বয়সের ভারে কাহিল আনোয়ারা বেগমের (৮০) শরীর। বিভিন্ন সময় তার মৃত্যুর খবরও ছড়িয়েছে। জীবন সাঙ্গ হয় হয় অবস্থা। এই বৃদ্ধাকেই বানানো হয়েছে বিরোধে হারজিতের ঘুঁটি। একপক্ষের আকাঙ্ক্ষা তার মৃত্যু। অন্যপক্ষে তার বেঁচে থাকার প্রার্থনা। তাকে মেরে হত্যা মামলা দেয়া হবে। এনিয়ে দুশ্চিন্তায় ঘুম হারাম এই পক্ষটির।
সরাইলের নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কাটানিসার গ্রামে এখন আলোচনা ওই বৃদ্ধাকে নিয়েই। ৮ই জুলাই উত্তর কাটানিসার গ্রামে দু’পক্ষের সংঘর্ষ হয়। ওই সময় গ্রামের আবুল কাশেমের ঘরে হামলা চালিয়ে তার বৃদ্ধা স্ত্রী আনোয়ারাকে কপালে দা’ দিয়ে কোপ দেয়ার অভিযোগ ওঠে প্রতিপক্ষের লোকজনের বিরুদ্ধে। অপরপক্ষের লোকজনের দাবি আনোয়ারা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। বেশ কিছুদিন আগে সে মারা গেছে এমন খবরও প্রচার হয়েছিল গ্রামের মাইকে। নানা রোগশোকে মৃত্যুমুখে থাকা আনোয়ারাকে মেরে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার ফন্দি করার অভিযোগ ওঠে তার স্বামীর বিরুদ্ধে। ঘটনার পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় আনোয়ারাকে। গত ১১ই জুলাই তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়।
পূর্ববিরোধের জের ধরে কাটানিসার গ্রামে ওইদিন দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষে অর্ধশত লোক আহত হয়। এ সময় ৮-১০টি ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট হয়। ওইসময় আহত আনোয়ারা বেগম মারা গেছেন বলে গুজব ছড়িয়ে দেয় একপক্ষ। এতে উত্তেজনা আরো বেড়ে যায়।
সরজমিনে ওই গ্রামে গিয়ে জানা যায়, বর্তমান ইউপি সদস্য মিজান মিয়া ও সাবেক ইউপি সদস্য অলি মিয়ার মধ্যে গত ক’বছর ধরেই বিরোধ চলছে। তাদের বিরোধে ছোটখাট ঘটনাতেও প্রায় সময় গ্রাম উত্তপ্ত হয়। মিজান মেম্বারের পক্ষের লোক আবুল কাশেম। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কাশেম তার প্রথম স্ত্রীকে ঘুঁটি করে। ঘটনার পরপরই হাসপাতালে এনে ভর্তি করে তাকে। তার কপালে দা দিয়ে কোপানো হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়। অপর পক্ষের লোকজন বলছে মামলা সাজাতে আনোয়ারার কপালে তার মেয়ে ব্লেড দিয়ে পোঁচ দেয়।
আনোয়ারার ভাই ফরিদ মিয়া বলেন, তার বোন বাড়িতে শয্যাশায়ী ছিলেন। দুইপক্ষ গোলমাল করেছে। সেখানে তার বোনকে নিয়ে টানাহেচড়া করা হচ্ছে। কপাল কাইট্টা তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আরেক ভাই বাচ্চু মিয়া বলেন, তার বোন মারা গেছে এই খবর শুনে তারা বোনের বাড়িতে ছুটে যান। দেখেন তার বোন ভালোই আছেন। তারপরও তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে আমার বড়ভাই বোনের স্বামীকে বলে দেন, তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে কোনো মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে প্রতিপক্ষকে যেন ঘায়েল করা না হয়। গ্রামের রেহান উদ্দিন জানান- অলি মিয়া ও মিজান মেম্বারের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে ১০ বছর ধরে বিরোধ চলছে। গত তিনমাস ধরে তাদের মধ্যে ঝগড়া চলছে। তাদের বিরোধে আত্মীয়তার সূত্রে অন্যান্যরা জড়িত হয়। রেহান আরো জানান- ঘরের বেড়ায় দায়ের কোপ দিলে বেড়া কেটে দায়ের আচর লাগে আনোয়ারা বেগমের কপালে। এদিকে সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে পুরুষশূন্য রয়েছে গ্রামটি। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুন মুহাম্মদ নাজমুল আলম জানান, মুরগির খামারের পানি রাস্তায় পড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়। ওই সময় এক বৃদ্ধা মারা গেছে বলে রিউমার ছড়ানো হয়। তাকে কেন্দ্র করে মামলা দিতে চাচ্ছে একটি পক্ষ তিনি তা শুনেছেন। বলেন, ওই মহিলার বয়স ৮০ বছর। তার ব্রেইন ষ্ট্রোক করেছিল। সে কথাও বলতে পারেনা। ঝগড়ায় সে আক্রান্ত হয়নি। এ ঘটনায় একটি পুলিশ এ্যাসল্ট মামলা হয়েছে বলে জানান ওসি। গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২১ জনকে।