দেশে করোনা সংক্রমণের বিস্তার সর্বত্র। শনাক্তের হারও বেশি। এখন প্রায় প্রতি ৪ জনে একজন করোনা রোগী চিহ্নিত হওয়ার তথ্য দিচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে জনসংখ্যা অনুপাতে খুব কম পরিমাণে টেস্ট হয়েছে। কম টেস্ট হওয়ার কারণে করোনা সংক্রমণের সঠিক চিত্র উঠে আসছে না। ফি নির্ধারণ ও বন্যার কারণে কম নমুনা পরীক্ষা হচ্ছে। করোনার লাগাম টানার ক্ষেত্রে ঢিলেমি দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথায়ও কান দিচ্ছে না স্বাস্থ্য বিভাগ।
সংস্থাটি বলেছে টেস্ট, টেস্ট এবং টেস্ট। দেশে ইতিমধ্যেই আক্রান্ত দু’লাখ ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। সংক্রমণ পরিস্থিতি সামনে আরো ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
এ ব্যাপারে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম সদস্য, দেশের বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আমাদের টেস্ট খুবই কম হচ্ছে। টেস্টের পরিমাণ বাড়াতে হবে। ফি নির্ধারণ ও বন্যার কারণে টেস্ট কমেছে। পরামর্শক কমিটিও টেস্ট বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সরকারের সেদিকে খেয়াল নেই। সরকার ব্যস্ত অন্যান্য কাজ নিয়ে। প্রচুর টেস্ট না করাতে পারলে সত্যিকারের করোনা সংক্রমণের পরিস্থিতি জানতে পারবো না। জানতে না পারলে যারা ভাইরাসটি বহন করে ঘুরছেন তারা বেশি ছড়াবেন। এতে পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরো বলেন, আমাদের শনাক্তের হার বেশি। মৃত্যুর হার তুলনামূলক একটু কম। বস্তিতে কি হচ্ছে আমরা জানতে পারছি না। ওখানে সংক্রমণ কম না বেশি তাও প্রকাশ পাচ্ছে না। এসব জানা দরকার। বস্তিতে অনেক ভাইরাস থাকে।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সুলতানা সাহারা বানু মানবজমিনকে বলেন, আমাদের টেস্ট খুবই নগণ্য পরিমাণ হয়েছে। অথচ দেশে কেস অনেক। কিন্তু সে অনুপাতে টেস্ট হচ্ছে না। শনাক্তের হার বেশি। ২২ থেকে ২৫ শতাংশ শনাক্ত হচ্ছেন। ফি নির্ধারণ ও বন্যার কারণে মানুষ নমুনা পরীক্ষা করতে আসছেন না বলে তিনি মনে করেন। খাইতে পারছে না। করোনার কি টেস্ট করাবে গরিব মানুষরা। উপসর্গ নিয়ে তারা ঘুরে বেড়াচ্ছে। সংক্রমণ ছড়াচ্ছে। ফলে সত্যিকারের সংক্রমণ সংখ্যা আমরা জানতে পারছি না। তিনি বলেন, আমরা করোনার পঞ্চম থেকে ষষ্ঠ ধাপে রয়েছি। টেস্ট না বাড়ালে পরিস্থিতি কোন্দিকে যাচ্ছে জানা যাবে না। ১৬ কোটি জনসংখ্যার দেশে মাত্র সাড়ে ১১ লাখ পরীক্ষা হয়েছে, যা খুবই নগণ্য বলে তিনি মন্তব্য করেন। এক কোটি টেস্টও হয়নি। এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ প্রচুর টেস্ট করানোর ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, না হলে পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানাও টেস্ট কমে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। করোনার পরীক্ষা কমে যাওয়ার কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফি নির্ধারণ অবশ্যই একটি কারণ। অনেকে সচেতন নয়। এখন অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা না করানোর কারণে প্রকৃত রোগীরা আসছেন। এজন্য শনাক্তের হার বেড়েছে বলে তিনি দাবি করেন। উপজেলা ও জেলা সব জায়গায় নমুনা নেয়ার ব্যবস্থা আছে। তাই কারও উপসর্গ থাকলে যেন টেস্ট করতে আসেন।
উল্লেখ্য, বর্তমানে সারা দেশে ৮২টি প্রতিষ্ঠান কোভিড-১৯ পরীক্ষা করছে। এই ৮২টি ল্যাবে গড়ে দৈনিক পরীক্ষার সক্ষমতা ১৩ হাজার থেকে ১৯ হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গত মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি ১০ লাখে দুই হাজার ৪১২ জনের কোভিড-১৯ পরীক্ষা করা হচ্ছে। যা ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার তুলনায় অনেক কম।