× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

১০ হাজার হাঁস-মুরগির মৃত্যু / অস্বাভাবিক জোয়ারে কমলনগর-রামগতিতে ব্যাপক ক্ষতি

বাংলারজমিন

কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
৬ আগস্ট ২০২০, বৃহস্পতিবার

মেঘনা নদীর অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের কমলনগর ও রামগতি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পূর্ণিমার প্রভাবে বুধবার বিকেল থেকে মেঘনা নদীর জোয়ারে পানি স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এতে দু’উপজেলার নিম্নাঞ্চলীয় এলাকার প্রায় অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে থাকাসহ জোয়ারের স্রোতে দেড় সহস্রাধিক কাঁচাঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জোয়ারে প্রায় ১০ হাজার হাঁস-মুরগি মারা যাওয়ার পাশাপাশি সহস্রাধিক পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রাস্তাঘাট ও পুল-কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়ে অভ্যন্তরীণ কয়েকটি সড়কে বন্ধ রয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা।
 
জানা গেছে, পূর্ণিমার প্রভাবে বুধবার বিকেল থেকে মেঘনার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ থেকে ছয় ফুট বেড়ে যায়। বেড়ীবাঁধ না থাকায় এতে নদীর তীরবর্তী কমলনগর উপজেলার মতিরহাট, নাছিরগঞ্জ, কাদির পন্ডিতেরহাট, চরজগবন্ধু, মাতাব্বরহাট, লুধুয়া ফলকন ও পাটারীরহাট এবং রামগতি উপজেলার বালুরচর, সুজনগ্রাম, জনতা বাজার, মুন্সীরহাট, সেবাগ্রাম, চরআলগী, বড়খেরী, চরগাজী, চরগজারিয়া, চর মুজাম্মেল ও তেলিরচর এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। পানিতে প্লাবিত হয় মতিরহাট, নাছিরগঞ্জ, কাদির পন্ডিতেরহাট, পাটারীরহাট, লুধুয়া বাঘারহাট, মুন্সীরহাট, জনতা বাজার ও চেয়ারম্যান বাজার। এতে করে দোকানঘরের মালামল নষ্ট হয়ে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন।
জোয়ারের পানিতে বিভিন্ন এলাকার খামারীদের হাঁস-মুরগী মারা যাওয়াসহ গবাদিপশু পানিতে ভেসে যায়। জোয়ারের স্রোতে দেড় সহস্রাধিক কাঁচা বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ পানিতে ভেসে যায় পুকুর ও ঘেরের মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েকশ’ কিলোমিটার কাঁচা ও পাকা সড়কের।
এদিকে ওই সব এলাকায় রান্নার চুলা পানিতে ডুবে থাকায় লোকজন চরম খাদ্য সঙ্কটে ভুগছেন। যদিও ওইসব পরিবারের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে।
কমলনগর উপজেলার চরফলকন এলাকার মৎস্যচাষী সিরাজুল ইসলাম জানান, জোয়ারের পানিতে তার তিনটি ঘেরের প্রায় ২০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে।

চরলরেন্স এলাকার তাজ লেয়ার মুরগী খামারের স্বত্তাধিকারী মো. ওসমান জানান, আকস্মিক জোয়ারের পানিতে তার খামার ডুবে প্রায় পাঁচ হাজার মুরগী মারা যায়। এতে তিনি প্রায় ২৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন।
চরফলকন এলাকার পোল্ট্রি খামারী ফিরোজ আলম জানান, জোয়ারের পানিতে তার খামারের দুই শতাধিক পোল্ট্রি মোরগ মারা গেছ।

সাহেবেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আবুল খায়ের জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে তার ইউনিয়নের চরজগবন্ধু ও কাদির পন্ডিতেরহাটসহ নিম্নাঞ্চলীয় এলাকা পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। এতে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে রাখা ভিজিডি’র ৭২ বস্তা চাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একই সময় জোয়ারের স্রোতে কাঁচাঘর এবং রাস্তাঘাট ক্ষতিগ্রস্ত হয় বলে তিনি জানান।

রামগতি উপজেলার বড়খেরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসান মাকসুদ মিজান জানান, পানির ¯্রােতে মেঘনাপাড়ের ৩৫টি বসতঘর নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া হাজীপাড়া সড়কে একটি কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

চরআলগী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন লিটন চৌধুরী জানান, তার ইউনিয়নের কয়েকশ’ কাঁচা বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং আড়াই শতাধিক পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে গেছে।

চরআব্দুল্যাহ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. কামাল উদ্দিন জানান, তার ইউনিয়নটি চারদিকে মেঘনা নদী বেষ্টিত হওয়ায় অস্বাভাবিক জোয়ারে চরগজারিয়া, চর মুজাম্মেল ও তেলিরচর এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানিতে ওইসব এলাকার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। জোয়ারের পানিতে ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান বাজার ও জনতা বাজার প্লাবিত হয়ে অর্ধশতাধিক দোকানঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, পানির স্রোতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৫০০ কাঁচা বসতঘরের। এছাড়াও দুই শতাধিক ছাগল-ভেড়া ও আড়াই সহস্রাধিক হাঁস-মুরগী ভেসে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন কাঁচা সড়কের।

কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন জানান, মেঘনার ভাঙনে বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় নদী তীরবর্তী এলকাগুলো উন্মুক্ত থাকায় প্লাবিত হয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনসহ জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরিসহ ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনের কাজ চলছে। বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান করা হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর