× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

এক চিলতে রোদ!

মত-মতান্তর

শাকেরা আরজু
১৪ জুলাই ২০২০, মঙ্গলবার

আজ চার দিন শুধু বিস্কুট আর পানি খেয়ে দিন পার করছে জাহিদ, তার মা আর ছোট ভাইয়ের বউ। ছোট ভাই অহিদ আইসিইউতে ভর্তি। অদৃশ্য করোনায় চারপাশটা ঝিম মেরে আছে। দোকানপাট, হোটেল সব বন্ধ। কোন খাবার নেই, নেই শোয়ার জায়গা আর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র! নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে অহিদের কাছে শুধু একজন থাকতে পারবে। অহিদের বউকে রেখে তাই জাহিদ তার মা কে নিয়ে হাসপাতালের বাইরে কোনরকম সময় পার করছে। ছোট ভাই টার যখন তখন ঔষধ ও প্রযোজনীয় জিনিস কিনে দিতে হয়। তাই দূরে কোথাও যেতেও পারছে না।
কি থেকে কি হয়ে গেল অহিদের। চোখের সামনে টগবগে ভাইটা অসুস্থ হয়ে গেলো। একদিন সকালবেলা অহিদ ঘুম থেকে উঠে আর পা ফেলতে পারে না। সারা শরীর অবশ ও দূর্বল মনে হয় তার। ধীরে ধীরে একসময় প্যারালাইসিস হয়ে যায় অহিদের। বরগুনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসক তাঁকে ঢাকা যাওয়ার পরামর্শ দেন। নিয়ে আসে ঢাকায়। অফিসের সহায়তায় ভর্তি করে হাসপাতালে। করোনার সময় ভর্তি নিতে চাচ্ছে না। তাছাড়া ২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারাও গেছে। পরীক্ষা নিরীক্ষা করে জানা গেলো অহিদের গুলেন বারি সিনড্রোম হয়েছে। এটি একটি ভাইরাস, বাংলাদেশে প্রতি ১০ হাজারে ১ জনের হয়ে থাকে। খুব দ্রুত ছড়ায়, তীব্র হলে আইসিইউতে রাখতে হয়। দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল চিকিৎসা। অহিদের চিকিৎসায় প্রায় ২০ লাখ টাকা লাগবে। চারপাশটা দুলে উঠে জাহিদের। অন্ধকার হয়ে আসে সব। দিশেহারা হয়ে পড়ে সে। এসময় ফোন করেন জাহিদের অফিসের মেহেদী স্যার। ৪ দিন না খেয়ে থাকায় কষ্ট পান তিনি। পরদিন খাবার পাঠিয়ে দেন। সাথে টাকাও। এও বলে দেন চিকিৎসা বন্ধ করা যাবে না। জাহিদ নিম্ন বিত্ত পরিবারের সন্তান। ঢাকায় আসার আগে জমি বিক্রি করে কিছু অর্থ নিযে এসেছে। তবে করোনার সময জমি বিক্রিতে ভালো দাম পায়নি সে। যাই হোক অন্তত আশ্বাস পাওয়া গেলো। জাহিদ চাকরি করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রারের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে। জাহিদ সহায়তা চাইবার আগেই ট্রাইব্যুনালের সিনিয়র কনসালটেন্ট মেহেদী মাসুদ অহিদের পাশে দাঁড়ান। চীফ প্রসিকিউটর সহ প্রসিকিউশন টিমের আইনজীবীদের কে সমন্বিত করে অর্থ সহায়তা নেন। হয়তো সবটা পারেন নি, তবে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জাহিদ করোনার সময়ে বাড়ি ভাড়া পাচ্ছিলো না। অনেক ঝামেলা পার করে বাড়ি ভাড়া করে দিয়েছেন। অহিদ এখন অল্প স্বল্প হাঁটতে পারে। খেতেও পারে। ডাক্তার বলেছেন সুস্থ হতে মাস চারেক লাগতে পারে। সাথে ৫ লাখ টাকাও লাগবে। অহিদ সুস্থ হয়ে উঠুক। করোনা মহামারির সময়টায় সবাই যখন যুদ্ধ করছি, সে সময় অহিদের পাশে দাঁড়ানো মানুষগুলা চরম মানবিকতার পরিচয় দিয়েছেন। জাহিদের স্বপ্নটা খুব যত্ন করে আগলে রক্ষা করেছেন। এ পি জে আবদুল কালাম বলেছিলেন, যে স্বপ্ন ঘুমিয়ে দেখা হয় সেটা স্বপ্ন নয়, যা মানুষকে ঘুমাতে দেয় না তাই স্বপ্ন। জাহিদের জন্য স্বপ্ন এখনো দেখে চলেছেন তাঁরা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর