বাংলাদেশ-ভারত ‘কালোত্তীর্ণ’- সম্পর্কের গভীরতা বা ব্যাপ্তির বিষয়টি তুলে ধরলেন দিল্লির বিদেশ মন্ত্রী ড. এস জয়শঙ্কর। সোমবার বাংলাদেশকে ভারতের ১০টি ব্রডগেজ লোকোমোটিভ ইঞ্জিন প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে রচিত ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার কালোত্তীর্ণ সম্পর্কের গভীরতার কথা তুলে ধরেন। ভারতীয় হাইকমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভার্চ্যুয়াল ওই হস্তান্তর অনুষ্ঠানের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের নয়া বন্ধুত্ব, হিমশীতল বা প্রায় বরফ হয়ে যাওয়া পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ইসলামাবাদের আচমকা তৎপরতা এবং ঢাকা-দিল্লি ঘনিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার প্রেক্ষিতে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সোমবারের বক্তব্যটি তাৎপর্যপূর্ণ। হাইকমিশনের বিজ্ঞপ্তি মতে কোভিড-১৯ মহামারিতেও দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার গতি হ্রাস না পাওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিদেশমন্ত্রী।
ভারতীয় হাইকমিশন জানায়, বাংলাদেশকে ভারত ১০টি রেল ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) উপহার হিসেবে দিয়েছে। ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জয়শঙ্কর এবং রেল, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল যৌথভাবে এটি হস্তান্তর করেন। এরপরই দর্শনা থেকে লোকোমোটিভগুলো বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। অনুষ্ঠানে ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন রেলমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবুল কালাম আব্দুল মোমেন।
মূলত তারা ভার্চ্যুয়ালি লোকোমোটিভগুলো গ্রহণ করেন। ভারতের রেলপথ প্রতিমন্ত্রী শ্রী অঙ্গদি সুরেশও অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন বলে জানানো হয়েছে। হাইকমিশন আরো জানায়, ১০ রেল ইঞ্জিন প্রদানের মাধ্যমে ভারত ২০১৯ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরকালের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতি পূরণ করলো। ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রয়োজনীয়তা অনুসারে লোকোমোটিভগুলোকে যথাযথভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে। এই লোকোমোটিভগুলো বাংলাদেশে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেনের ক্রমবর্ধমান চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জয়শঙ্কর পারস্পরিক বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার ভিত্তিতে রচিত ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার কালোত্তীর্ণ সম্পর্কের গভীরতার কথা তুলে ধরে চলমান ঐতিহাসিক মুজিববর্ষে তিনি এ জাতীয় আরো মাইলফলক অতিক্রম করার প্রত্যাশা করেন। অনুষ্ঠানে ভারতের রেলপথ, শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী শ্রী পীযূষ গোয়েল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও যোগাযোগ বৃদ্ধিতে এবং দু’দেশের মধ্যকার বিদ্যমান অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব আরো জোরদারের তাগিদ দেন। একই সঙ্গে তিনি এতে রেল খাতের পারস্পরিক সহযোগিতাকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। সামপ্রতিক সময়ে স্থল সীমান্ত দিয়ে বাণিজ্য বাধাগ্রস্ত হওয়ায় ভারত ও বাংলাদেশ কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাব হ্রাস করতে রেল সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করেছে। ব্যয় সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব বাহন হিসেবে রেল আন্তঃসীমান্ত পণ্য পরিবহনে সহায়তা করেছে। জুন মাসে দু’দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মালবাহী ট্রেন চলাচল হয়েছিল। প্রয়োজনীয় পণ্য এবং কাঁচামাল বহনের জন্য মোট ১০৩টি মালবাহী ট্রেন ব্যবহৃত হয়। অতি সমপ্রতি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে পার্র্সেল এবং কনটেইনার ট্রেন পরিষেবাও শুরু হয়েছে। এতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আশা প্রকাশ করা হয়।