সিলেট অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে সিলেট চেম্বার। একই সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পরিকল্পনা মন্ত্রী বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে। এই চিঠি দিয়েছেন সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব। সোমবার প্রেরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ২০১০ সালে এয়ারপোর্ট-বাদাঘাট-তেমুখি সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরুর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে সিলেটবাসী দুই লেনের এই সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার দাবী জানান এবং ২০১৬ সালে সেমতে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। পরবর্তীতে উক্ত প্রস্তাবনা সংশোধন করে চার লেন সড়কের সঙ্গে দুটি সার্ভিসলেন যুক্ত করে নতুন করে আবার প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এভাবে প্রায় ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও রাস্তাটির সম্প্রসারণ কাজ আলোর মুখ দেখনি। গত ৮ আগস্ট সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল সড়ক পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে সিলেটের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সিলেট চেম্বারের নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় জনগণ ও গণ্যমান্য নেতৃবৃন্দের সাথে এক সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নেতৃবৃন্দ এয়ারপোর্ট-বাদাঘাট রাস্তা সম্প্রসারণের যুক্তিকথা তুলে ধরে রাস্তাটি ৪ লেন রূপান্তরের কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জোর দাবী জানান। চেম্বারের চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, সিলেট-এয়ারপোর্ট-কোম্পানীগঞ্জ সড়ক কেবল পাথর পরিবহনের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং এ অঞ্চলে ভোলাগঞ্জ শুল্ক স্টেশন রয়েছে, যে স্টেশনটি ভারত থেকে পাথর, চুনাপাথর ইত্যাদি আমদানিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি এখানে পর্যটন কেন্দ্র সাদাপাথর, বিছানাকান্দি, পান্থুমাই ঘিরে পর্যটকদের চাপ বেড়েছে। সিলেট বিভাগীয় আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামও রয়েছে এয়ারপোর্ট এলাকায়। তাছাড়া এয়ারপোর্ট-বাদাঘাট-তেমুখি সড়ক সম্প্রসারণ হলে সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়ক তথা সুবিধবাজার-আম্বরখানা-এয়ারপোর্ট রোডে চাপ কমবে। সন্ধার পর থেকে শতশত ট্রাকের চলাচল শুরু হলে সিলেট জুড়ে দেখা দেয় তীব্র যানজট। স্থবির হয়ে পড়ে শহরের সড়কগুলো। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত নগরীর ভেতরে বেপরোয়া ট্রাক চলাচলের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। গত এবছরে এরকম দুর্ঘটনায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়াও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বর্তমানে উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের কাজ চলমান। কাজ শেষ হলে বিমানবন্দরে বাড়বে আর্ন্তজাতিক ফ্লাইট। ফলে বিমানবন্দরে যাত্রী ও যানবাহনে চাপ বাড়বে। সর্বোপরি সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এয়ারপোর্ট-বাদাঘাট-তেমুখি সড়ক সম্প্রসারণের কাজ দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়নের জন্য সিলেট চেম্বারের পক্ষ থেকে দাবী জানানো হয়েছে। সিলেট প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল এবং পর্যটন নগরী হিসেবে এখানে বিদেশী বিনিয়োগের প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও ভারতের সেভেন সিস্টারের সাথে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা, সিলেট-লন্ডন-ম্যানচেস্টার সরাসরি ফ্লাইট চালু, কোম্পানীগঞ্জে সিলেট হাইটেক পার্ক, গোয়াইঘাটে স্পেশাল ইকোনমিক জোন ও তামাবিলে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর নির্মিত হওয়ায় সিলেটে ব্যবসা-বাণিজ্য ও নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠার প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগানো এবং রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সাথে যোগযোগ সহজতরকরণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ককের ৪ লেনে রূপান্তরের কাজ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সিলেট চেম্বার অব কমার্সের পক্ষ থেকে জোর দাবী জানানো হয়েছে। সিলেটের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা গেলে সিলেট থেকে সরকারের রাজস্ব আয় প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে বলে চেম্বার নেতৃবৃন্দ মনে করেন।