কাতারে কর্মরত দক্ষিণ এশিয়া সহ বিভিন্ন অঞ্চলের বিপুল সংখ্যক শ্রমিক। এর মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশিরাও। সেখানে অভিবাসী শ্রমিকরা মারাত্মক বর্ণবৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে এমন আচরণের শিকার হচ্ছেন বেশি দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকার শ্রমিকরা। সম্প্রতি বর্ণবৈষম্য বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টেন্ডায়ি আচিউমি এসব তথ্য তুলে ধরেছেন এক প্রতিবেদনে। এই প্রতিবেদন তিনি এ সপ্তাহেই উপস্থাপন করবেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কাউন্সিলে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন গার্ডিয়ান।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কাতারে জাতিগত উৎসভিত্তিক বর্ণবৈষম্য বিদ্যমান। সেখানে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আরব দেশগুলোর নাগরিকরা দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহারান আফ্রিকান নাগরিকদের তুলনায় বেশি সুরক্ষিত মানবাধিকার সুবিধা ভোগ করেন।
কাতারে প্রায় ২০ লাখ অভিবাসী শ্রমিক কাজ করছেন। এর বেশিরভাগই দক্ষিণ এশিয়া এবং পূর্ব ও পশ্চিম আফ্রিকার নাগরিক। তাদের মজুরি অত্যন্ত কম। কাতারে বিশ্বকাপ স্টেডিয়াম নির্মাণে কাজ করছেন অন্তত ১৮ হাজার ৫০০ শ্রমিক। এর বাইরে আরও হাজার হাজার শ্রমিক বিশ্বকাপ সম্পর্কিত নির্মাণ, সেবা ও নিরাপত্তা প্রকল্পগুলোতে নিয়োজিত। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, ফিফা কাতারকে বিশ্বকাপ আয়োজনের সুযোগ দেয়ার ১০ বছর পরেও সেখানে নিম্নমজুরির শ্রমিকরা এখনও মারাত্মক বর্ণবৈষম্য ও শোষণের শিকার হচ্ছেন। মজুরি না দেয়া, অনিরাপদ কাজের শর্ত, পুলিশি হয়রানি, অনেক সরকারি জায়গায় প্রবেশে বাধার মতো সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। টেন্ডায়ি আচিউমি বলেন, যেসব শ্রমিক নিপীড়ক নিয়োগকর্তার কাছ থেকে পালিয়ে যান, তাদের সাধারণত ‘পলাতক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। এই জাতীয় শব্দের ব্যবহার কাতারে নিম্নআয়ের বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের বাস্তব দুর্ভোগের প্রতিই ইঙ্গিত করে।
কাতারে চাকরির ক্ষেত্রে চরম বিতর্কিত ‘কাফালা’ ব্যবস্থা এখনও বিদ্যমান। এ নীতির কারণে শ্রমিকরা তাদের নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়া চাকরি বদলাতে পারেন না। ফলে নিয়োগকর্তা ও শ্রমিকের মধ্যে ক্ষমতার ব্যাপক অসামঞ্জস্য তৈরি হয়েছে। অনেক শ্রমিকই শ্রম আইনভঙ্গের জন্য সুবিচার চাইতে ভয় পান। গত অক্টোবরে এ ধরনের বর্ণবৈষম্য বিলুপ্ত করে নতুন নীতি চালুর ঘোষণা দিয়েছিল কাতার কর্তৃপক্ষ। তবে তার বাস্তবায়ন হয়নি আজও। এ নিয়েও গভীর হতাশা প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের বিশেষ দূত।