সহমর্মিতা, সহানুভূতি শব্দগুলো কি এই নির্মম মহানগরীতে শুধু অভিধানের অঙ্গ হয়ে গেল? দক্ষিণ কলকাতার পাটুলি উপনগরীতে করোনায় আক্রান্ত হওয়া এক ব্যক্তি ও তাঁর স্ত্রীকে জুতোপেটা করেছেন প্রতিবেশীরা। মহেশতলায় এক স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৈকত বসুর দাদাকে মারধর করা হয়েছে ভাই সেফ হোমে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা করছেন বলে। মানিকতলায় এক অ্যাম্বুলেন্স চালকের পরিবার নিগৃহীত হয়েছেন অ্যাম্বুলেন্সে করোনা রোগীদের বহন করার জন্যে। শহর এই রকম নির্মমতা আগে দেখেনি। কুষ্ঠ রোগাক্রান্তদের আগে একঘরে করা হয়েছে কিন্তু তাদের পরিবার অত্যাচারিত হয়নি। এখন করোনা আক্রান্ত হওয়া এই কলকাতায় যেন পাপ। যেন অভিশাপ। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়েছেন বুধবার রাতে - করোনা রোগীকে নয়, রোগকে দূরে সরিয়ে রাখুন।
করোনার সামান্য সংক্রমণে হোম কোয়ারেন্টিনের নিদান দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু, সামান্য করোনা হয়েছে শুনলেই পরিবারটিকেই অস্পৃশ্য করে দেয়া হচ্ছে। চিরকালের চেনা প্রতিবেশী ঝাঁটা হাতে উদয় হচ্ছেন। করোনা আর কিছু না পারুক অবিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠা করেছে। ব্লটিং পেপার এর মতো শুষে নিয়েছে এই শহরের মানবিকতাকে। রাস্তাঘাটে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, ও পাড়ায় দুটো বেরিয়েছে, সে পাড়ায় তিনটে। যেন করোনা বাঘ সিংহের মতো হিংস্র প্রাণী। অবস্থা বেগতিক দেখে সরকার প্রচার চালাচ্ছে, করোনা রোগীকে ঘৃণা না করার জন্যে। কিন্তু, পরিস্থিতি ক্রমশ নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। একটি ষাট ন্যানোমিটার এর ভাইরাস মানুষের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছে।