× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ মাদ্রাসা সভাপতির বিরুদ্ধে

শেষের পাতা

প্রতীক ওমর/জাহিদ খন্দকার, সাঘাটা (গাইবান্ধা) থেকে
১১ জুলাই ২০২০, শনিবার

কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ মাদ্রাসা সভাপতির বিরুদ্ধে। এতে দুই যুগ ধরে পুষে রাখা স্বপ্ন ভঙ্গ  হলো সাত শিক্ষক এবং এক কর্মচারীর। এমপিওভুক্তির আশায় তারা এই দীর্ঘসময় প্রতিষ্ঠানকে তিলে তিলে গড়ে তুলেছেন। কাঙ্খিত সেই এমপিও হওয়ার পরই সভাপতির কুচক্রে অন্ধকারে ফেলে দেয়া হয় শিক্ষকদের। যেসময় বেতনের টাকা পেয়ে আনন্দ করার কথা সেখানে ঘুষের টাকা দিতে না পেরে চাকরি হারালেন তারা। সেখানে নতুনদের নিয়োগ দিয়েছেন ওই সভাপতি। ঘটনাটি গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের নাসির উদ্দিন প্রধান দাখিল মাদ্রাসা।
ঘটনা অনুসন্ধানে উঠে আসে বিভিন্ন তথ্য।
মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত ঘোষণার মাত্র ৮ মাসের মধ্যে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নুরননবী প্রধান ও মাদ্রাসার নৈশ প্রহরী সম্পর্কে সভাপতির ভাতিজা আনোয়ার হোসেন কৌশলে মাদ্রাসার সুপার কাজী মাহফুজুল হান্নানের কাছে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। ওই টাকা দিতে রাজি হননি সুপার। ফলে তার নামসহ আরো ৭ শিক্ষক এবং একজন কর্মচারীর নাম শিক্ষক তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। এরপর শুরু হয় নতুন শিক্ষক নিয়োগের পালা। পুরাতনদের জায়গায় সভাপতি নতুনদের নামের তালিকা পাঠায় শিক্ষা অফিসে। মাদ্রাসার সুপার কাজী মাহফুজুল হান্নান এসব ঘটনা অভিযোগ আকারে বাংলাদেশ মাদ্রাসা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পাঠান। অভিযোগ দেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা রংপুর অঞ্চলের উপপরিচালকের দপ্তরেও। এসবের অনুলিপি প্রেরণ করেছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার এ্যাড. ফজলে রাব্বি মিয়ার কাছে। গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা অফিস এবং উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস বরাবর।
নাসির উদ্দিন প্রধান দাখিল মাদ্রাসার একাডেমিক সহ-সুপার মো. মোজাম্মেল হক জানান, “এই মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সদস্য (শিক্ষক প্রতিনিধি) হিসাবে আমি আছি। মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করতে যে পরিশ্রম করেছি তার বর্ণনা বলে শেষ হবে না। এখন সভাপতি আমাকে শিক্ষকদের কাছ থেকে ৫ লাখ করে টাকা তুলে দিতে চাপ দেয়। টাকা তুলে দিতে রাজি না হওয়ায়  ১৫ লাখ টাকা ঘুষের বিনিময়ে আমার পদে জাহিদুল ইসলাম নামের একজনকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে নেয়া হয়েছে।
সহকারী মাওলানা (ফিকাহ্‌) ইদ্রিস আলী সরকার, সহকারী শিক্ষক (সাধারণ) মোহছেনা বিনতে মোকছুদ, সহকারী শিক্ষক (গণিত ও বিজ্ঞান) মোস্তফা জামান আকন্দ, সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) পূর্ণচন্দ সরকার, ক্বারী শিক্ষক (এবতেদায়ী শাখা) মোখলেছুর রহমান, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (পিওন) ফিরোজ কবির জানান, আমরা ২৪ বছর ধরে মাদ্রাসা চালিয়ে আসছি। এই মাদ্রাসার পিছনে জীবনের অর্ধেক সময় শেষ করলাম। মাদরাসা এমপিও ঘোষণার পরে প্রতিটি শিক্ষক-কর্মচারী থেকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। এখন ঘুষের টাকা না দেয়ার কারণে শিক্ষক তালিকা থেকে আমাদের নাম বাদ দিয়ে ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে নতুন শিক্ষক নিয়েছেন।
সভাপতি আমাদের সব আশা-ভরসা নষ্ট করে দিয়েছেন’।
