× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

লেবাননে বিস্ফোরণে নারায়ণগঞ্জের রাশেদ নিহত /মায়ের শেষ আকুতি ছেলের লাশটি একবার ছুঁয়ে দেখতে চাই

অনলাইন

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ থেকে
(৩ বছর আগে) আগস্ট ১১, ২০২০, মঙ্গলবার, ১১:৫৩ পূর্বাহ্ন

দুই হাজার আট সালে হাফিজুর রহমান মারা যাওয়ার আগেই তার পরিবারের হাল ধরেন  মেঝ সন্তান মোঃ রাশেদ। হাফিজুর রহমানের ২ মেয়ে ২ ছেলের মধ্যে রাশেদ দ্বিতীয়। তবে রাশেদের ছোট ভাই শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় রাশেদই ছিলেন হাফিজুর রহমানের একমাত্র অবলম্বন। স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মৃত্যুর আগ মুহুর্ত পর্যন্ত সামান্য বেতনে চাকুরি করতেন তিনি। তাই বাবাকে সাহায্য করতে ওয়েল্ডিংয়ের কাজ শিখেন রাশেদ। এরপর স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করে সে। ৫ বছর আগে ২০১৫ সালে লেবাননে যাওয়ার আগ পর্যন্ত রাশেদ এলাকার ওয়েল্ডিংয়ের দোকানেই কাজ করতেন। বাবার মৃত্যুর পর পরিবারের ভাগ্য আর মায়ের মুখে হাসি ফোটাতে রাশেদ পাড়ি জমান লেবাননে।
এই ৫ বছরে আর দেশে ফেরেননি। সঙ্গের অনেকে করোনা পরিস্থিতির আগে দেশে ফিরলেও পরিবারের স্বচ্ছলতা আনতে আরও দুই বছর পর দেশে ফেরার পরিকল্পনা ছিল তার। ওই দুই বছরে বাবার রেখে যাওয়া ৩ শতাংশ জমিতে মায়ের জন্য একটি বাড়ি করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তার আগেই সব শেষ হয়ে গেছে পরিবারটির। বৈরুতের ঝিমাইজি এলাকার একটি রেস্টুরেন্ট কাজ করতে তিনি। গত মঙ্গলবার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ এক বিস্ফোরণে যে ৫ বাংলাদেশি নিহত হন তাদের একজন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা নন্দলালপুর এলাকার মৃত হাফিজুর রহমানের ছেলে মোঃ রাশেদ। বিস্ফোরণের ঘটনার পর থেকে রাশেদ নিখোঁজ ছিলেন। ঘটনার ৫ দিন পর গত শনিবার দুপুরে বৈরুতের জলদ্বীপ এলাকার হারুন হাসপাতাল থেকে মৃত অবস্থায় তার লাশ সনাক্ত করেন নিহতের খালাতো ভাই জনি। জনিই রাশেদের পরিবারকে ফোন করে তার মৃত্যুর খবর জানায়। নিহত রাশেদের ছোট বোন নাসরিন আক্তার বলেন, বাবা মারা যাবার আগেই রাশেদ ভাই পরিবারের সব দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। আমরা ২ বোন ২ ভাই হলেও রাশেদ ভাই ছিলেন সবার মধ্যে দ্বিতীয়। আর তিন নম্বর ভাই খোরশেদ শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় বাড়িতেই থাকে। ফলে পরিবারের ভরন পোষণের সব দায়িত্ব ছিল রাশেদ ভাইয়ের। রাশেদ ভাইয়ের স্বপ্ন ছিল মায়ের জন্য বাবার রেখে যাওয়া ৩ শতাংশ জমিতে একটি বাড়ি করার। এরপর বাড়ি ফিরে বিয়ে করার পরিকল্পনা ছিল তার। পরিবারের ঘানি টানতে টানতে তার বিয়ে করা হয়নি। আমাদের দু’বোনকে বিয়ে দিয়েছেন। নাসরিন আরও বলেন, লেবাননে গিয়ে ঋণ পরিশোধ করে কোন মতো থাকার জন্য বাবার রেখে যাওয়া জমিতে ২টি রুম করেন। কিন্তু সেই ঘরগুলোরও বেহাল অবস্থা। টিনের চালা ফুটো হয়ে বৃষ্টির পানি ঘরে পড়ে। মা লুৎফুননেছার অবস্থা জানাতে গিয়ে নাসরিন বলেন, আমাদের সবার ভরসার পাত্রকে আল্লাহ নিয়ে গেছেন। কর্মক্ষম ছেলেকে হারিয়ে মা নাওয়া খাওয়া ছেড়েছেন। এখন তার একটিই চাওয়া যেন ছেলের লাশটি একটু ছুঁয়ে দেখতে পারেন। আদরের ছেলের মুখে নিজের হাতটি শেষ বারের মতো একটু বুলিয়ে দিতে পারেন। সরকারের প্রতি রাশেদের বোনের আকুতি যেন এই অসহায় পরিবারটির পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এদিকে গতকাল সোমবার বিকালে নিহত রাশেদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে তাদের ফতুল্লার পাগলার নন্দলালপুরের বাড়িতে ছুটে যান নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারিক। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে তাদের পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর