× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সাক্ষাতকারে ডা. জাহেদ উর রহমান /করোনা বীভৎস দুর্নীতি উন্মোচন করেছে

অনলাইন

কাজল ঘোষ
(৩ বছর আগে) আগস্ট ২, ২০২০, রবিবার, ১১:২০ পূর্বাহ্ন

রাজনীতিতে যোগ দিয়েছি সময়ের আগেই। এটি করেছি বিবেকের তাড়নায়। মুক্ত রাজনীতিতে ফেরার তাগিদে সচেতনভাবেই এটি করেছি। যেন ভবিষ্যতকে বলতে পারি, আমি গণতান্ত্রিক ধারায় রাজনীতিকে ফিরিয়ে আনতে কিছুটা হলেও চেষ্টা করেছি। আজকের পচে যাওয়া রাজনীতির পেছনে শিক্ষিত পলায়নপর মধ্যবিত্ত মানসিকতার বড় দায় রয়েছে উল্লেখ করে জাহেদ উর রহমান বলেন, রাজনীতির প্রতি ঘৃণা নিয়েই আমরা বড় হয়েছি। আমাদের পরিবার বলেছে রাজনীতি খারাপ। আর একথা বলে আমরা নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিয়েছি।
২০১৬ সালে নাগরিক ঐক্যে যোগ দেয়ার মাধ্যমে শুরু সক্রিয় রাজনীতির।
পরে অল্প বয়সেই জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন। নানা ইস্যুতে কথা বলেন টকশোতে। ড. জাহেদুর রহমানের বেড়ে ওঠা রাঙ্গামাটি জেলার চন্দ্রঘোনায়। বাবার চাকরির সুবাদে কর্ণফুলী পেপার মিলস এলাকায়। সেখানেই স্কুল। কলেজ চট্টগ্রামে। তারপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (এমবিবিএস), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ (এমবিএ) এবং সর্বশেষ স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে (মাস্টার্স ইন ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ)। এই মুহূর্তে পুরোপুরি ব্যস্ত রাজনীতি নিয়ে। ব্যবসার পাশাপাশি দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খ-কালীন শিক্ষকতা করেন।
রাজনীতিতে যোগ দেয়ার নেপথ্যে, ঐক্যফ্রন্টের সাফল্য ও ব্যর্থতা, মাঠের রাজনীতি বনাম ভার্চুয়াল রাজনীতি ও আগামীদিনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন মানবজমিনের সঙ্গে।

পেশায় চিকিৎসক, পড়েছেন চলচ্চিত্র নিয়ে গেলেন রাজনীতিতে, কেন?
জীবনের একটা সময়ের পর রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত আমি দৃঢ়ভাবেই নিয়েছিলাম। তবে এত আগে রাজনীতিতে চলে আসবো এমনটা ভাবিনি। পরিকল্পনার আগেই রাজনীতিতে চলে আসার প্রধান কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে এই সময়টাতে রাজনীতিতে থাকা অনেক বেশি জরুরি। সে কারণেই যে সিনেমা বানানোর স্বপ্নে মেডিক্যাল প্রফেশনে যাইনি, সেটা থেকেও আপাতত সরে এসে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়েছি।
আমি বিশ্বাস করি একটা জাতির জীবনের সঠিক রাজনীতির প্রয়োজন বা গুরুত্বের তারতম্য হয়। কখনো কখনো রাজনীতি অন্য সময়ের তুলনায় কিছুটা হলেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির তথাকথিত নির্বাচনের পর বাংলাদেশের ভবিষ্যতে যা ঘটেছিল সেই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে সঠিক গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম জরুরি ছিল। সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য রাজনীতি অতীতের অনেক সময়ের চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। সেসব বিবেচনায় আমি আমার পরিকল্পিত সময়ের অনেক আগেই ২০১৬ সালে রাজনীতিতে পুরোপুরি জড়িয়ে যাই।
আমি এই চেষ্টায় কতটা সফল হবো, সেটা ভিন্ন আলোচনা কিন্তু আজ থেকে অনেক বছর পর দাঁড়িয়ে আমি এই আত্মতৃপ্তি পাবো এই সময়টায় আমি অন্তত চেষ্টা করেছিলাম।
বলা হয়ে থাকে, আমাদের তরুণরা রাজনীতি বিমুখ হচ্ছেন। আপনি এ পথে হাঁটলেন। নেপথ্যের ঘটনাটা বলা যায়?
‘I hate politics’ কথাটা গত কয়েক বছর থেকে অনেক শোনা যায়, কিন্তু এভাবে স্লোগানের মতো করে না হলেও আমাদের কৈশোরেও আমরা ঠিক এমন কথা শুনে বড় হয়েছি। আমাদের পরিবার, সমাজ আমাদের জানিয়েছিল, রাজনীতি খুব খারাপ জিনিস, তাই যেকোনো মূল্যে এটা থেকে দূরে থাকতে হবে। তাই রাজনীতির প্রতি এক ধরনের ঘৃণা নিয়েই বেড়ে উঠেছিলাম আমরা।

কিন্তু সময় যায়, পড়াশোনা বাড়ে, সমাজকে দেখা-বোঝা বাড়ে, আর বুঝতে পারি এভাবে রাজনীতি থেকে পালিয়ে প্রকারান্তরে রাজনীতিকে খারাপ মানুষদের হাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। রাজনীতি পচে যাওয়ার পেছনে শিক্ষিত মধ্যবিত্তের এই পলায়নবাদী মানসিকতার একটা বড় দায় আছে বলে আমার বিশ্বাস। এই বোধ তৈরি হবার পরই মনে হচ্ছে রাজনীতিকে ঘৃণা করে নিজেদের ধ্বংসই ডেকে এনেছি আমরা, যার মাশুল দিচ্ছে এই দেশের প্রতিটা মানুষ। একটা উদার গণতান্ত্রিক মানবিক রাষ্ট্র গঠন করতে হলে আমাদের আগের প্রজন্ম এবং আমাদের প্রজন্মের এই ‘পাপ’ এর প্রায়াশ্চিত্ত করতেই হবে। সেটা আমরা না করলে আমাদের পরের কোনো প্রজন্মকে করতে হবে; রাজনীতির পথে হাঁটতেই হবে।

ইংরেজিতে একটি কথা আছে পলিটিক্স হেট ভ্যাকুম বা রাজনীতি শূন্যতাকে ঘৃণা করে, বর্তমান রাজনীতিকে কিভাবে দেখছেন? আদৌ কি এখন রাজনীতি আছে দেশে।

একটা সমাজ কখনো রাজনীতিশূন্য হয় না, হতে পারে না। সামাজিক মাধ্যম দেখলেই এটা স্পষ্ট হয়; সত্যিই রাজনীতি শূন্যতা পরিহার করে। তবে এটা বলা যেতে পারে এই মুহূর্তে দলীয় রাজনীতি যেমন হবার কথা ছিল ঠিক তেমন ভূমিকা রাখতে পারছে না।

সরকারি দলের রাজনীতি নেই, কারণ এখন তাদের ক্ষমতায় থাকার জন্য রাজনীতির প্রয়োজন নেই। ২০১৪ সালের পর থেকে এই দীর্ঘ ৬ বছর ক্ষমতায় থাকার জন্য ক্ষমতাসীন দলটির জনগণের ভোটের প্রয়োজন হয়নি। দেশ-বিদেশের কিছু পরিকল্পনা-ষড়যন্ত্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের ক্ষমতাশালী একটা অংশ, যাদের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় ‘ডিপ স্টেইট’ বলা হয়, তাদের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারছে।
অপরপক্ষে চরম কর্তৃত্ববাদী একটা সরকার বীভৎসভাবে বিরোধী দলীয় রাজনীতিকে দমন করছে, তাই বিরোধী দলীয় রাজনীতির যতটুকু জায়গা পাওয়ার কথা ছিল সেটা পাচ্ছে না, তাই সেই অর্থে বিরোধী দলীয় রাজনীতিও খুব ভালোভাবে দৃশ্যমান নয়।

ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত আছেন? ফ্রন্টের কোনো ভুল কি চোখে পড়ে?
একাদশ সংসদ নির্বাচনের নামে ২৯শে ডিসেম্বর রাতে যে প্রহসন হয়েছে সেটা অকল্পনীয়; পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির আর একটিও নেই। তারপরও সেটার সঠিক পূর্বানুমান করে এটা ঠেকাতে পদক্ষেপ নেয়া জরুরি ছিল, কিন্তু ঐক্যফ্রন্ট এতে ব্যর্থ হয়েছে। এরপর নির্বাচনের নামে এমন বীভৎস একটা ঘটনা ঘটে যাবার পরও সেটার বিরুদ্ধে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতেও ঐক্যফ্রন্ট ব্যর্থ হয়েছে।

আগামীদিনের ডিজিটাল বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তরুণদের ভূমিকা কি হওয়া উচিৎ?
এখন সময় হয়েছে শুধু ডিজিটাল বাংলাদেশ নয়, ডিজিটাল বিশ্বেরই স্বরূপ বোঝার। গত কয়েক বছর থেকেই চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সারা পৃথিবীতে। আর এখন নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, করোনা এই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবকে আরো অনেক তরান্বিত করবে।
দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে খ-কালীন শিক্ষকতা সূত্রে আমি বলতে পারি চতুর্থ শিল্প বিপ্লব এবং এর প্রভাব সম্পর্কে আমাদের তরুণদের ধারণার যথেষ্ট ঘাটতি আছে। অনেক তরুণই জানে না আইওটি কী। বহু তরুণ ধারণাই করতে পারছে না তারা যেসব বিষয়ে এখন পড়াশোনা করছে খুব দ্রুতই সেসব বিষয়ে চাকরির সুযোগ থাকবে না। পৃথিবীতে শিক্ষায় এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষে গিয়ে থাকা দেশগুলোই চতুর্থ শিল্প বিপ্লবজনিত বেকারত্ব নিয়ে প্রচ- দুশ্চিন্তায় আছে।

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই অভিঘাত মোকাবিলায় পৃথিবীর অনেক দেশ যখন ‘ইউনিভার্সাল ব্যাসিক ইনকাম’ সহ নানা পথের সন্ধান করছে, তখন সামনের এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে আমাদের সরকারের কোনো মাথাব্যথা আমি দেখছি না। একটা রাষ্ট্রে কল্যাণমূলক সরকার থাকলে সেই সরকার তার প্রতিটা নাগরিকের স্বার্থরক্ষার জন্য চিন্তাভাবনা করে। আমাদের দেশে যেহেতু সেরকম সরকার নেই, আমাদের তরুণদের নিজেদের দায়িত্ব নিজেদের নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। সামনের ডিজিটাল পৃথিবীর স্বরূপ তাদের নিজেদেরই বুঝতে হবে এবং সেটার সঙ্গে উপযুক্ত করে নিজেদের তৈরি করতে হবে।

হু বলেছে, সামনের দিনগুলোতে করোনাকে নিয়েই চলতে হবে? আমাদের পরিস্থিতি কি?
ভারতীয় পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল অরুন্ধতী রায়কে ধার করে বলছি ‘করোনা আসলে একটা এক্সরে যেটা অর্থনীতি আর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কঙ্কালটার ছবি শুধু বের করে এনেছে, আমরা অবশ্যই জানতাম ভেতরে একটা ভয়ঙ্কর কঙ্কাল আছে’। ভারত নিয়ে বলা তার কথাগুলো হুবহু মিলে যায় আমাদের দেশের সঙ্গে। করোনা মোকাবিলায় একটা দেশ কত রকম ভাবে ব্যর্থ হতে পারে তার একটা জাজ্জ্বল্যমান প্রমাণ বাংলাদেশ।

আর্থিক সামর্থ্য আর উন্নয়নের যে বিরাট বয়ান আমাদের সামনে হাজির করা হয়েছে বছরের পর বছর, আমরা দেখলাম সবকিছু একেবারে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়েছে করোনার সামনে। আমরা পর্যাপ্ত টেস্ট-এর আশেপাশে টেস্ট করতে পারিনি, আইসিইউ-ভেন্টিলেটর দূরে থাকুক আমরা মানুষের জন্য পর্যাপ্ত অক্সিজেনেরই ব্যবস্থা করতে পারিনি, আমরা আমাদের চিকিৎসাকর্মীদের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা করতে পারিনি, আমরা করোনার অভিঘাতে কর্মহীন হয়ে পড়া কোটি কোটি মানুষের পেটে খাবার তুলে দিতে পারিনি। চুরি বাদ দিয়ে সরকারি হিসাবেই তিনমাসে একজন মানুষকে গড়ে চাল দেয়া হয়েছে ২.৬২ কেজি, আর আর্থিক সাহায্য দেয়া হয়েছে ২০.৫৮ টাকা। এতটাই হাস্যকর ত্রাণের পরিমাণ। উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করছি না, আমাদের একেবারেই পাশে ভারতের কেরালা, এমনকি নেপালের তুলনায়ও আমরা অত্যন্ত খারাপ করেছি। নেপালের মাথাপিছু আয় আমাদের ৬০%। করোনা আবারো আমাদের দেশের বীভৎস দুর্নীতি উন্মোচন করেছে। করোনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমাদের যাচ্ছেতাই অদক্ষতা, অযোগ্যতা, সমন্বয়হীনতা।

আসলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলার অনেক আগে থেকেই আমরা করোনার সঙ্গে সহাবস্থান করছি। সত্যি বলতে আমাদেরকে বাধ্য করা হয়েছে। জনগণের দায়িত্ব নিতে একেবারেই অনীহ সরকারটি করোনার একেবারে পিক সময়ে সবকিছু খুলে দিয়েছিল, যেন সবাই যার যার মতো করে খেটে খেতে পারে। এতে কোটি কোটি মানুষের জীবনকে যে প্রচ- ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়া হয়েছে, সে ব্যাপারে তাদের ন্যূনতম ভ্রুক্ষেপ নেই।

মাঠের রাজনীতি বন্ধ বহুদিন থেকেই। রাজপথের স্লোগান আর মিছিলের দিন কি শেষ হয়ে এসেছে?
‘মাঠ’ বলতে আপনি কী বুঝিয়েছেন, সেটা আমি বুঝি, পাঠকও বুঝেছেন নিশ্চয়ই। তবে একটু অফটপিক হলেও মাঠ শব্দটা নিয়েই আমি কয়েকটা কথা বলতে চাই; কারণ এটা জরুরি।

রাজনীতির মাঠ বলতে এখন আমাদের প্রথাগত মাঠের সঙ্গে ভার্চুয়াল মাঠকেও বুঝতে হবে। আমাদের অনেকেরই অলক্ষ্যে আমাদের যোগাযোগ এবং মিথস্ক্রিয়ার ধরণ ক্ষেত্র পাল্টে গেছে। ফলে বর্তমানে ভার্চুয়াল মাঠ অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে; ভবিষ্যতে এর গুরুত্ব বাড়বে আরো অনেক দ্রুতবেগে। বেশ ক’বছর আগেই তো একটা ‘আরব স্প্রিং’ হতে দেখেছি আমরা এই ভার্চুয়াল মাঠকে কেন্দ্র করেই। আমেরিকা এবং ও ইউরোপের অনেক দেশের নির্বাচনে ভার্চুয়াল মাঠ কতটা প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে, দেখছি আমরা।

আমি কোনোভাবেই বলছি না ভার্চুয়াল মাঠের রাজনীতি প্রথাগত রাজনৈতিক মাঠকে এখনই বাতিল করতে। এটা আসলে তার সঙ্গে পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে, করবে। একটা কথা আমাদের সনাতনপন্থি রাজনীতিবিদদের মনে রাখা উচিত হবে, মাঠের রাজনীতিবিদ বলে তারা যা বোঝান সেটার সময় চলে গেছে। ভার্চুয়াল মাঠের একজন রাজনৈতিককর্মী কোনোভাবেই সনাতন মাঠের কর্মীর চাইতে ছোট নন। রাজনৈতিক দলগুলো এবং এর নীতি নির্ধারকদের পরিবর্তিত এই প্রেক্ষাপট বুঝতে হবে এবং সেটা অনুযায়ী তাদের দলের পরিকল্পনা সাজাতে হবে।

এবার আপনার মূল প্রশ্নের জবাবে আসি। প্রথাগতভাবে মাঠের রাজনীতি বলতে যা বোঝায় সেটা এই মুহূর্তে কম আছে আসলে সরকারের দমন-পীড়নের কারণে। তবে আমি বিশ্বাস করি সরকারি দমন-পীড়ন না থাকলেও মানুষ আগের মতো এত বেশি স্লোগানে মিছিলে আসতেন না। কারণ এতক্ষণ যেটা বলেছিলাম, রাজনৈতিক আন্দোলন-কর্মসূচিতে যুক্ত থাকা বা সমর্থন দেয়ার জন্য এখন আরেকটা মাঠ আছে মানুষের একেবারে হাতের মুঠোয়।

গণতন্ত্র আর মত প্রকাশ, মানুষের অধিকার এই শব্দগুলি কি এখন কেবলই ক্লিশে বুকিশ বলে মনে হয়?
এমন একটা প্রশ্ন ওঠাটাই প্রমাণ করে, গণতন্ত্র স্বাধীন মতপ্রকাশ মানবাধিকার এগুলো এই মুহূর্তে বাংলাদেশের বুকিশ শব্দই।
গণতন্ত্র মানে অনেক বড় ব্যাপার, কিন্তু আমরা এই মুহূর্তে গণতন্ত্রের প্রথম ভিত্তি, একটা অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিয়েও প্রতিদিন কথা বলতে হয়। আমাদের দেশের গণতন্ত্রহীনতা তো এখন বিশ্ব স্বীকৃতওÑ এই ক্ষেত্রে আমাদের ক্রমাবনতির কথা ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, ফ্রিডম হাইজ আর বেরটেলসম্যান স্টিফটুং নিয়মিত জানায় সেটা।

‘হাউ ডেমোক্রেসিস ডাই’ বইতে সঠিক নির্বাচনী কাঠামোর মধ্যেও কীভাবে গণতন্ত্রের ক্ষয় হয় সেটা দেখিয়েছেন এর লেখক স্টিভেন লেভিটস্কি আর ড্যানিয়েল জিবলাট। সেটা থেকে গণতন্ত্রকে কীভাবে সুরক্ষিত রাখা যায় সেই আলোচনা চলছে এখনকার পৃথিবীতে। আর আমরা গণতন্ত্রের এক ‘প্রাগৈতিহাসিক বিষয়’ একটা ঠিকঠাক নির্বাচন নিয়ে আমাদের যাবতীয় মনোযোগ নিবদ্ধ রাখছি।
এই দেশে ঘুম ভেঙে আমরা পত্রিকা খুললে প্রতিদিন দেখি বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-র শিকার হচ্ছে বহু মানুষ; এত বীভৎস মানবাধিকার হরণের পর অন্য মানবাধিকার হরণ নিয়ে আর কথা বলার প্রয়োজন হয় না। আর ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর ২৫, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২ ধারাগুলোকে রেখে, এইসব ধারার অধীনে শত শত মামলা আর গ্রেপ্তার হওয়া দেখে আর যাই হোক মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলা একেবারেই অবান্তর।

রাজনীতি কি আর স্বভাবিক হবে নাকি এখন ওয়েবিনারে সীমাবব্ধ থাকবে?

করোনা কতগুলো বিষয় চিরকালের মতো পাল্টে দিয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি। পৃথিবীর সবদেশেই এক সময় মানুষ মনে করত অনেক কিছুই দূর থেকে ভার্চুয়াললি করা যাবে না, কিন্তু করোনায় বাধ্য হয়ে তেমন অনেক কিছু মানুষ করেছে এবং দেখেছে সেটা এফেক্টিভলি করা যায়।
করোনার কারণে বাধ্য হয়ে ওয়েবিনার করা হলেও, করোনা চলে যাবার পরও আমি বিশ্বাস করি মানুষ অনলাইনে আরো বেশি যুক্ত থাকবে। করোনা ভীতি কেটে গেলেও মাঠের রাজনীতি পুরোপুরি আগের জায়গায় খুব সহজে ফিরবে বলে আমি মনে করি না।
এর কারণ বোঝার জন্য একটু প্রেক্ষাপট বলে নেয়া দরকার। আমি বিশ্বাস করি সামনে বাংলাদেশ প্রচ- সংকটে পড়তে যাচ্ছে। আমরা যারা অর্থনীতির কিছুটা খোঁজখবর রাখি তারা জানি ২০১৯ সালে একমাত্র রেমিটেন্স ছাড়া সামষ্টিক অর্থনীতির আর সব সূচক, যেমন রপ্তানি আয়, আমদানির পরিমাণ (বিশেষ করে মূলধনী যন্ত্রপাতি), বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহ, অভ্যন্তরীণ ভোগ নিম্নগামী হয়ে পড়েছিল। এর সঙ্গে এখন দেশে এবং দেশের বাইরের অভিঘাত যুক্ত হয়ে দেশ প্রচ- অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটটা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে এমনিতেই ক্ষমতাসীন সরকারের জনগণের ম্যান্ডেট নেই, তাই সে ভীত। চরম অর্থনৈতিক মন্দার সেই সরকারটিই আরো দুর্বল বোধ করবে এবং আরো বেশি ভীত হবে। আমরা জানি, যেকোন ভীত সত্ত্বা প্রকৃতিগতভাবেই আক্রমণাত্মক। অদূর ভবিষ্যতে স্বাভাবিক রাজনীতি ফিরবে না কারণ, সরকার তার ক্ষমতা হারানোর ভয়ে ভীত হয়ে আগের চেয়ে আরো বেশি নিপীড়ক হয়ে উঠবে। এই ভবিষ্যৎবাণী করাই যায়, বাংলাদেশের একটা অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় কোনো দল আসীন হওয়ার আগ পর্যন্ত দেশে স্বাভাবিক রাজনীতি চলবে না।

রাজনীতিতে নেপথ্যের অনেক বিষয় থাকে যা সাধারণের অজ্ঞাত, এমন একটি দু’টি নেপথ্যের গল্প পাঠকদের শেয়ার করবেন কি?
নির্বাচনের পর ঐক্যফ্রন্ট কেন মাঠে সরকারবিরোধী আন্দোলন করে উঠতে পারেনি তার দায় ড. কামাল হোসেনকে দিতে দেখেছি আমি সামাজিক মাধ্যমে। আমার দল নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির একজন সদস্য হিসেবে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি এই সময়গুলো। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ড. কামাল তার বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় দুর্বল ছিলেন, কিন্তু রাস্তায় কিছু করার জন্য তার মতো আগ্রহ খুব কম মানুষেরই ছিল। তিনি বহু সময়ই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কেন রাস্তায় বড় কর্মসূচি নেয়া হচ্ছে না।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর