× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নতুন ফরমান নানা প্রশ্ন

প্রথম পাতা

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
৭ আগস্ট ২০২০, শুক্রবার
ফাইল ছবি

মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া হাসপাতালে অভিযান ও গণমাধ্যমে কথা বলা নিষেধ এমন নির্দেশনা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই পরিপত্র জারি করার ফলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স  ঘোষণা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। এ ধরনের নির্দেশনার কারণে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলো অনিয়মের সুযোগ পাবে। নিবন্ধনহীন হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো আরো বেশি অপকর্ম করার সুযোগ পাবে। রোগীদের প্রতারিত হওয়ার ঘটনা আরো বাড়বে। পাশাপাশি বাড়বে ভুয়া ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা। এ ধরনের পরিপত্র জারির আগে পেশাজীবী এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন ছিল বলে মনে করেন তারা।

গণমাধ্যমে কথা বলা এবং হাসপাতালে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে অনুমতি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ  মানবজমিনকে বলেন, নতুন করে কোনো পরিপত্র জারি করার প্রয়োজন নেই। এমনিতেই কর্মকর্তাদের কথা বলার বিষয়ে গাইড লাইন আছে।
তিনি আরো বলেন, এটা আমলাতান্ত্রিক কালচার। নানা চাপে মনোযোগ দেয়ার জন্য এ ধরনের পরিপত্র। করোনা ইস্যুতে কর্মকর্তারা তো সীমার বাইরে গিয়ে কিছু বলেননি মিডিয়াতে। মন্ত্রণালয়ের মূূল কাজ বা সমস্যা সমাধানের বিশ্লেষণের প্রতি মনোযোগ নেই। তাই তারা বারবার পরিপত্র জারি করে। পরিপত্র জারি করা সহজ। সত্যিকার অর্থে এতে কাজের কাজ কিছুই হয় না। এতে জনসম্পৃক্ত কাজের সিদ্ধি হয় না বলে মনে করেন এই বিশেষজ্ঞ। সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সমন্বয়ভাবে কাজ করতে হবে। মানুষকে যুক্ত করতে হবে। সাবেক এ পরিচালক আরো বলেন, হাসপাতালে অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে কেন অনুমতি নিতে হবে। বেসরকারি হাসপাতালের মালিকরা দেন-দরবার করেছে। তাদের জন্য সমস্যা হচ্ছে। অনিয়ম ধরা পড়ে যাচ্ছে। অনিয়ম দূর করতে পারেনি মন্ত্রণালয়। জনগণের দিকটা বেশি দেখতে হবে মন্ত্রণালয়কে। অভিযানে শৃঙ্খলা আনে। এখন পরিপত্র জারি করে এটা বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। অধ্যাপক ডা. বেনজির আরো জানান, অভিযানের ফলে উন্নতি হচ্ছিল অনিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্যখাত। কিন্তু তা নিবৃত্ত করতে পরিপত্র জারি করা ঠিক হয়নি। মাঝে মাঝে অভিযান করা দরকার ছিল। রিজেন্ট ও লাজফার্মায় অভিযানের ফলে অনেক দুর্নীতিবাজরা নিবৃত্ত হয়েছিল। এতে আস্থা ফিরছিল এ খাতে। এই পরিপত্র জারি করার ফলে জিরো টলারেন্স প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এ ধরনের পরিপত্র জারির আগে পেশাজীবী এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন ছিল বলেও মনে করেন তিনি।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনাকালে দেখেছি বেশির ভাগ বেসরকারি হাসপাতাল নিয়মকানুন মানে না। সেখানে নিয়মানুযায়ী চিকিৎসক নার্স থাকে না। এমনকি চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকে মেয়াদোত্তীর্ণ ও মানহীন। এ ভাবে অভিযান পরিচালনা বন্ধ করে দেয়া হলে এসব অসাধু চিকিৎসা ব্যবসায়ী ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমূহ) ডা. ফরিদ হোসেন মিয়া মানবজমিনকে বলেন, এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না। মন্ত্রণালয় যেহেতু এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অবশ্যই তারা  চিন্তাভাবনা করেই নিয়েছে, যাতে সবার জন্য ভালো হয়।

বুধবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা জারি করা পরিপত্রে বলা হয়, মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া দেশের কোনো সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান চালাতে পারবে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। কোথাও কোনো হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে। সেখানে বলা হয়েছে, করোনা মহামারি প্রাদুর্ভাবের পর থেকে দেশের সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন শাখার সদস্যরা নানা বিষয়ে অভিযান পরিচালনা করছে। একটি হাসপাতালে একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করায় তাদের স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এসব কারণে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে এক ধরনের চাপা অসন্তোষ বিরাজ করছে। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের সার্বিক কার্যক্রম দেখার জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। যেখানে জননিরাপত্তা বিভাগের একজন যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে রয়েছেন। ভবিষ্যতে স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো অপারেশন পরিচালনা করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে সেটি করতে হবে। চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, যেকোনো সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এ ধরনের অভিযান পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকতে এবং জরুরি অভিযান পরিচালনার প্রয়োজন হলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং চিকিৎসা, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে অভিযান পরিচালনা করতে হবে।

এদিকে, ৪ঠা আগস্ট স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক নির্দেশনায় বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পূর্বানুমতি ছাড়া গণমাধ্যমে অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কথা বলতে নিষেধ করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেয়া হয়। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে স্বাস্থ্য বিভাগের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা মুখপাত্র হিসেবে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন এবং অধিদপ্তরের প্রতিনিধিত্ব করেন। নিয়মিত ব্রিফিং ছাড়াও এই সকল বক্তব্য ও মন্তব্যের কারণে অনেক সময় সরকারকে বিব্রত হতে হয়। প্রচার মাধ্যমে সরকারের প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে যথাযথ বিধি-বিধান অনুসরণ করা বাঞ্ছনীয়। নির্দেশনায় আরো বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষে বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে ব্রিফিং ও সাক্ষাৎকার প্রদান বা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের বিষয়ে মহাপরিচালকের পূর্বানুমোদন নিতে হবে। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারীকে ন্যূনতম পরিচালক পদমর্যাদার হতে হবে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর