তছলিম উদ্দিন, বয়স ৫০। দীর্ঘদিন ধরে নৈশপ্রহরীর কাজ করেন রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ীতে। সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতেন। দরিদ্র লোকটি প্রায় ২০ থেকে ২৫ বছর যাবত নৈশপ্রহরীর কাজ করে আসছেন। সুমিষ্টভাষী এই লোকটিকে প্রাণ দিতে হলো তুচ্ছ কারণে। নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় তাকে।
গত শনিবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে। নির্মমভাবে পেটানোর দৃশ্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, ছোট একটি ছেলের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে তছলিম উদ্দিনকে।
আড়াই মিনিটের ভিডিওতে দেখা যায়, একজন ব্যক্তি লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছেন পায়ে। আঘাতে আঘাতে জর্জরিত নৈশপ্রহরী। তবু থেমে নেই পেটানো। এরপর সাদা স্যান্ডো গেঞ্জি পরা আরেক ব্যক্তি থাপড়ানো শুরু করে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, উপজেলার শঠিবাড়ী হাটে গালামাল পট্টিতে কাজ করতেন তিনি। গত শনিবার ভোররাতে চুরি হয় সাহেব আলী নামে একজনের দোকানে। স্থানীয়রা এক চোরকে আটক করে। তার নাম রমজান আলী (১৪)। সে পীরগঞ্জ উপজেলার জীবনানন্দ গ্রামের বাসিন্দা। বাবার নাম মোকছেদ আলী। জনতার হাতে আটক রমজান জানায়, তার চুরির সঙ্গে নৈশপ্রহরী তছলিমও জড়িত। এরপর কোনো কথা না শুনে শুধুমাত্র এই অভিযোগের ভিত্তিতে তছলিমকে গণপিটুনি দেয়া হয়। এতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। নেয়া হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১২টায় তার মৃত্যু হয়।
তছলিম উদ্দিনের ৬ ছেলেমেয়ে। অভাব অনটনে চলছিল তাদের সংসার। এক ছেলে থাকেন প্রবাসে। বাকি ছেলেমেয়েরা এখানেই বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত আছেন। জানা যায়, তার দু’জন স্ত্রী। প্রথম বিয়ের পর বিয়ে করেন এক নওমুসলিম মহিলাকে। এই বিয়ের কারণে সমাজে নানাভাবে হেয়প্রতিপন্ন হন। তার এই মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গত শনিবার তার মৃত্যুর পর ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক আটকিয়ে প্রতিবাদ করেন এলাকাবাসী। পুলিশ থেকে সুষ্ঠু তদন্ত করার আশ্বাসে রাস্তা ছেড়ে দেন তারা।
স্থানীয় মেম্বার মিজানুর রহমান বলেন, বিষয়টি খুব দুঃখজনক। অমানবিক একটি কাজ হয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ভালো লোক ছিলেন। এই ঘটনার আমরা সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।
মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন বলেন, এই ঘটনায় মামলা করেছে তার ছেলে ইয়াসিন আলী। আমরা ভিডিওচিত্র দেখে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছি। বাকিদের গ্রেপ্তারের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। তিনি আরো বলেন, সুরতহাল প্রতিবেদনে দেখা যায়Ñ তার শরীরে অনেক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বিশেষ করে পায়ের আঘাতগুলো ছিল ভয়াবহ।