শ্রীনগর উপজেলার বিবন্দী বাগবাড়ী গ্রামের মারফত আলী শেখের ছেলে হাবীবুর রহমান শামীম। পড়ালেখা শেষ করে নিজ গ্রামের বর্ণমুখর কিন্ডার গার্টেনে শিক্ষকতা শুরু করে। পাশাপাশি কোচিং সেন্টারে পড়াত। কয়েক বছর আগে কিন্ডার গার্টেন বন্ধ করে চলে যান ঢাকার কেরানীঞ্জে। সেখানে কখনো শামীম কখনো শাকিল সহ বিভিন্ন সময় ছদ্ম নাম ধারণ করে জড়িয়ে পড়ে নানা অপকর্মে। এক সময় নিজেই গড়ে তুলে সিএনজি ছিনতাইকারী চক্র। মাঝে মাঝে এলাকায় আসতো। এলাকার লোকজন তাকে শিক্ষিত ভদ্রলোক হিসেবেই চিনে। কিন্তু হাবীব এই কাজের হোতা এটা জানার পর এলাকার লোকজনের কাছে তা অবিশ্বাস্য মনে হয়।
হাবীবের সংগঠিত করা চক্রটি ঢাকা- কেরানীগঞ্জ ও পাশর্^বর্তী এলাকা থেকে যাত্রী সেজে সিএনজি ভাড়া করে নির্জন এলাকায় নিয়ে তা ছিনতাই করতো।
ছিনতাইয়ের আগে কখনো কখনো চালককে কোমল পানীয়ের সঙ্গে খাওয়ানো হতো ঘুমের ওষুধ। সিএসজিচালক যাতে সন্দেহ করতে না পারে এজন্য হাবীব তার ৪র্থ স্ত্রী মায়ানুর সুমীকে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্য করে নেয়। বুধবার দুপুরে শ্রীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ হেদায়াতুল ইসলাম ভূঞা সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য দেন। তিনি জানান, হাবীব ও তার স্ত্রী সহ এই চক্রের ৪ সদস্যকে মঙ্গলবার দুপুরে শ্রীনগর উপজেলার কেসি রোডের তন্তর ইউনিয়নের সূফীগঞ্জ এলাকায় সিএনজিচালককে অস্ত্রের মুখে ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় পুলিশ আটক করে।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হাবীব জানায়, তারা কয়েকদিন আগে প্ল্যান করে সিএনজি ভাড়া করে শ্রীনগর উপজেলার আলমপুর-বাড়ৈখালী সড়কের নির্জনস্থানে এনে তা ছিনতাই করবে। পরিকল্পনা মতো মঙ্গলবার সকাল ১০ টার দিকে চালক রানা হাওলাদারের সিএনজিটি কেরানীগঞ্জের খোলামোড়া থেকে ৫ জন মিলে ভাড়া করে। বেলা ১১ টার দিকে আলমপুর-বাড়ৈখালী সড়কের মাঝা মাঝি এসে তারা সিএনজি থেকে নামে। এ সময় হাবীবের স্ত্রী সুমী চালক রানা হাওলাদারকে ঘুমের ওষুধ মিশ্রিত মোজো খেতে বললে সে তা প্রত্যাখ্যান করে। পরে তারা পরিকল্পনা পরিবর্তন করে। হাঁসাড়া বাজারে এসে চালক রানার হাত-পা বাঁধার জন্য লাইলনের রশি কিনে। সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করার পর তারা সিএনজিতে উঠে রোডের তন্তর এলাকার নির্জন স্থানে নিয়ে আসে। এ সময় হাবীব চালক রানার গলায় ছুরি ধরে রাখে। বাকিরা তার হাত-পা বাঁধা শুরু করলে সে সিএনজি থেকে লাফ দিয়ে পরে চিৎকার শুরু করে। রানার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এসে পাভেল, ফজলুল করিম ও সুমীকে আটক করে। হাবীব ও শান্ত ওরফে জিএম পুকুরে ঝাঁপ দিয়ে কচুরি পানায় লুকিয়ে থাকে। বিকাল ৪টার দিকে হাবীব কচুরি পানা থেকে উঠে আসার সময় স্থানীয়রা তাকে আটক করে পাশেই অবস্থান নেয়া পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
অফিসার ইনচার্জ হেদায়াতুল ইসলাম আরো বলেন, হাবীব ও তার স্ত্রী সুমীর বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা রয়েছে। হাবীব শুভাঢ্যা পশ্চিম পাড়ার সুমন মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া। স্ত্রী সুমীর বাবার বাড়িও ওই এলাকায়। তার বাবার নাম আলী হোসেন। ছিনতাইকারী চক্রের বাকি ৩ জনের মধ্যে পাভেলের বাড়ি ময়মনসিংহের ওয়্যারলেস গেট এলাকায়। ফজলুল করিমের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার গৌড়িসার বাজার গ্রামে। পলাতক শান্ত কামরাঙ্গীর চরের বাদশা মিয়ার গলির ভাড়াটিয়া। অনেকদিন ধরে হাবীবের নেতৃত্বে চক্রটি একই কায়দায় সিএনজি ছিনতাই করে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে শ্রীনগর থানায় মামলা হয়েছে।