সাঘাটা উপজেলার অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুস সোবহানের ছেলে জামিরুল ইসলাম জানান, তাকে মাদ্রাসায় চাকরি দেয়ার কথা বলে ১৫ লাখ টাকা দাবি করেন সভাপতি। পরে আলোচনা সাপেক্ষে ১০ লাখ টাকায় রাজি হন সভাপতি। পরে গরু-ছাগল জমাজমি বিক্রি করে টাকা জোগার করার পরে সভাপতি তাকে নিয়োগ দেননি। ১৫ লাখ টাকার  বিনিময়ে গোবিন্দগঞ্জের এক প্রার্থীকে নিয়োগ দিয়েছেন।
নাসির উদ্দিন প্রধান দাখিল মাদ্রাসার প্রশাসনিক সুপার, কাজী মাহফুজুল হান্নান জানান, গত বছরের ২১শে নভেম্বর সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নুরননবী প্রধান সকল শিক্ষক/কর্মচারীদের নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসে। বৈঠকে মাদ্রাসার সকল শিক্ষক/কর্মচারীর নাম সভাপতি নিজ হাতে লিখে স্বাক্ষর দেন। এরপর সভাপতি কৌশলে মাদ্রাসার নৈশ প্রহরী আনোয়ার হোসেনের মাধ্যমে আমাদের ৭ জন শিক্ষক ও এক কর্মচারীকে ৫ লাখ করে টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেয়। টাকা দিতে অপারগতা জানালে মাদ্রাসার সভাপতি নুরননবী প্রধান কৌশলে আমাকে ডেকে গোপন কক্ষে নিয়ে মাদ্রাসার বিভিন্ন কাগজপত্র ও শিক্ষক ইনডেক্স নাম্বার সংরক্ষণে পিন কোর্ড চেয়ে বসেন। দিতে অস্বীকার করলে সভাপতি ও তার লোকজন আমাকে শারীরিক নির্যাতন করেন। পরে জোর করে মাদ্রাসার যাবতীয় কাগজপত্রসহ পিন কোর্ড ছিনিয়ে নেন। এসময় আমি অজ্ঞান হলে পরে পুলিশের সহযোগিতায় উদ্ধার হই। এঘটনায় গত ২রা জুন সাঘাটা থানায় জিডি করা হয়েছে। জিডি নং ৭৭।
তিনি আরো বলেন, ‘এই মাদ্রাসায় আমি দীর্ঘ ২৪ বছর যাবৎ সুপারের দায়িত্ব পালন করে আসছি। মাদ্রাসার মোট ১৫ জন শিক্ষক ৩ কর্মচারীর ব্যক্তিগত তহবিল থেকে সবার মতামতে কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রেজুলেশন করে পর্যায়ক্রমে মাদ্রাসার অবকাঠামোর নির্মাণ মাদ্রাসায় ছাত্র ভর্তি, বিভিন্ন পরীক্ষা শিক্ষাবোর্ডে যাতায়াতসহ দীর্ঘ ২৪ বছরে প্রায় ৩০ লাখ  টাকা খরচ করেছি।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নুরননবী প্রধান জানান, ‘আমি কাউকে বাদ দেইনি, মাদ্রাসার সুপার কাজী মাহফুজুল হান্নান আমাদের শিক্ষকদের বাদ দিয়েছে, যারা তিলতিল করে মাদ্রাসা গড়ে তুলেছে। আমার আপন ভাইকে বাদ দিয়েছে, আমার বোনকে শিক্ষক তালিকা হতে বাদ দিয়েছে আমার ভাগিনাকে বাদ দিয়েছে।’
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আহসান হাবিব মানবজমিনকে জানান, “ওই মাদ্রাসার পুরাতন ৭ জন শিক্ষক ও এক কর্মচারীর পরিবর্তে সভাপতি নুরননবী নতুন তালিকা আমার বরাবর জমা দিয়েছেন। গত কয়েক বছরের শিক্ষকদের তালিকার সঙ্গে এমপিওভুক্তির পরের তালিকায় মিল না থাকায় ওই তালিকা জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর পাঠানো হয়নি। এই মাদ্রাসার শিক্ষক নিয়োগে কোনো বাণিজ্য হলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে’।
এ বিষয়ে সাঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর মানবজমিনকে জানান, এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকদের বাদ দিয়ে নতুন শিক্ষক নেয়ার সুযোগ নেই। আর নিয়োগ বাণিজ্যের প্রমাণ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এনায়েত হোসেন মানবজমিনকে জানান, সভাপতির পাঠানো সকল শিক্ষকদের তালিকা হতে যারা এই মাদ্রাসায় পূর্ব থেকে কর্মরত ছিলেন তাদের নাম বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। সভাপতি চাইলেও কর্মরত শিক্ষকদের বাদ দিয়ে নতুন শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবে না। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর