× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইজারার টাকা ইউএনও’র ‘সিএ’র পকেটে

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে
১২ জুলাই ২০২০, রবিবার

হাটবাজার ইজারা হবে, ইজারার টাকা যাবে সরকারের বিভিন্নখাতে বা হিসাবে। নীতিমালায় সেটাই বলা আছে। কিন্তু ব্যতিক্রম হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে। ইজারার দরপত্র আহ্বান করেও দরপত্র প্রক্রিয়া বাদ দেয়া হয়। উপরের নির্দেশের কথা বলে আগের ইজারাদারকেই ডেকে এনে দেয়া হয় বাজার বরাদ্দ। ইজারা মূল্যও চুকিয়েছেন ইজারাদাররা। কিন্তু সেই টাকা জমা হয়নি সরকারি কোষাগারে। অভিযোগ ইজারার লাখ লাখ টাকা ঢুকেছে  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সিএ (কনফিডেন্সিয়াল এসিস্ট্যান্ট)-এর পকেটে।
টাকা নিলেও ইজারাদারদের  দেয়া হয়নি কোন বৈধতা।
সম্প্রতি ইউএনও মেহের নিগার ও তার সিএ কামরুল ইসলাম এ উপজেলা থেকে বদলি হন। এরপরই বেড়িয়ে আসতে থাকে তাদের অনিয়ম। যার একটি হাটবাজার ইজারা।

উপজেলা চেয়ারম্যান নাছিমা লুৎফুর নিশ্চিত করেছেন দু’টি বাজার ইজারার ২৫/৩০ লাখ টাকা সিএ কামরুলের পকেটে রয়েছে।

সরকারি হাট-বাজারসমূহের ব্যবস্থাপনা, ইজারা পদ্ধতি এবং এ থেকে প্রাপ্ত আয় বণ্টন সম্পর্কিত নীতিমালাতে বলা হয়েছে, হাটবাজারের ইজারা বাংলা বৎসরের ভিত্তিতে (বৈশাখ থেকে চৈত্র) একবছরের জন্য প্রদান করতে হবে। কোনো বৎসরের যাবতীয় ইজারা কার্যক্রম পূর্ববর্তী বৎসরের ২০শে চৈত্রের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে এবং ওই বছরের মাঘ মাস থেকে ইজারা প্রদান কার্যক্রম শুরু করতে হবে। কিন্তু বিজয়নগরে ঠিক সময়ে কোনোটাই হয়নি। ১৪২৭ সনে হাটবাজার ইজারার জন্যে বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয় ১৪২৬ সনের ৮ই চৈত্র (২২শে মার্চ, ২০২০ইং)। শুধু তাই নয়, বিজ্ঞপ্তি প্রচার করলেও দরপত্র সিডিউল বিক্রি বন্ধ রাখা হয়। আগের ইজারাদারদের ডেকে এনে বলা হয় ইজারা তাদেরকেই দেয়া হবে এবং পূর্ব মূল্য অনুসারে তাদের কাছ থেকে ইজারার সম্পূর্ণ টাকা নিয়ে নেয়া হয়। এরপর মৌখিকভাবে তাদের ইজারা আদায়ের জন্য বলে দেয়া হয়। বিজয়নগর উপজেলায় মোট ১৮টি সরকারি হাট-বাজার রয়েছে। এসব হাট-বাজারের মধ্যে সিংগারবিল ইউনিয়নের সিংগারবিল তোহা বাজার ২ লাখ ৫ হাজার ১০০ টাকা, মেরাশানী বাজার ৩ লাখ ৭ হাজার ৫শ‘ টাকা, পাহাড়পুর ইউনিয়নের আউলিয়া বাজার ২ লাখ ২৫ হাজার ৭শ’ টাকা, পাহাড়পুর বাজার ৩১ হাজার ৩শ’ টাকা, মুকন্দপুর বাজার ১৯শ’ টাকা, চম্পকনগর ইউনিয়নের নূরপুর গরুর বাজার ২ লাখ ৮২ হাজার ১শ’ টাকা, নূরপুর তোহা বাজার ৭১ হাজার ২শ’ টাকা, হরষপুর ইউনিয়নের হরষপুর খেয়াঘাট বাজার ১০ হাজার ৮শ’ টাকা, হরষপুর তোহা বাজার ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭শ’ টাকা, হরষপুর গরুর বাজার ২০ লাখ ৩ হাজার ৫শ’ টাকা, চান্দুরা ইউনিয়নের চান্দুরা গরুর বাজার ১ লাখ ২২ হাজার ৭শ’ টাকা, চান্দুরা তোহা বাজার ৯৩ হাজার ৩শ’ টাকা, আমতলী বাজার ৩৩ হাজার ৫শ’ টাকা, বুধন্তী ইউনিয়নের সাতবর্গ তোহা বাজার ১৬ হাজার ৭শ’ টাকা, ইসলামপুর তোহা বাজার ২ হাজার ৮শ’  টাকা, সাতবর্গ (খাতাবাড়ী) গরুর বাজার ৯৪ হাজার ৬শ’ টাকা, ইছাপুরা ইউনিয়নের আড়িয়ল বাজার ১১ হাজার ৪৬৩ টাকা এবং বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর রানওয়ে বাজারের পূর্বমূল্য ২ হাজার ৯শ’ টাকা দরপত্রে দেখানো হয়। দরপত্র সিডিউল বিক্রি না করায় সরকার বাড়তি মূল্য পাওয়া থেকেও বঞ্চিত হয়। হয়নি ইজারা পাওয়ার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা।

আগের দর অনুসারে বাজারগুলোর মোট ইজারা মূল্য প্রায় ৩৬ লাখ ৭৩ হাজার টাকা হলেও ইজারাদারদের কাছ থেকে সিএ কামরুল ৪০/৪২ লাখ টাকা আদায় করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। হরষপুর গরুর বাজারের ইজারাদার মো. আজিজ খন্দকার জানান, তিনি বাংলা ১৪২৬ সনের ইজারাদার ছিলেন। ১৪২৭ সনের ইজারাও তিনি পেয়েছেন। ইজারা মূল্যবাবত  ১০ লাখ টাকা দিয়েছেন তিনি সিএ কামরুলের হাতে। আরো ১০ লাখ টাকা দেবেন বলেন জানান। আজিজ বলেন, দরপত্র না হলেও অফিস কীভাবে কি করেছে জানি না। কামরুল সাহেব বলেছেন একটা প্রসেস করে দেবেন। এই কথাতেই এখন বাজার চালাচ্ছি। হরষপুর তোহা বাজারের ইজারাদার মো. জুনায়েদ মিয়া বলেন, এ বছর আমি বাজার ডাকতে গেলে আমাকে বলা হয় যারা সাবেক মালিক (ইজারাদার) তাদেরকে আবারো ইজারা দেয়া হবে। টেন্ডার ছাড়াই সাবেক মূল্যে দেয়া হবে। এ ব্যাপারে আমি ক্লার্ক কামরুল ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আমাকে জানান, ওপরের নির্দেশেই তারা এভাবে বাজার ইজারা দিচ্ছেন। আমি গরুর বাজারের ইজারা পেতে  ডাক দিতে আগ্রহী ছিলাম। গত বছরও গরুর বাজার ডাক দিয়েছিলাম। ওই বছর আমি ১৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা ডাক দেই। আমাকে হারাতে আজিজ খন্দকার ২৫ লাখ টাকা ডাক দেন। কিন্তু পরে দেখা গেছে ডাকের মূল্য কমিয়ে তারা ২০ লাখ ৩ হাজার টাকায় বাজার নিয়েছেন। তারা কীভাবে এটি করলো সেটি আমি জানি না। ১৪২৭ সনের জন্যে তোহা বাজার ইজারা নিতে তিনি মঞ্জু নামে তার এক পার্টনারের মাধ্যমে ইজারার ১ লাখ টাকা দিয়েছেন কামরুলের হাতে। তোহা বাজারের ইজারা মূল্য মোট ২ লাখ ২ হাজার টাকা। বাকি ১ লাখ টাকা দেয়ার জন্যে ১০/১৫ দিন আগে কামরুল তাকে তাগিদ দেন। নূরপুর গরুর বাজার ও তোহা বাজারের ইজারাদার দুলাল চৌধুরী জানান- দু’টি বাজারের ইজারা মূল্য হিসেবে সাড়ে ৪ লাখ টাকা দিয়েছি কামরুল সাহেবের হাতে। সূত্র জানায়, ইজারাদারদের কাছ থেকে টাকা আদায় করলেও কামরুল ইসলাম টাকা জমা করেননি সরকারি কোষাগারে। নীতিমালা অনুসারে হাট-বাজার থেকে ইজারালব্ধ আয় ‘হাট-বাজারের ইজারালব্ধ আয়’ নামে ব্যাংক একাউন্টেই জমা রাখার কথা। হাটবাজার থেকে প্রাপ্ত ইজারালব্ধ অর্থ ব্যবস্থাপনা ও বণ্টন পদ্ধতিতে ইজারার টাকার ৫ পার্সেন্ট সেলামী স্বরূপ সরকারকে, ২০ পার্সেন্ট অর্থ ইউনিয়ন পরিষদের সচিব, দফাদার ও মহল্লাদারদের বেতন প্রদান বাবদ, ৫ পার্সেন্ট হাটবাজার যে ইউনিয়নে অবস্থিত সেই ইউনিয়নকে অতিরিক্ত প্রদান, ৪ পার্সেন্ট মুক্তিযোদ্ধোদের কল্যাণের ব্যয়ের জন্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় পরিচালিত হিসাবে, ১০ পার্সেন্ট হাট-বাজার সমূহ উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে উপজেলা উন্নয়ন তহবিলে এবং ৪১ পার্সেন্ট উপজেলা পরিষদের রাজস্ব আয় হিসেবে গণ্য হবে। কিন্তু এই নীতিমালা অনুসারে বণ্টন হয়নি ইজারার টাকা। হয়েছে নানা নয়/ছয়। ১৪২৬ সনের টাকাও সরকারি কোষাগারে জমা না করে ওই কর্মচারী নিজের নামে এফডিআর করে রেখেছিলেন বলে চাউর আছে।  উপজেলা চেয়ারম্যান নাসিমা লুৎফর বলেন, সিএ কামরুল চম্পকনগর বাজার ইজারার সাড়ে ৪ লাখ টাকা এবং হরষপুর বাজারের ২১ লাখ টাকা নিয়েছে বলে এখন পর্যন্ত আমি জানতে পেরেছি। তবে সে এই টাকা সংশ্লিষ্ট হিসাবে জমা করেছি কিনা তা জানার চেষ্টা করছি। আগের ইউএনও এবং তার সিএ আমাকে কোনো কিছুই জানাতো না। আমি অন্য মাধ্যমে জানতে পেরে তাদের নক করতাম।

তবে কামরুল ইসলাম হাট-বাজার ইজারার টাকা তার পকেটে নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, নায়েবদের কাছে তারা টাকা জমা দিয়েছেন। তাছাড়া ইজারা কার্যক্রম এখনো চলমান।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর