× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

করোনাকালের ভার্চুয়াল চিকিৎসা

অনলাইন

শামীমুল হক
(৩ বছর আগে) জুলাই ৭, ২০২০, মঙ্গলবার, ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন

হাসপাতাল ছেড়ে অনেক ডাক্তার এখন বাসায় বসে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে রোগী দেখছেন। কারোনার ভয়ে তারা চেম্বারে যাচ্ছেন না। হাসপাতালে তো নয়ই।

গত সপ্তাহে এক নামকরা গাইনি ডাক্তারের চেম্বারে যান আলী হোসেন। সঙ্গে তার স্ত্রী। চেম্বার খোলা। কিন্তু ডাক্তার নেই। তার স্ত্রী যে ওই ডাক্তারেরই রোগী। কি করা? চেম্বারের কর্মরতরা জানালেন, চিকিৎসক ভার্চুয়াল রোগী দেখেন।
আমরা সংযোগ করে দিচ্ছি আপনারা কথা বলুন। সংযোগ পাওয়ার পর তার স্ত্রী নিজের সমস্যার কথা জানান। ডাক্তার সব শুনে প্রেসক্রিপশন লিখে দেন। সেটির প্রিন্ট বের করে কর্মরত একজন হাতে ধরিয়ে দেন। একইসঙ্গে ভিজিট ১০০০ টাকা দিতে বলেন। আলী হোসেন বলেন, উনার ভিজিটতো ৮০০টাকা। চেম্বারে কর্মরতরা বলেন, আগে ছিল। করোনাকালে ম্যাডাম ভিজিট ১০০০ টাকাই নিতে বলেছেন।

আমরা সেটাই করছি। আলী হোসেন তাদের বলেন, এখনতো বাসায় বসে ম্যাডাম এটা করছেন। এখনতো ভিজিট কম হওয়ার কথা। শেষ পর্যন্ত ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ করে দেয়া হয় আলী হোসেনকে। তিনি চিকিৎসকের কাছেও একই যুক্তি তুলে ধরে বলেন, এখনতো আপনি কম নেবেন। বেশি চাচ্ছে কেন ওরা। চিকিৎসকের জবাব, করোনার সময় ওরা কষ্ট করে আসছে। আপনাদের সেবা দিচ্ছে। এজন্য ওদের একটু বেশি টাকা দিতে হচ্ছে।

অন্যদিকে দেশপ্রেমিক অনেক চিকিৎসক করোনাকালে দিনরাত পরিশ্রম করছেন। পরম মমতায় করোনা রোগীকে বাঁচিয়ে তোলার চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ সেবা দিতে গিয়ে নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মারা যাওয়া ডাক্তারের সংখাও কম নয়। আসলে
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে অনেক কিছুই। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম স্থানান্তরে হারিয়ে যাচ্ছে কৃষ্টি কালচার। আগে গ্রামে গ্রামে খোলা মাঠ ছিল। যেখানে ছেলে মেয়েরা অবাধে খেলত। এখন মাঠ নেই। আছে হাসপাতাল। হাসপাতালের ছড়াছড়ি। সব প্রাইভেট হাসপাতাল। সরকারি হাসপাতালের ডাক্তাররাই চালান এসব। আগে গাও গ্রামে দাইমা ছিল। তারা প্রসূতি মায়েদের খেয়াল রাখতেন। নরমাল ডেলিভারি হবে এটাই ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু প্রাইভেট হাসপাতাল আসার পর চিত্র বদলে যেতে থাকে। এখন প্রসব বেদনা কি তা মায়েরা জানেননা।

তার আগেই ছুরি চলে পেটে। কত কষ্টের ধন সন্তান তা আর বুঝতে হয়না এখনকার মায়েদের। আর তাই আগে যেমন মায়েরা নাড়ী ছেঁড়া ধন বলত। এখন আর মায়েরা সেভাবে বলতে পারেননা। আগেকার মায়েদের মতো বুকের দুধ খাওয়াতে চাননা এখনকার মায়েরা। শরীরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যাবে তাই। এখন দশ গ্রাম খুঁজেও পাওয়া যায়না যৌথ পরিবার। আধুনিকতা সবাইকে শিখিয়েছে একা থাকার কৌশল। শিখিয়েছে একা থাকার সুবিধা। ডিজিটাল জামানায় যা হচ্ছে তার সবই ডিজিটাল। আর এ ডিজিটাল নাকি এখন রাবারের চাল, যান্ত্রিক ডিম সবই খাওয়াচ্ছে মানুষকে। আধুনিকতার নামে পশ্চিমা কালচার ভর করেছে এই বাংলাদেশে।

সালাম দেয়ার পরিবর্তে হায়, হ্যালো জায়গা করে নিয়েছে অনেক আগেই। একটি প্রজন্ম আঁকড়ে ধরেছে এ কালচারকে। প্রকাশ্যে প্রেমিক যুগলের বেলাল্লাপনায় অন্যকে লজ্জায় মুখ লুকাতে হলেও তাদের তাতে কিছু যায় আসেনা। বাঙালির ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে পশ্চিমা কালচারের কাছে। বাংলাদেশের জাতীয় খেলার নাম হাডুডু। এটি জানেননা বর্তমান প্রজন্ম। তাদের খেলা এনড্রয়েড ফোন নিয়ে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে গ্রুপ করে খেলা। দাড়িয়াবান্দার কথা জিজ্ঞেস করলে বলে, এটা কি জিনিস। হায়রে প্রজন্ম। সন্তানরা জিজ্ঞেস করে ‘চাল’ গাছ কেমন বাবা? লাউ গাছ কত মোটা। রুই মাছ আর কাতল মাছ তাদের চেনার দরকার নেই? ফার্মের মুরগি হলেই হলো। গ্রামের ঐতিহ্য চিতই পিঠা, পাটিশাপটা, তেলের পিঠা ওদের আকৃষ্ট করতে পারেনা।

ওরা আকৃষ্ট হয় ফাস্টফুডে। পিৎজা, বার্গার এসবে। করোনাকালে ছাদে বারবিকিউ পার্টি চলে বন্দুদের নিয়ে। ওদের আইডল হয় ভারতীয় নায়িকা শ্রীদেবী কিংবা ঐশ্বরিয়া রায়। রাত দিন ভারতীয় হিন্দি সিরিয়ালে মত্ত থাকে ওরা। খেতে বসলেও চলে টিভি। ওয়াইফাই, ডিস এক মিনিটের জন্য বন্ধ হলে মাথা এলোমেলো হয়ে যায়। ফেনসিডিল, ইয়াবা সেবন ওদের ফ্যাশন। বন্ধুত্বে ছেলে মেয়ে পার্থক্য নেই। সবাই এক। নাচানাচি, হৈ হুল্লোড়ে মাতোয়ারা সবাই। এর বাইরে থেকে একটা অংশ নিজেকে প্রস্তুত করেন। জ্ঞান আহরণ করেন। কিন্তু তাদের মূল্যায়ণ হচ্ছে কোথায়? বাধ্য হয়ে মেধা পাচার হচ্ছে। মেধার অবমূল্যায়ণই এখানে ফ্যাক্টর।

স্বজনপ্রীতি, তদবিরে মেধাবীরা ছিটকে পড়ছেন। এ মেধা কাজে লাগছে অন্য দেশের। আমরা আত্মতৃপ্তি নেই বাংলাদেশের সন্তান বলে। এতে দেশের কি লাভ হচ্ছে? কদিন ধরে সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে ভারত যে রেমিট্যান্স পাচ্ছে তা সে দেশের অষ্টমস্থান। এত ভারতীয় বাংলাদেশে কাজ করে? গার্মেন্ট সেক্টরের উর্ধতনদের মধ্যে ভারতীয়ই নাকি বেশি। যেখানে দেশে লাখ লাখ বেকার যুবক ঘুরে বেড়াচ্ছে সেখানে ভারতীয়রা বাংলাদেশে চাকরি করে অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। এর কারণ কি? হয়তো দেশে গার্মেন্ট খাতে কাজ করবে এমন মেধা নেই। কিংবা যে সব মেধা ছিল তারা অন্য দেশে তাদের মেধা বিলাচ্ছে।

অবশ্য খবর নিয়ে জানা গেল, দেশে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করেও বেকার ঘুরছে এমন সংখ্যাও কম নয়। তাহলে আমরা তাদের কাজে না লাগিয়ে ভারত থেকে লোক আনছি কেন? প্রশ্ন উঠতে পারে মেধাবীদের মধ্যে কি দেশপ্রেম নেই? অবশ্যই আছে। তাহলে? আসলে দেশের পরিস্থিতি এমন যেখানে দেশপ্রেমের মূল্য নেই। চাটুকারিতা, চামচাগিরি এখানে অগ্রাধিকার পায়। আর মেধাবীদের দ্বারা এটা কখনো সম্ভব নয়। ফলে যা হবার তা হচ্ছে। আধুনিকতা কোথায় নিচ্ছে আমাদের? আধুনিকতার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। বাড়ি বাড়ি ঝুলছে টু-লেট। বেতন কমছে। চাকরি হারাচ্ছে অগণিত মানুষ। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে শুরু হয়েছে হা-পিত্যেশ। আর মুখে মাস্ক পড়ে যুবকরা ব্যস্ত এনড্রয়েড ফোনে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর