ফুটবলারদের করোনাভাইরাস পরীক্ষা নিয়ে অব্যবস্থাপনার দায় কার- সেটি খুঁজে বের করতে তদন্ত দাবি করেছেন দেশের সাবেক ফুটবলাররা। আর এই অবস্থার জন্য খেলোয়াড়রা মানসিক চাপে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন মনোবিদরা। অবশ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) পুরো ঘটনার দায় মাথায় নিয়ে বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের আশ্বাস দিয়েছে। একই ভুলের পুনরাবৃত্তি যাতে না ঘটে সে ব্যাপারে বার বার টেস্ট করার কথা বলছে তারা। গতকাল দু’টি হাসপাতালে ফুটবলারদের করোনা টেস্ট করিয়েছে বাফুফে।
শুরুতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কোভিড-১৯ টেস্ট করিয়ে ক্যাম্পে যোগ দেন ফুটবলাররা। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় করা টেস্টে একমাত্র পজেটিভ আসে বিশ্বনাথ ঘোষের। রিপোর্ট পজেটিভ আসায় ক্যাম্পে যোগ দেননি এই ডিফেন্ডার।
এরপর ৫ই আগস্ট থেকে বাফুফে নিজেদের উদ্যোগে শুরু করে বাধ্যতামূলক করোনা পরীক্ষা। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম ধাপে ১১ জন এবং ৬ই আগস্ট দ্বিতীয় ধাপে আরো ১২ জনের করোনা পরীক্ষা করানো হয়। দুইদিনে মোট ২৩ জনের মধ্যে ১১ জন করোনা পজেটিভ হন। বাকিদের রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় তাদের পাঠিয়ে দেয়া হয় গাজীপুরের সারাহ রিসোর্টে। খেলোয়াড়রা ক্যাম্পে যোগ দেয়ার একদিন পরই আসে চমকে যাওয়ার মতো খবর! ১১ জন নয়, করোনায় আক্রান্ত মোট ১৮ জন ফুটবলার। পুরো ব্যাপারটা খোঁজ নিতে গিয়ে বাফুফের কর্তাদের হযবরল কাণ্ড উঠে এসেছে। হাসপাতালে করোনা টেস্ট করানো হলেও সেখানে খেলোয়াড়দের কোনো তথ্য দেয়া হয়নি। ফুটবলারদের ফলাফল নেগেটিভ না পজেটিভ সেটা মুঠোফোনে কল করে কিংবা এসএমএস-এ জানিয়ে দেয়া হয়। প্রথম ধাপে যে দুই-তিন জনের নম্বর দেয়া ছিল তাদের হাসপাতাল থেকে জানিয়ে দেয়া হয়। বাকিদের ব্যাপারে কোনো রকম তথ্যই দেয়া হয়নি। অবাক করা বিষয় হলো প্রথম দুইদিনের রিপোর্ট নিয়ে হযবরল অবস্থা হলেও তৃতীয় দিনে করা ৬ ফুটবলারের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। এ বিষয়ে জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক বলেন, ‘এ ঘটনার দায় কার? খেলোয়াড়, বাফুফে না হাসপাতালের। এর একটা সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন। ভবিষ্যতে যেন এ রকম কিছু না হয়। আমি দোয়া করি সব খেলোয়াড়ের ফলাফল যেন নেগেটিভ হয়। তারা যেন খুব দ্রুত মাঠে ফিরতে পারে।’
জাতীয় দলের ডিফেন্ডার তপু বর্মণও প্রত্যাশা করছেন দ্রুতই তারা একসঙ্গে অনুশীলন করতে পারবেন। কারো কোনো ধরনের উপসর্গ না থাকায় তাদের বিশ্বাস দ্রুতই নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে তারা মাঠে নামতে পারবেন। নেগেটিভ-পজেটিভ নাটকের কারণে খেলোয়াড়দের মানসিক অবস্থা কেমন হতে পারে? মনোবিদ তামান্না চৌধুরী বলেন, ‘যারা পজেটিভ হয়েছেন তারা মানসিকভাবে এখন অস্থিতিশীল অবস্থায় আছেন। নেগেটিভ রেজাল্টের ফুটবলারদের অবস্থাও ভালো থাকার কথা নয়। তারা নিজেদের পারফরমেন্স এবং স্বাস্থ্য নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছে। কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের দিকে বিশেষভাবে মনোযোগ দেয়া।’ তবে, আগে কী হয়েছে বা হয়নি সেসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামাতে চায় না বাফুফে। তারা নতুন টেস্টের পরই নেমে পড়তে চায় প্রস্তুতিতে। এ বিষয়ে বাফুফে’র সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ বলেন, ‘রিপোর্ট কেন এমন হয়েছে এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না। এটা সম্পূর্ণ মেডিকেল বিভাগের দায়িত্ব। তবে সামনে আমরা ধারাবাহিকভাবে ফুটবলারদের করোনা টেস্ট করাবো। এর আগের টেস্টে টেকনিক্যাল কারণে কিছু ভুল হয়েছিল। এবার আশা করি তেমন কিছু হবে না।