রাজধানীর পল্লবী থানায় বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জঙ্গি সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পায়নি পুলিশ। গ্রেপ্তারের আগেই পুলিশের কাছে তথ্য ছিল ওই এলাকায় একটি অপরাধ সংঘটিত হতে পারে। তথ্যানুসারেই অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় তিনজনকে। গ্রেপ্তার হওয়া আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় চাঞ্চল্যকর তথ্য। ওই এলাকার একজন কাউন্সিলরকে হত্যার উদ্দেশ্যে ভাড়া করা হয়েছিল তাদের। টার্গেটকৃত কাউন্সিলর পল্লবী থানা যুবলীগের সাবেক সভাপতি। আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করেই কিলিং মিশনে নামানো হয়েছিল সন্ত্রাসীদের। গতকাল আদালতে হাজির করে তাদের ১৪ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।
তার আগে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। যদিও ঘটনার দিন রাতেই হামলায় জঙ্গি
গোষ্ঠী আইএসের দায় স্বীকারের তথ্য জানায় সাইট ইন্টেলিজেন্স।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার রফিকুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম ও মোশাররফ মিরপুর এলাকার একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত। মিরপুর-৬ এলাকার এক সন্ত্রাসীর নির্দেশে এক কাউন্সিলরকে হত্যা করতে চেয়েছিল তারা। এ ঘটনায় মিরপুর এলাকার আওয়ামী লীগের একটি থানা শাখার প্রথমসারির নেতা সম্পৃক্ত রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে গ্রেপ্তারকৃতরা। কিলারদের টার্গেটে থাকা ওই কাউন্সিলর গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। তিনি বিষয়টি কিছুদিন আগে বুঝতে পেরে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা বলেছেন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তবে পুলিশের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে নিজের পরিচয় গোপন রাখার অনুরোধ জানিয়ে ওই কাউন্সিলর মানবজমিনকে বলেন, নির্বাচন করে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার কারণেই অনেকের শত্রু হয়েছি। একটি হুমকি ছিল। বিষয়টি বেশ কিছুদিন আগে বুঝতে পেরে স্থানীয় এমপিসহ পুলিশ কর্মকর্তাদের অবগত করেছেন বলে জানান তিনি।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, পল্লবী এলাকায় বিপ্লব হাওলাদার হত্যার ঘটনায় মাদক কারবারি ইমতিয়াজকে গত মঙ্গলবার দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ডিবি’র পল্লবী জোনাল টিম। বিপ্লবকে হত্যা করার পর আবুল নামে এক সন্ত্রাসীর বাসায় আত্মগোপনে ছিল ইমতিয়াজ। একাধিকবার বিস্ফোরক ও মাদকসহ গ্রেপ্তার হয়েছিল আবুল। মিরপুর-১১সহ আশেপাশের এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত বিহারি নেতা মোস্তাক আহমেদের ছেলে ইমতিয়াজের সঙ্গে রফিকুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম ও মোশাররফের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। ইমতিয়াজকে গ্রেপ্তারের পর থানা পুলিশের হেফাজতে দেয়া তথ্যের ভিত্তিতেই সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে একধাপ এগিয়ে যায় পুলিশ।
সূত্র মতে, এক-এগারোর পর থেকে আত্মগোপনে থাকা সন্ত্রাসী মহসিনের হয়ে চাঁদাবাজি করে শহীদুল। এক সময় থাকতো মিরপুরের কাইলা বস্তিতে। তিন বছর আগে বস্তি ভাঙ্গার পর আশ্রয় নেয় মিরপুর-১১’র সি ব্লকের ১৪ নম্বর লাইনে। এই চক্রটি মাদক, চাঁদাবাজি, হামলা থেকে শুরু করে নানা অপকর্মে জড়িত।
এসব বিষয়ে মহানগর ডিবি’র অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এটি একটি ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটিস। এতে জঙ্গির কোনো সংশ্লিষ্টতা আমরা এখনও পাইনি। তবে তারা কেন কাকে কীভাবে হত্যা করার জন্য পরিকল্পনা করেছিল সে বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এদিকে পল্লবী থানায় বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট (আইএস)। অনলাইনে জঙ্গি কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী মার্কিন সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ আইএসের দায় স্বীকারের বিষয়টি তাদের ওয়েবসাইটে জানিয়েছে। সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপের পরিচালক রিটা কার্টজ এক টুইট বার্তায় বলেন, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় পুলিশের একটি দপ্তরে হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস।
পল্লবী থানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেপ্তার তিনজনের ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল দুপুরে তাদের ঢাকা মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পল্লবী থানার অস্ত্র মামলায় সাত ও বিস্ফোরক আইনে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। অন্যদিকে তাদের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মঈনুল ইসলাম অস্ত্র মামলায় সাত দিন ও বিস্ফোরক আইনের মামলায় সাত দিন নিয়ে মোট ১৪ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এ ঘটনায় পল্লবী থানায় দায়েরকৃত মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২৯শে জুলাই রাত সোয়া ১টার দিকে মামলার বাদী পুলিশের এসআই আরিফ হোসেন ডিউটি করাকালে জানতে পারেন সন্ত্রাসীরা কালশি কবরস্থানের দক্ষিণ পাশে অবস্থান করছে। বিষয়টি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানান তিনি। রাত ১টা ৪০ মিনিটের দিকে পল্লবী জোনের এডিসি, এসি ও থানার ওসিসহ পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেন। এসময় দুই দলে বিভক্ত হয়ে অভিযান চালিয়ে তিন জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে দুটি পিস্তল, ম্যাগাজিন ও মোশাররফের ব্যাগ থেকে ওয়েট মেশিন সদৃশ্য বস্তু উদ্ধার করা হয়। থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) ইমরানুল ইসলামের দ্বিতীয় তলার রুমে ওয়েট মেশিনটি রাখার পর ভোরে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় চার পুলিশ সদস্য ও একজন সিভিল গুরুতর আহত হন।
ডিএমপি’র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) নাদিয়া ফারজানা জানান, এ ঘটনায় পল্লবী থানায় দুটি মামলা হয়েছে। আসামিদের এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য উদঘাটন করা হবে বলে জানান তিনি।