× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে ফেরার লড়াই

বাংলারজমিন

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
৮ আগস্ট ২০২০, শনিবার

ঈদের ছুটি শেষে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে ফেরার অসম লড়াইয়ে নেমেছেন বগুড়ার শেরপুরসহ আশপাশের তিন উপজেলার অসংখ্য মানুষ। যার শীর্ষে রয়েছেন নিন্ম ও মধ্যবিত্ত আয়ের লোকজন। জীবিকার তাগিদে কর্মস্থলমুখি মানুষগুলো বাসের ভেতরে গাদাগাদি করে আবার অনেকেই মালবাহী ট্রাকে ভেতরে-বাইরে আসন গেড়েছেন। হাতের মুঠোয় জীবন নিয়ে এভাবেই কর্মস্থলের দিকে ছুটছেন তাঁরা। এক্ষেত্রে জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করছেন না এসব মানুষ। তাই ট্রাকের ভেতরে টইটুম্বুর করছে কর্মস্থলমুখি মানুষ আর মানুষ। যেন কোথাও ঠাঁই নেই। প্রাণঘাতী করোনার মাঝেও সামাজিক দূরত্ব মানার বালাই নেই তাদের।
শুক্রবার (০৭আগস্ট) উপজেলার ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের স্থানীয় বাসষ্ট্যান্ড, খেজুরতলাস্থ বাস টার্মিনাল, ধুনটমোড়, শেরুয়া বটতলা এলাকাসহ বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে এমন দৃশ্য নজরে আসে।
এদিকে কর্মস্থলমুখি এসব মানুষের নিকট থেকে গলাকাটা ভাড়া আদায়েরও অভিযোগ উঠেছে। পরিবহন মালিক-শ্রমিক যৌথভাবে তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করছেন। রাজধানী ঢাকায় যেতে তাঁদের কাছ থেকে প্রকাশ্যেই ৪০০-৫০০ টাকার স্থলে ৭০০-৮০০ টাকা হারে ভাড়া আদায় করছে। ভুক্তভোগীরা প্রতিবাদ করেও এর কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। ফলে অসহায় এসব কর্মস্থলমুখি মানুষদের বাধ্য হয়েই অধিকহারে ভাড়া দিয়ে ঢাকায় যেতে হচ্ছে। ঈদ পরবর্তী কয়েকদিন ধরে জোরপূর্বক এভাবে ভাড়া আদায়ের ঘটনা ঘটলেও হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের কোন মাথা ব্যথা নেই। বরং তাঁরা মোটা অঙ্কের মাসোহারার বিনিময়ে বাস মালিক-শ্রমিকদের ওইসব অনৈতিক কাজে অনেকটা সমর্থন যুগিয়ে যাচ্ছেন বলে জোর অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কেউ বাসের মধ্যে গাদাগাদি করে আবার কেউবা মালবাহী ট্রাকের বডি, মিনি ট্রাকের মধ্যে অথবা কার্গোর ভেতরে বন্দি হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছেন। আবার অনেককেই গাড়ির সন্ধানে হন্য হয়ে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছেন। সোলায়মান আলী, রেশমা খাতুনসহ একাধিক গার্মেন্ট শ্রমিক জানান, পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনে বাড়ি আসার পথে এমনিতেই তাদের বাড়তি ভাড়া দিয়ে বাড়ি আসতে হয়েছিল। আবার কর্মস্থলে ফেরার পথেও একই ঘটনা। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে কর্মস্থলে ফিরতে হচ্ছে। তাঁরা বলেন, আমরা যে টাকা আয় করি, তা দিয়ে সংসার চালানোই কঠিন। এরমধ্যে আসতে যেতে যদি এভাবে অধিকহারে ভাড়া গুনতে হয় তবে আমাদের মতো গরীবরা যাবে কোথায়?। কর্মস্থলমুখি গার্মেন্ট শ্রমিকরা জানান, বগুড়ার শেরপুর, ধুনট ও নন্দীগ্রাম উপজেলাসহ পাশের সিরাজগঞ্জের সোনামুখী, মেঘাই এলাকার প্রায় চার থেকে পাঁচ লাখ নারী ও পুরুষ ঢাকা এবং চট্টগ্রামের একাধিক গার্মেন্টে চাকরি করেন। ঈদের ছুটিতে তাঁরা নিজ বাড়িতে আসেন। ছুটি শেষে আবার তাঁদের কর্মস্থলে ফিরেন। তবে করোনার কারণে এবার অনেকেই বাড়ি আসেননি। কিন্তু যারা এসেছেন তাদের প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তারা। ভুক্তভোগীরা জানান, ঈদের ছুটি শেষ। তাই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ঢাকায় পৌঁছাতে হবে। অন্যথায় জীবিকার একমাত্র অবলম্বন চাকরিটা খোয়াবার ভয় রয়েছে। তাই কোনোভাবেই বিলম্ব করার সুযোগ নেই। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে যোগ দিতে যেকোনো উপায়ে ঢাকায় ফিরতেই হবে। রোজিনা খাতুন, আয়েশা আক্তার, সালমা বেগম, আব্দুর রশিদসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, ঢাকায় তারা বিভিন্ন গার্মেন্টে চাকরি করেন। চাকরিটাই তাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। ঈদের ছুটি  শেষ। এখন চাকরিতে যোগ দিবে হবে। নির্ধারিত সময়ে অফিসে যেতে না পারলে হয়তো চাকরিটাই চলে যাবে। তাই যেভাবে হোক ঢাকায়  যেতেই হবে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কর্মস্থলে যোগ দিতেই হবে যোগ করেন এসব গার্মেন্টকর্মীরা। আজিজুর রহমান। একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। ঈদের ছুটি কাটাতে পরিবার নিয়ে গ্রামে এসেছিলেন। ছুটি শেষ এখন কর্মস্থলে ফিরতে হবে। তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে ঢাকায় ফিরতে অত্যন্ত চড়া মূল্যে চারটি টিকিট কেটেছি। কারণ করোনার কারণে সিট ফাকা রাখার অজুহাতে ভাড়া বেশি নেয়া হলেও বাসের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানার কোন বালাই নেই। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, এ ধরনের খবর পেয়ে টার্মিনাল এলাকায় পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। যেন কেউ  কোন যাত্রীর নিকট থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে। এরপরও যদি কোন ব্যক্তি অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর