পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়ে মাদারীপুরের শিবচরের চরাঞ্চলে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভয়াবহ ভাঙ্গন ঝূকিতে রয়েছে একাধিক স্কুল ভবন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক, বাজারসহ গুরুত্বপূর্ন স্থাপনা। ভয়াবহ নদী ভাঙনে সব হারিয়ে দিশেহারা চরাঞ্চলের মানুষ। নেই মাথা গোঁজার ঠাই। ইঞ্জিনচালিত ট্রলার দিয়ে শেষ সম্বল আর পরিবার নিয়ে পারি জমাচ্ছে অন্যের জায়গায়। নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙ্গন প্রতিরোধের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোড।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গত কয়েকদিন ধরে পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পেয়ে মাদারীপুরের শিবচরের চরাঞ্চলের বন্দরখোলা, চরজানাজাত, কাঠালবাড়ীতে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বিলীন হয়েছে গত বছরে ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্থ একটি মসজিদ ভবন ও অস্থায়ী বাধের প্রায় ৩০ মিটার।
পানিতে তলীয়য়ে গেছে বসতঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিদ্যুতের খুটিসহ অসংখ্য ফসলি জমি। এছাড়াও ভাঙ্গন ঝূকিতে রয়েছে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩ তলা ভবন , প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন, একটি বাজারসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে দিশেহারা ভাঙ্গনকবলিত এলাকার মানুষ। ভাঙ্গনের তীব্রতায় দ্রুতগতিতে প্রয়োজনীয় মালামাল ও পরিবার নিয়ে কোন রকমে পাড়ি জমাচ্ছে অন্যের ভিটায়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, কাঁঠলাবাড়ি ইউনিয়ন থেকে মাগুরখন্ড এলাকায় যাওয়ার পথে মূল সড়কের একমাত্র সেতুটি বন্যার পানির সোতে ভেঙ্গে গেছে। চরের কয়েক একর জামির ফসল ধান, পাট ও বাদাম বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। চরজানাজাত ইউনিয়নের সরকারকান্দি, বেপারীকান্দি, সামাদখারকান্দিসহ ৭টি গ্রামের দুই হাজার মানুষ পানিবন্দি। ভাঙ্গনের শিকারও হয়েছেন বেশ কিছু পরিবার। মাদবরেরচর ইউনিয়নেও একই চিত্র। এই ইউনিয়নের মাদবরেরকান্দি, মুন্সীকান্দিসহ ৬টি গ্রামের দেড় হাজার শতাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন পার করছে। পদ্মার ভাঙ্গান থেকে মাত্র ১০ মিটার দূরে ভাঙ্গনের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে চরের বাতিঘর খ্যাত নূরুদ্দিন মাদবরের কান্দি এস.ই.এস.ডি.পি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়টি। এই বিদ্যালয়েল চারিপাশ পানিতে তলিয়ে রয়েছে। বিদ্যালয়টির পাশেই ইউনিয়ন পরিষদের ভবন, আশ্রয় কেন্দ্র, কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন, একটি বাজারসহ বিস্তীর্ণ জনপদ রয়েছে ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে।
স্বজনদের কবর পদ্মার ভাঙ্গণের ঝুঁকিতে থাকায় শেষ বারের মত সৃষ্টিকর্তার কাছে মোনাজাত ধরে দোয়া চেয়ে নিলেন বন্দরখোলা এলাকার বাদশা ফকির। তিনি বলেন, ‘সবার কবর নদীতে নিয়ে যাচ্ছে। আমার বাবা-চাচা, দাদাদের কবরও এখানে। হয়তো ভাঙ্গনে টিকবে না। তাই শেষ বারের মত আল্লাহ কাছে মোনাজাত ধরে দোয়া চেয়ে নিলাম।’
জানতে চাইলে শিবচর উপজেলার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এম রকিবুল হাসান বলেন, ‘নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে ভাঙ্গনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ডাম্পিং করে ভাঙ্গন প্রতিরোধের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এ ছাড়াও পানিতে তলিয়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্তদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রর ও ত্রাণ সহায়তারও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করেও আর্থিক সহায়তাও করা হবে।’