× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মহাসড়কের পাশে বানভাসিরা /‘কহন যেন ছাপড়ার উপর গাড়ি উইঠ্যা পড়ে’

এক্সক্লুসিভ

রিপন আনসারী, মানিকগঞ্জ থেকে
২৯ জুলাই ২০২০, বুধবার

‘সর্বনাইশ্যা বন্যা আমাগো বাড়ি-ঘর ছাড়া করছে। আর গরিব অইছি বইল্যা কোনো হানে ঠাঁই অই নাই। বাধ্য অইয়্যা মরণরে আতে নিয়্যা গাড়ির সড়কের রাস্তার পাশে আশ্রয় নিছি। ভয়ে রাইতে ঘুমাইতে পারি না। মনে অয় কহন যেন ছাপড়ার উপরে গাড়ি উইঠ্যা পড়ে।’- এ কথাগুলো ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে একটি সেতুর ওপর আশ্রয় নেয়া কাদের মুন্সীর। ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া ইউনিয়নের জোকা গ্রামের এই দিনমজুরের বাড়িঘরে পানি উঠে পড়ায় পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন মহাসকড়ের রাস্তার পাশে একটি সেতুর ওপর।
সরজমিন মঙ্গলবার সকালে দেখা গেল মহাসড়কের জোকা এলাকায় জুলনাস সিএনজি সংলগ্ন একটি সেতুর ওপর বানভাসি কয়েকটি পরিবার আশ্রয় নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। সেতুর ওপর পলিথিন টাঙিয়ে ঢালাই বিছানা করে চারটি পরিবারের প্রায় ১৫ সদস্য আশ্রয় নিয়ে  সেখানে বসবাস করছেন।
খাওয়া- দাওয়া, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি সবই একই পলিথিনের নিচে।
সেতুর ওপর পরিবার নিয়ে আশ্রয় নেয়া রংমিস্ত্রি শাহিন জানালেন, বাড়িঘর সবই পানিতে ভাসছে। এক সপ্তাহ ধরে আশ্রয় নিয়েছি সেতুর ওপর। ছোট ছোট দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সব সময় ভয়ে থাকি। রাস্তার ওপর দিয়ে এমন ভাবে গাড়ি যায় মনে হয় কখন যেন একটা দুর্ঘটনা ঘটে যায়। রাতে সব চেয়ে বেশি আতঙ্কে থাকি। জরিনা বেগমকে দেখা গেল দুপুরের ভাত রান্না করতে। ভাতের ভেতর বেগুন সিদ্ধ দিয়ে কোনোরকমে দুপুরের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন। জরিনার আক্ষেপ- তাদের এই দুরবস্থা দেখার কেউ নেই। জানালেন, বন্যা আমাগো ভাসিয়ে দিয়েছে। নাইলে রাস্তার পাশে মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে কেউ বসবাস করে? এত কষ্টে আছি তারপরও কেউ একমুঠো চাল নিয়ে আসে না। তার মেয়ে শাহনাজ জানালেন, চেয়ারম্যান- মেম্বাররা কোনো খোঁজ নেন না। বন্যায় স্বামী বেকার হয়ে পড়েছে। কি যে কষ্ট হচ্ছে কেউ বুঝলো না।
সেতুর ওপর আশ্রয় নেয়া গুলজার শেখ জানালেন, বৃদ্ধ মা ও পরিবারের ৫ সদস্য নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে। তার ওপর রাস্তায় গাড়ি যেভাবে চলে- সব সময় ভয়ে ভয়ে দিন-রাত কাটাতে হয়। বিশেষ করে রাতে ভয়ে ঘুমাতে পারি না। আর আমরা যে পলিথিনের নিচে থাকি তার ভেতর গরু ছাগল এমনকি কুকুরও থাকে। সব মিলিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। স্ত্রী চায়না বেগন জানালেন, ১২ ও ৭ বছরের দুই ছেলেকে নিয়ে সবচেয়ে বিপদে আছি। ওরা সুযোগ পেলেই সড়কে উঠে পড়ে। সব সময় ওদের চিন্তায় অস্থির থাকি। আর আমাদের এই বিপদে কেউ সাহায্যের হাত বাড়ায় না। খুব কষ্টে আছি।
এদিকে বন্যায় বাড়িঘর তলিয়ে যাওয়ায় পাশের ইউনিয়ন বানিয়াজুরী সরকারি স্কুল অ্যান্ড কলেজে আশ্রয় নিয়েছে ৫০-৬০টি বাসভাসি পরিবার। সেখানে কোনো ত্রাণ পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ আশ্রয়কেন্দ্রের মানুষের।
আশ্রয় নেয়া রেশমী বেগমের দিন কাটছে অর্ধাহারে-অনাহারে। স্বামী ৪০দিন আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। দুই মেয়ে এক ছেলে নিয়ে সংসার। বড় মেয়ে বিয়ে হয়েছে। ছোট মেয়ে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। আর ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। এখন বেকার। বাড়িঘর সব পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এক সপ্তাহ হলো আশ্রয় নিয়েছি স্কুলে। খাবারের কষ্টে আছি কিন্তু কোনো জায়গা থেকে কেউ সাহায্য দিচ্ছে না। আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রে কোনো জনপ্রতিনিধি আসেননি। নেননি কোনো খবর। এই স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন রিকশাচালক সমেজ উদ্দিনের পরিবার। তার স্ত্রী সকিরা বেগম জানালেন, বড় কষ্টের ভেতর দিন কাটাচ্ছি। কেউ কোনো খবর রাখে না। জমসের উদ্দিন জানালেন, বাড়িঘর পানির নিচে। তাই পরিবারের ৬ সদস্য নিয়ে স্কুলে উঠেছি। আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। দু’বেলা খেতে পারছি না।
এই আশ্রয়কেন্দ্রের মতো মানিকগঞ্জ জেলার শত শত আশ্রয়কেন্দ্রে বানভাসি মানুষজন মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর