লেবাননের বৈরুতে বিস্ফোরনে মারা গেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক তরুণ মেহেদী হাসান রনি (২৫)। বুধবার সকালে তার মৃত্যুর খবর বাড়িতে পৌঁছলে শোকের মাতম শুরু হয়। একমাত্র আয়রোজগারী ছেলের মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ তার বাবা-মা। রনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার মাছিহাতা ইউনিয়নের তাজুল ইসলামের ছেলে। তার পরিবার সূত্রে জানা যায়, চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন রনি। গ্রামের একটি স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার পর পরিবারের হাল ধরতে বিদেশ পাড়ি জমান। সুদে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে ২০১৪ সালের ৯ই মার্চ লেবাননে যান রনি। এরপরই বাহরাইন প্রবাসী তার বাবা তাজুল ইসলাম দেশে ফিরে আসেন।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী হয়ে পড়েন রনি। বৈরুতে একটি বিপণিবিতানে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর কাজ করতেন তিনি। মাসে ২০ হাজার টাকা পাঠাতে পারতেন বাড়িতে। কিন্তু এতো অল্প বেতনের টাকা দিয়ে ঋণ শোধ করতে পারছিলেন না। এখনও সুদের দুই লাখ টাকার মতো ঋণ পরিশোধ বাকি আছে তার। এই মার্চ মাসেই দেশে আসার কথা ছিলো তার। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। কাজ বন্ধ থাকায় বাড়িতেও টাকা পাঠাতে পারছিলেন না। লেবাননে আয়-রোজগার কম হওয়ায় অন্য কোনো দেশে পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন রনি। বাড়ির সবাইকে বলেছিলেন অনুমতি দেয়ার জন্য। কিন্তু ঋণের টাকা শোধ না হওয়ায় বাড়ি থেকে অনুমতি মিলেনি। অভিমান করে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে অন্য দেশে চলে যাওয়ার কথাও বলেছিলেন ছোট বোন জেসমিন আক্তার হ্যাপিকে। কিন্তু নিয়তি রনিকে নিয়ে গেছে না ফেরার দেশে। অন্য দেশে যাওয়ার কথা বলে এতো দূরে যে চলে যাবেন সেটি ঘুণাক্ষরেও টের পাননি কেউ। এসব কথা তুলে ধরে কান্নায় লুটিয়ে পড়ছেন স্বজনরা। মঙ্গলবার লেবাননের বৈরুতে বিস্ফোরণে মারা যান রনি। এই খবর পাওয়ার পর থেকে বাবা তাজুল ইসলাম আর মা ইনারা বেগম বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। কান্নার রোল উঠে বাড়িতে। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন রনি। কান্না থামছে না ভাইবোনদের।