× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মধুমতী গিলেছে সড়ক ভিটা

এক্সক্লুসিভ

বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা প্রতিনিধি
২৯ জুলাই ২০২০, বুধবার

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলা এলাকায় মধুমতী নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত পনের দিনে মধুমতি পাড়ের টগরবন্দ, গোপালপুর, বুড়াইচ, বানা ও পাচুড়িয়া ইউনিয়ন এবং কামারখালী ইউনিয়নে তীব্র আকার ধারণ করেছে মধুমতীর ভাঙন। প্রতিদিনই ভাঙছে নদীর পাড়। এতে পাকা সড়ক, বাড়িঘর, কৃষি জমি, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ গাছপালা ভেঙে নদীতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ঝুঁকিতে রয়েছে আলফাডাঙ্গা উপজেলার বাজড়া, চর আজমপুর, চরডাঙ্গা, চাপুলিয়া, চরধানাইড়, শিকিপাড়া, চাপুলিয়াসহ প্রায় ১৫টি গ্রাম ও মধুখালি উপজেলার গয়েশপুর, চরগয়েশপুর, মছলন্দপুরসহ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের জাদুঘরটি। চরম শঙ্কায় দিন কাটছে মধুমতি পারের মানুষের।
ঘরবাড়ি হারিয়ে অনেকে খোলা আকাশের নিচে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এতে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটছে তাদের।
কোনো জনপ্রতিনিধি তাদের কোনো খোঁজখবর নিচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা। এদিকে ভাঙন ঠেকাতে অনেক আকুতি, মানববন্ধন, স্মারকলিপি পেশসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হলেও কোনো কাজ হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, গত পনের দিন ধরে মধুমতি নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। অল্প সময়ের মধ্যে কয়েকশ’ বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর পানি নতুন করে বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলার বাজড়া, চর আজমপুর, চরডাঙ্গা, চাপুলিয়া, চরধানাইড়, শিকিপাড়া, চাপুলিয়া, চরনারানদিয়া, বাঁশতলাসহ প্রায় ১২টি গ্রাম এখন হুমকির মুখে পড়েছে। এরই মাঝে ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষের আসা-যাওয়ার একমাত্র গোপালপুর-চরডাঙ্গা মেইন পাকা সড়কের প্রায় ১ কিলোমিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একই সঙ্গে নদীগর্ভে চলে গেছে চাপুলিয়া গুচ্ছগ্রাম ও আশ্রয়ণ কেন্দ্রের ৬৫টি বাড়ি, বাজড়া পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদ, চরআজপুর গ্রামের প্রায় ৩০টি বাড়িসহ নানা স্থাপনা। এখন চরম হুমকির মুখে রয়েছে বাজড়া চরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ কয়েকটি গ্রামের বসতবাড়ি ও নানা স্থাপনা। ভাঙন ঝুঁকিতে গত এক সপ্তাহে উপজেলার চর আজমপুর গ্রামের প্রায় অর্ধশত পরিবার তাদের বসতঘর ভেঙে অন্য এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ভাঙন ঝুঁকিতে থাকা একাধিক ব্যক্তি জানান, রাস্তা রক্ষায় ও নদীর ভাঙন রোধে জিও ব্যাগের যে কাজ হচ্ছে তা অনেক আগেই করা উচিত ছিল। সেটাও করা হচ্ছে খুব ধীরগতিতে। ফলে প্রতিনিয়ত ভাঙছে নদীর পাড়।
এতে হুমকির মুখে রয়েছে স্কুল, মসজিদ, দোকানপাটসহ অসংখ্য বাড়িঘর।
 বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে এখন তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। টগরবন্দ ইউনিয়নের চর আজমপুর গ্রামের বাসিন্দা রেজাউল শেখ জানান, ভাঙন ঠেকাতে এলাকাবাসী কয়েকবার মানববন্ধন করেছে। সময়মতো যদি পানি উন্নয়ন বোর্ড পদক্ষেপ নিতো তাহলে রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হতো না। এখন তো আমাদের মাথা গোঁজার জায়গাটুকু নেই। এ এলাকাকার অন্তত ৩০টি বাড়িঘর নদীতে খেয়ে ফেলেছে বলে তিনি আরো জানান।
বাজড়া গ্রামের ইউপি সদস্য ওবায়দুর রহমান বলেন, নদী আমার বাড়ি থেকে অল্প কয়েক গজ দূরে। এ বছর বাড়ি মনে হয় আর থাকবে না।
 আমাদের এলাকায় গত কয়েকদিনে নদীর পাড়ে থাকা ২০-২৫টি পরিবার তাদের বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র চলে গেছে। অনেকেই যাওয়ার জন্য বাড়িঘর ভাঙতে শুরু করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড বালুর বস্তা (জিও ব্যাগ) ফেলছে বাজড়া সীমানায়। গত বছর যেখানে বস্তা ফেলা হয়েছে এ বছরও সেখানে বস্তা ফেলা হচ্ছে। অথচ এখন নদী ভাঙছে চর-আজমপুর, রায় পানাইল, গোপালপুর-চরডাঙ্গা মেইন সড়ক এবং পাচুড়িয়ার চরনারানদিয়া ও বাঁশতলা এলাকা। এক মাস হলো বস্তা ফেলার কাজ শুরু হয়েছে। এ বছর চর-আজমপুর মেইন রাস্তার পাশে বস্তা ফেললে আজ এই রাস্তা ভাঙতো না।
টগরবন্দ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইমাম হাসান শিপন ও পাঁচুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান জানান, আমরা বহুবার নদী ভাঙন রোধে স্থানীয় এমপি, প্রশাসন ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আবেদন করেছি। ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধের কোনো ফল পাইনি। বর্ষার মৌসুমে যখন ভাঙনের তাণ্ডব শুরু হয় তখন মানুষকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য শুধুমাত্র কিছু জিও ব্যাগ ফেলা হয়। কিছু কিছু এলাকায় এখনো জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। স্থায়ী বাঁধের জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।                                                            
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুর রহমান জানান, ভাঙন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের ১০ কেজি করে চালের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসান জানান, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করা হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলমান রয়েছে। প্রাথমিক অবস্থায় তাদের ১০ কেজি করে চাল দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বোয়ালমারী ও আলফাডাঙ্গা অঞ্চলের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সন্তোষ কর্মকার জানান, ভাঙন রোধে বর্তমানে ১৭৫ কেজির ৩০ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। প্রয়োজনে আরো ফেলা হবে। মধুমতির ভাঙন এলাকা আলফাডাঙ্গা ও মধুখালীতে প্রায় ১১ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের প্রয়োজন। এ প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা।
ফরিদপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনজুর হোসেন বলেন, ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় স্থায়ী বাঁধের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রকল্প তৈরি করছে। এ প্রকল্প অনুমোদনের জন্য আমি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলবো।  
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর