বৈরুতের ভয়াবহ বিস্ফোরণ এবং ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় দেশটিতে অবস্থানরত প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন। আহত শতাধিক বাংলাদেশির মধ্যে এ পর্যন্ত চারজনের মত্যুর খরব নিশ্চিত করেছে মিশন। বৈরুতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আল মুস্তাহিদুর রহমান বুধবারের ভিডিও বার্তায় চিকিতসাধীন অবস্থায় দু'জন বাংলাদেশি নিহত এবং ৮০ জনের আহত হওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। রেকর্ডেড ভিডিও বার্তা প্রচারের পর আরও দু'জন মারা যান বলে নিশ্চিত হয় মিশন। রাষ্ট্রদূত তার বার্তায় বাংলাদেশ কমিউনিটির বিষয়ে বলেন, লেবাননে প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশায় কর্মরত। লেবাননের বর্তমান পরিস্থিতি বেশ থমথমে। সবাই বেশ আতঙ্কগ্রস্ত। বাংলাদেশি কমিউনিটিও আতঙ্কগ্রস্ত।
আমরা ফেসবুকের মাধ্যমে বিভিন্নভাবে তাদের উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করছি। যাতে আমরা সম্মিলিতভাবে পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটাতে পারি। লেবানন পরিস্থিতি বিশেষত বাংলাদেশিদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সবসময় হালনাগাদ তথ্য নিচ্ছেন জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন ধরনের দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন। যাতে আমাদের বাংলাদেশি কমিউনিটি এখানে ভালো থাকে। আহতদের সুচিকিৎসা এবং বিভিন্ন ধরনের সহায়তা প্রদান করা হয়। এছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে অনেকবার কথা বলেছেন এবং বিভিন্ন ধরনের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি প্রস্তাব দিয়েছেন বাংলাদেশ থেকে কোনো চিকিৎসা বা খাদ্যসহায়তা পাঠানো যায় কি না। রাষ্ট্রদূত বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি বাংলাদেশ থেকে যদি চিকিৎসা বা খাদ্যসহায়তা এখানে আসে তবে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে এবং লেবাননের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হবে।
আহতদের সুচিকিৎসার নিশ্চয়তারাষ্ট্রদূত বলেন, আহত বাংলাদেশিদের মধ্যে আটজন রফিক হারিরি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তাদের চিকিৎসা যাতে ভালো হয়, দূতাবাসের তরফ থেকে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি এবং তাদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করছি। মঙ্গলবারের ঘটনার ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, বিকেল আনুমানিক ৬টায় লেবানন সমুদ্রবন্দরে অতিউচ্চক্ষমতা সম্পন্ন দুটি বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়। এ বিস্ফোরণে লেবাননের জানমাল ও স্থাপনার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। শতাধিক লোক মারা গেছেন। আহত হয়েছেন হাজারের অধিক।বিস্ফোরণটি হয়েছে সমুদ্রবন্দরে এলাকায়। বন্দরে নোঙ্গর করা ছিল আমাদের নৌবাহিনীর একটি জাহাজ, যেটি ইউনিফিলে কর্মরত।বিস্ফোরণস্থল থেকে এর দূরত্ব ছিল ২০০ গজ। রাষ্ট্রদূত বলেন, ঘটনার পরপরই আমি আমার কর্মকর্তা ও দূতাবাসের কর্মচারীদের কয়েকজন অতি দ্রুত সমুদ্রবন্দরে চলে যাই বাংলাদেশি জাহাজ 'বিএনএস বিজয়' এর কাছে। ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলি, দেখতে পাই জাহাজের কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া কর্মকর্তা ও নাবিকসহ অনেকে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। এর মধ্যে দুইজনের অবস্থা বেশ গুরুতর ছিল।তাদের আঘাত ছিল মাথায়। চটজলদি দূতাবাসের দু'জন কর্মকর্তা দিয়ে তাদেরকে আমেরিকান হাসপাতালে পাঠাই। তাতক্ষনিক চিকিৎসায় তাদের অবস্থার খানিক উন্নতি ঘটে। একজনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, অন্যজন এখনও চিকিতসাধীন। তার অবস্থা ক্রিটিক্যাল। রাষ্ট্রদূত জানান, দূতাবাসের মাধ্যমে ইউনিফিলের সঙ্গে যোগাযোগ করে আহত অন্য ছয়জন কর্মকর্তাকে হেলিকপ্টার করে এবং বাকি ১০ জনকে সড়কপথে জাতিসংঘ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। ঢাকায় পাঠানো রাষ্ট্রদূতের বুধবারের রিপোর্ট মতে, ওই ১৬ জনের অাঘাত এতোটা শুরুতর নয়, প্রায় সবাই আশঙ্কামুক্ত।
বাংলাদেশ মিশন অক্ষতএদিকে ঢাকাস্থ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৈরুতের বিস্ফোরণস্থলের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসের অবস্থান হলেও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। মিশন পুরোপুরি অক্ষত আছে এবং কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে মর্মে সেগুনবাগিচায় বার্তা পাঠানো হয়েছে। এ-ও বলা হয়েছে, বৈরুতের ভয়াবহ বিস্ফোরণের ফলে গোটা উপকূলই কমবেশি বিধ্বস্ত হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নীচে এখনও অনেকে আটকা। ফলে উদ্ধার অভিযানের গতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হতাহতের সংখ্যাও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংস্থা রেডক্রস উদ্ধার অভিযানে সক্রিয় রয়েছে।