভাবশালীরা। স্লোভেনিয়ায় তো রীতিমতো রাজনৈতিক সংকটই তৈরি হয়েছে। সেখানকার অর্থমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পদত্যাগ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এর আগে জিম্বাবুয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রীকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
বাংলাদেশেও করোনা সংকটের শুরু থেকেই আলোচিত এক চরিত্র মাস্ক। প্রশ্ন ওঠে এর মান নিয়ে। প্রমাণ মেলে নিম্ন মানের মাস্ক সরবরাহের। অভিযোগ ওঠে দুর্নীতির। হয়েছে তদন্ত কমিটিও। তদন্ত কমিটি রিপোর্টও দাখিল করেছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক নিম্নমানের মাস্ক গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। এ কারণে তাকে বদলি করা হয়। নিম্নমানের মাস্ক-এর বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলায় মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে ওএসডির ভাগ্যবরণ করতে হয়েছিল। নিম্ন মানের পিপিই নিয়ে কথা বলায় নোয়াখালীতে চিকিৎসককে শোকজ করেছিল তত্ত্বাবধায়ক। জেএমআই নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মুগদা জেনারেল হাসপাতালে সরবরাহ করা মাস্কের প্যাকেটে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক থাকায় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ওই মাস্কের মান সম্পর্কে জানতে চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালককে চিঠি দেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক ২রা এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্রিফিংয়ে স্বীকার করেন, ওই মাস্ক সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক ছিল। প্যাকেটের গায়ে এন-৯৫ লেখা হয়েছিল ‘ভুল করে’।
এদিকে, এন-৯৫ মাস্ক জালিয়াতির ঘটনায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএমআই’র কর্ণধার আবদুর রাজ্জাকসহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে তদন্ত কমিটি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে জানান, তদন্ত নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি প্রভাব বিস্তারও। তাই অনিয়মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, যাদের নাম প্রতিবেদনে এসেছে, তারা এন-৯৫ মাস্কের চালান গ্রহণ করেন। এছাড়া উচ্চ পর্যায়ের কাউকে এই তদন্তের আওতায় আনা বা তাদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়নি।
তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত সচিব সাইদুর রহমান এ বিষয়ে মানবজমিনকে বলেন, সুপারিশসহ প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। এখন এটি বাস্তবায়ন করার কথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাসপাতাল অনুবিভাগের। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে হাসপাতাল অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মুহিবুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, এ বিষয়ে তারা জানা নেই। দুই সপ্তাহ আগে তিনি এখানে এসেছেন। তবে প্রতিবেদনের আলোকে কিছু না কিছু ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অন্যদিকে মাস্ক, পিপিইসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রীর ক্রয় ও সরবরাহে দুর্নীতি-অনিয়মের বেশ কয়েকটি অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গত মাসের গোড়ার দিকে অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব দুর্নীতিতে জড়িত সন্দেহে ‘প্রভাবশালী’ প্রায় এক ডজন ব্যক্তির একটি তালিকা তৈরি করেছে দুদক। যাদের মধ্যে আছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উচ্চপর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং তাদের আত্মীয়-স্বজন। তবে দুদক কর্মকর্তারা অনুসন্ধানের স্বার্থে ওইসব কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেননি। এদিকে সারা দেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের এন-৯৫ মাস্ক, পিপিই সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে বলা হলেও এখনও ২৪ শতাংশ মান সম্পন্ন পিপিই সরবরাহ করা হয়নি বলে টিআইবি’র এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ফলে সারা দেশেই চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। আর নিজেরাই সংক্রমিত হচ্ছেন। এটা খুবই উদ্বেগের।

দেশে দেশে মাস্কসহ মেডিক্যাল সরঞ্জামে নানা কেলেঙ্কারি: করোনা ভাইরাসে জর্জরিত পুরো বিশ্ব। ভাইরাসটি মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে সরকারগুলো। এর মধ্যে দেশে দেশে মহামারি কেন্দ্র করে মেডিক্যাল সরঞ্জাম নিয়ে দুর্নীতিসহ নানা কেলেঙ্কারিতে পদ ছাড়ছেন বা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন মন্ত্রীরা। এখন অবধি বিভিন্ন দেশের এক ডজনেরও বেশি মন্ত্রী এই মহামারির মধ্যে পদত্যাগ করেছেন বা বরখাস্ত হয়েছেন। সর্বশেষ এ তালিকায় যোগ হয়েছেন, স্লোভেনিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলে হোসে ও  অর্থমন্ত্রী সদ্রাভকো পচিভালেস্ক। পচিভালেস্ককে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদিকে হোসে পদত্যাগ করেছেন। দেশটির পুলিশ কমিশনারও পদত্যাগ করেছেন। স্লোভেনিয় গণমাধ্যম অনুসারে, পচিভালেস্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ পিপিইসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহের চুক্তি পছন্দের একটি কোম্পানিকে কাজ দিয়েছিলেন। ওই কোম্পানি সঠিক সামগ্রী সরবরাহ করেনি।
করোনায় বিশ্বজুড়ে দুর্নীতির পাহাড় দিন দিন বড় হয়ে উঠছে। মৃতদের লাশ দাফনের ব্যাগ থেকে শুরু করে ত্রাণ সরবরাহ পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই ধরা পড়েছে গর্হিত দুর্নীতি। গত মাসে জিম্বাবুয়ের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওবাদিয়াহ মোয়োকে করোনা পরীক্ষা ও মেডিক্যাল সরঞ্জাম বিষয়ক কেলেঙ্কারিতে গ্রেপ্তার হন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি যথাযথ প্রক্রিয়া অবলম্বন না করেই হাঙ্গেরি-ভিত্তিক একটি সংস্থাকে ২ কোটি ডলারের একটি চুক্তি দিয়ে দেন। পরবর্তীতে যদিও আদালত তাকে দুর্নীতির মামলায় জামিন দিয়েছে।
গত মে মাসে বাজারদরের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে ভেন্টিলেটর ক্রয়ের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন বলিভিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী মারসেলো নাভাহাস। তাকে বরখাস্ত করা হয়। কলম্বিয়ায় ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে অধিক মূল্যে সামগ্রী ক্রয়ের অভিযোগে অন্তত ১৪টি রাজ্যে আলাদা তদন্ত শুরু হয় গত এপ্রিলে। একই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থা এমন একটি প্রতিষ্ঠানকে মাস্ক তৈরি করতে ৫ কোটি ৫০ লাখ ডলারের একটি চুক্তি পুরস্কার দিয়েছিল। যে প্রতিষ্ঠানটি ইতিপূর্বে কখনোই মেডিক্যাল সরঞ্জাম তৈরি করেনি। চুক্তি ভিত্তিক দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে আর্জেন্টিনায়। সেখানে মেডিক্যাল সরঞ্জাম তৈরির চুক্তিগুলো এমন সব প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেয়া হয়েছে যাদের এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা নেই বা খুবই কম। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এক্ষেত্রে সুবিধাগ্রহণ বা স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। এক ঘটনায় সরকার, ১৫ হাজার মেডিক্যাল মেস্ক প্রতিটি ৪০ ডলার দরে কিনেছে। যে প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এ মাস্ক কেনা হয়েছিল সে প্রতিষ্ঠানটির মোট মূল্য ছিল মাত্র ১ হাজার ৫০০ ডলার।
গত মে মাসে, ইকুয়েডরের প্রসিকিউটররা জানান, তারা একটি চক্র শনাক্ত করেছে যেটি সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে লাশ দাফনের ব্যাগ বাজারদরের চেয়ে ১৩ গুণ বেশি দামে বিক্রির চুক্তি লুফে নিয়েছে। পেরুতে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দূষিত স্যানিটাইজার ও ভুয়া মাস্ক কেলেঙ্কারির ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশ প্রধান পদত্যাগ করেছেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর