× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘আমাগো যা ছিল সবই নদীতে গিলে খেলো’

বাংলারজমিন

হায়দার আলী, শিবচর (মাদারীপুর) থেকে
৯ জুলাই ২০২০, বৃহস্পতিবার

‘জীবনের শুরু থিকা চরে বাস করি। তখন নদীর ভাঙন ছিল মেলা দূরে। গত বছরও ভাবিনি এ বছর আমাগো সব শ্যাষ হইয়া যাইবে। চোখের সামনে আমাগো যা ছিল সবই নদীতে গিলে খেলো।’ কথাগুলো মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চরজানাজাত ইউনিয়নের মিনাকান্দি এলাকার ষাটোর্ধ্ব জেলে জোহরুদ্দিন মিয়ার। গত দুই সপ্তাহ আগে বসতঘর, জমি ও গাছপালা নদীতে বিলীন হয়ে যায় তার। এরপর দুই মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছে অন্যের ভিটায়। শুধু জোহরুদ্দিন নয়, তার মতো এমন আরো দুই শতাধিক পরিবার পদ্মার ভাঙনে এখন দিশাহারা। শিবচর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন জুড়েই পদ্মার চরাঞ্চল।
বর্ষার মৌসুমে পানি বেড়ে যাওয়ায় বুক পানিতে তলিয়ে চরাঞ্চলের বেশিরভাগ জমি। বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়ছেন চরাঞ্চলের প্রায় ২৪০০ পরিবার। উঁচু স্থানগুলোতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ নদী ভাঙন। মঙ্গলবার দুপুরে চরজানাজাত ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, ইউনিয়নটির ৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৮টি ওয়ার্ড নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। শুধুমাত্র ইউনিয়নটির ৯নং ওয়ার্ড এখনো বিলীন হয়নি। তবে, ওয়ার্ডের প্রতিটি গ্রামে ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। কোথায় কোমর পানি, কোথায় বুক পানি। পানির মধ্যে এখনো বসবাস করছে কিছু মানুষ। পদ্মার ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা অনেকেই জীবন বাঁচাতে বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে উঁচু স্থানে। অনেকে বাড়িঘর ভেঙে ও গবাদিপশু নৌকায় তুলে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে চলছে। একে একে দুবার নদীতে বিলীন হয়েছে আমিনা খাতুনের বসতঘর। তবুও বেঁচে থাকার আকুতি জানিয়ে তিনি মানবজমিনকে বলেন, ‘নদীর পাড়ে আমাগো অনেক জমিজমা ছিল। ভাঙতে ভাঙতে এখন সব শেষ। গত বছর যেখানে নতুন ঘর বানাইছি, সেই ঘরও আর নেই। ছেলে মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। এক টাকারও কেউ ত্রাণ দেয়নি।’ ভাঙনে আরেক ক্ষতিগ্রস্ত আব্দুল খালেক মাদবর বলেন, ‘ঘর, গাছপালা যা ছিল সব নদীতে গিলে খেয়েছে। নিজের বলে আর কোনো জমি নেই। অন্যের ভিটায় চার ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে উঠেছি। জানি না এখানে কতদিন থাকতে পারবো।’ পদ্মার চরে একছটা বালু চরে বাদাম চাষ করে যা আয় হতো তা দিয়েই সংসার চলাত আবু বক্কর সিদ্দিক। এবার বন্যার পানিতে বাদামের খেত গেছে তলিয়ে। পরিবার নিয়ে পানিবন্দি জীবন কাটানো আবু বক্কর সিদ্দিক মানবজমিনকে বলেন, ‘দুই বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছিলাম। সামান্য কিছু বাদাম তুলেছি। বাকি সব বাদাম বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। দুই বেলা শুকনা খাবার খেয়ে কোনো রকম বেঁচে আছি। এখন সরকারি সহযোগিতা না পেলে আর কতদিন এভাবে বাঁচবো জানি না।’ উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্র মতে, গত দুই সপ্তাহ ধরে পদ্মা নদীতে অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় শিবচরের চরাঞ্চলের বন্দরখোলা, চরজানাজাত, কাঁঠালবাড়ি ও মাদবরেরচরসহ ৯টি ইউনিয়নে বন্যার পানি উঠেছে। তবে নদী ভাঙন রয়েছে চারটি ইউনিয়নে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চরজানাজাত ইউনিয়ন। পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়েছে গত বছরে ক্ষতিগ্রস্ত একটি মসজিদ ভবন ও অস্থায়ী বাঁধের প্রায় ৫০ মিটার। পানিতে তলিয়ে গেছে বসতঘর, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিদ্যুতের খুঁটিসহ অসংখ্য ফসলি জমি। এছাড়াও ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তিনতলা ভবন, প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক ভবন, একটি বাজারসহ বিস্তীর্ণ জনপদ। জানতে চাইলে শিবচর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘বন্যা ও নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে সরকারি সহযোগিতা করা হবে। ত্রাণ পৌঁচ্ছে দেয়া হবে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের সরকারি খাস জমিতে ঘর করে আশ্রয় দেয়া হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর