× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

করোনায় বইয়ের ব্যবসায় ধ্স

অনলাইন

আলতাফ হোসাইন
(৩ বছর আগে) আগস্ট ২, ২০২০, রবিবার, ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন

করোনায় স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের সব ব্যবসা বাণিজ্য। এর বাইরে নয় পুস্তক ব্যবসায়ীরাও। রাজধানীর বাংলা বাজার ও নীলক্ষেত এলাকাজুড়ে বই প্রেমিদের আনাগোনা আর দেখা যায় না। স্কুল-কলেজসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হওয়ার ফলে বই ব্যবসায় ধস নেমেছে। ইতিমধ্যেই কেউ কেউ ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। দোকানগুলোতে পাঠ্যপুস্তক বিক্রি বন্ধ থাকলেও বিভিন্ন সাহিত্য, প্রবন্ধসহ অন্যান্য বই কিছুটা বিক্রি চলছে। তবে করোনার কারণে ক্রেতারা অনলাইনের দিকে বেশি ঝুঁকেছে। তাই বইয়ের দোকানে বিক্রি অনেক কম।
এতে আর্থিক সংকটে পড়েছেন বই ব্যবসায়ীরা। বেচাকেনা না থাকায় অনেকেই দোকান বিক্রি করে অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিক্রি না থাকায় চরম সংকটে পড়েছে ব্যবসায়ীরা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আরো সময় বন্ধ থাকলে এই সংকট আরো বেড়ে যাবে।

নীলক্ষেতের বই মার্কেটে সরজমিনে দেখা যায়, দোকানে বিক্রি নেই তাই অলস সময় পার করছেন ব্যবসায়ীরা। হাতেগোনা দু’একজন ক্রেতা আসছেন। কয়েকজন বই বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনার কারণে লম্বা সময় দোকান বন্ধ ছিল। গত ঈদুল ফিতরের পর থেকে দোকান খোলা হলেও বই বিক্রি নেই। কারণ কলেজ বন্ধ থাকায় নতুন ক্লাসে ওঠা শিক্ষার্থীদের ক্লাস হচ্ছে না। পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাও স্থগিত হয়েছে। ফলে পাঠ্যপুস্তক বিক্রি একেবারেই হচ্ছে না। এছাড়া অন্যান্য বছরগুলোতে এই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে বইয়ের বাজারে ব্যবসা জমজমাট হয়। এ বছর সেটিও বন্ধ। বিক্রি বন্ধ থাকার অনেকে দোকান বন্ধ করে দিয়েছে। কর্মচারীদের বেতন দিতে না পারায় কর্মী ছাটাই করা হয়েছে। ব্যবসা বন্ধ থাকলেও দোকান ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, কর্মচারী খরচ, ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন খরচ দিতে হচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যবসায় টিতে থাকা নিয়ে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ওদিকে বই বিক্রিতে ভাঁটা পড়ায় সংকটে পড়েছে ছাপাখানাগুলোও। আরামবাগ, ফকিরাপুল, পল্টন এলাকায় অন্তত আড়াই হাজার ছাপাখানা রয়েছে, যার বেশিরভাগেরই চাকা ঘুরছে না। এতে মালিকরা পড়েছেন বিপাকে। তারা না পারছেন ঘর ভাড়া দিতে, না পারছেন শ্রমিকদের পাওনা মেটাতে। ছোট-বড় দোকানগুলোতে পড়ে আছে লাখ লাখ টাকার বই। গুদামগুলোতেও অবহেলা-অযত্নে গড়াগড়ি খাচ্ছে কাগজ ও অন্যান্য সামগ্রীও। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে  কথা বলে জানা যায়, সাধারণত বইমেলার পর প্রকাশনার বড় কাজগুলো হয় মার্চ থেকে জুনের মধ্যে। বইমেলায় প্রকাশিত নতুন বইগুলো দেশব্যাপী পাঠানোর ব্যবস্থাও করেন প্রকাশকরা, যার মাধ্যমে বইমেলা পরবর্তী সময়েও চাঙ্গা থাকে তাদের ব্যবসা। এ বছর সেই সময়টাতেই করোনার জন্য বন্ধ সবকিছু। এতে প্রকাশনা শিল্পের ব্যবসা কমে গেছে প্রায় ৯০ শতাংশ। ইতিমধ্যেই যে বিনিয়োগ করে রেখেছিলেন প্রকাশকরা সেগুলো গচ্চা যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

ব্যবসার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না পারায় বই ব্যবসায়ী গোলাম মোস্তাফা তার ৩০ বছরের বইয়ের ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে গেছেন। কয়েকদিন ধরেই এ খবর গণমাধ্যমে শোনা যাচ্ছে। করোনার কারণে বাধ্য হয়ে দোকান বিক্রি করে দেন তিনি। ১৯৯০ সাল থেকে বইয়ের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তিনি। ২০০৫ সাল থেকে নীলক্ষেতে ইসলামি মার্কেটে বইয়ের ব্যবসা শুরু করেন। মুঠোফোনে তিনি বলেন, করোনার কারণে আমার দীর্ঘদিনের ব্যবসা ছেড়ে দিতে হয়েছে। এটা আমার জন্য যে কত কষ্টের তা কাউকে বলে বোঝাতে পারবো না। লকডাউনের পর দোকান খুলি। কিন্তু বিক্রি না হওয়ায় বিরাট লসের ভেতর ছিলাম। তাই দোকান বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছি। এখন গ্রামে অন্য কোনো ব্যবসা করা যায় কি-না ভাবছি। তবে পরিবেশ ভালো হলে আবারও বই ব্যবসায় ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা আছে বলে জানান তিনি।

শুধু গোলাম মোস্তফা নয়, অর্থসংকটে অনেক বই ব্যবসায়ীর অবস্থা এমনই। নীলক্ষেতের কল্লোল প্রকাশনীর বিক্রেতা ওহাব তালুকদার বলেন, করোনার মধ্যে মানুষতো খেতেই পারে না, বই কিনবে কি করে। সবাই অভাবে আছে। যাদের কিছু টাকা পয়সা আছে কিংবা যাদের নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস আছে তারা কিছু কিনে। তাছাড়া সব স্কুল কলেজ বন্ধ। তাই পাঠ্যপুস্তক বিক্রি নাই। অন্যান্য বই কিছুটা বিক্রি হয়। নীলক্ষেতে শাহজালাল মার্কেট বহুমুখী সমিতির সভাপতি এম আবু জাফর বলেন, দোকানে সারা দিন বসে থেকেও কোন কাস্টমার পাই না। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের পথে বসতে হবে। কর্মচারীকে বেতন দিতে পারি না। বই বাজার প্রকাশনীর বিক্রেতা বলেন, আগে আামাদের দোকানে দুই জন কর্মচারী কাজ করতো। এখন আমি একা। বেতন দিতে না পারায় মালিক তাকে বাদকরে দিয়েছে। আগে প্রতিদিন ছয় থেকে আট হাজার টাকার বই বিক্রি হতো। এখন বিক্রি নেই বললেই চলে।

সম্প্রতি পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতাদের প্রায় দুই লাখ পরিবারের জন্য অনুদান ও প্রণোদনা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি। আবেদনে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী তিনটি স্তরে অনুদান ও প্রণোদনার কথা বলা হয়েছে। স্বল্পমেয়াদী অনুদান হিসেবে ১০০ কোটি টাকার আর্থিক অনুদান প্রদান, মধ্যমেয়াদী প্রস্তাবনায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত সরকারি প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল ঘোষণা এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় বঙ্গবন্ধু লাইব্রেরি, পাঠাগার বা লাইব্রেরিতে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু কর্নারে বই ক্রয়ের নিমিত্তে আরও ৫০০ কোটি টাকার বই ক্রয়ের একটি প্রস্তাবনা দেয়া হয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর