জানি এর কোনো ক্ষমা হয় না। এর কোনো মাপ হয় না। ক্ষমা চাওয়ার পথও খোলা নেই। কারণ প্রদীপ, লিয়াকত হাসতে হাসতে খুন করতো। আর খুন করে উল্লাস করতো। প্রদীপের জলসা ঘরে আরো কত কি হয়েছে? এক দানবে পরিণত হয়েছিল প্রদীপ। একে একে তার পাপ বালেগ হয়েছে। হে মেধাবী মানব সিনহা, হে স্বাপ্নিক মানব সিনহা। আপনি বুকের তাজা রক্ত দিয়ে দেখিয়ে গেলেন এক অমানুষের পাপের জগতের আদ্যোপান্ত।
প্রদীপ যে পাপকে বেছে নিয়েছেন এর প্রমাণ আরো আগেই তুলে ধরেছিলেন সাংবাদিক ফরিদুল। আর এজন্য কক্সবাজার থেকে তিনি পালিয়ে ঢাকায় এসেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি। সেখান থেকে মিরপুর থানার সহযোগিতায় তাকে ধরে নিয়ে যায় কক্সবাজারে। প্রদীপের টর্চারে তার দুটি চোখ প্রায় হারাতে হয়েছে। তার নখ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে তুলে ফেলা হয়েছে। তাকে বেদম প্রহার করা হয়েছে। এরপর অস্ত্র, মাদক, ইয়াবা দিয়ে মামলা দিয়েছে। এখন সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান কারাগারে। ফরিদুলের ধারাবাহিক রিপোর্টও প্রদীপকে থামাতে পারেনি। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি এসপি। বরং তার কুকর্মের সহযোগী হয়েছেন । প্রদীপের পাপ পরিণত হয়েছে অনেক আগেই। সিনহার বুকের রক্তে তা গোটা দেশে জানাজানি হয়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডকে অস্ত্র বানিয়ে টেকনাফকে বানিয়ে রেখেছে করদ রাজ্য। এ রাজ্যের রাজা গ্রেপ্তারকৃত প্রদীপ। শুধু তাই নয়, তার এত দাপট টেকনাফের ওসি হয়েও উখিয়া, রামু, সদর, মহেশখালীতেও তার হাত সম্প্রসারিত করেছিল। তার তো কোনো ডর ভয় ছিল না। বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা সাজিয়ে নিরীহ মানুষকে মেরে ফেলতো। গৎ বাঁধা গল্পতো আছেই। ইয়াবা কারবারি। অথচ আড়ালে প্রদীপ নিজেই ছিলেন ইয়াবা কারবারিদের গডফাদার। কত মায়ের বুক শূন্য করেছে এই প্রদীপ? সবই কি হিসাবে এসেছে? বলা হচ্ছে দুই শতাধিক মানুষকে গুলি করে মেরেছে। যাদের লাশ পাওয়া গেছে। টেকনাফে তো এমন শত শত ঘরে হাহাকার চলছে। যাদের পরিবারের কর্তা দীর্ঘদিন নিখোঁজ, কারো সন্তান, কারো স্বামী, কারো বাবার খোঁজ নেই। ওরা কোথায়? সময় এসেছে এসব তদন্ত করে দেখার। কত যুবতী সম্ভ্রম হারিয়েছে তার হিসাব কি আছে? টেকনাফের মানুষ এখন প্রদীপ বিহীন অবস্থায় মুখ খুলছেন। আগে ডরে ভয়ে যারা বোবা কান্না করতেন। এখন তারা প্রকাশ্যে এসে চিৎকার করে জানাচ্ছেন তাদের ওপর ঘটে যাওয়া নির্মম ঘটনার কথা। সিনহা, আপনার ওপর ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনায় সবাই সজাগ হয়েছে। আপনি এখন জাতীয় বীর। কিন্তু এমন বীর তো আমরা চাইনি। আপনার স্বপ্ন, সাধ সবই জলাঞ্জলি যাক এটাতো আমরা চাইনি। আপনি দেশের জন্য কাজ করেছেন চাকরি জীবনে। অবসরে গিয়েও আপনি দেশের জন্য হাতে তুলে নিয়েছিলেন ক্যামেরা, লাইট। ডকুমেন্টারি বানিয়ে মানুষকে সজাগ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পশুর দল থামিয়ে দিয়েছে আপনাকে। আপনার মায়ের শূন্য হৃদয়ে এখন শুধু হাহাকার। একই সঙ্গে হাহাকার চলছে গোটা দেশের মানুষের হৃদয়ে। আচ্ছা, কেন আপনি এতো ভালো মানুষ হতে গেলেন? আপনার তো জানা উচিত, এটা এতো ভালো মানুষের দেশ নয়। এখানে প্রদীপরা রয়েছে সর্বত্র। ওদের খপ্পর থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন। আপনি হাত উঁচু করে গাড়ি থেকে নামতে নামতে যখন পরিচয় দিচ্ছিলেন তখনই ওরা আপনাকে গায়েল করে দেয়। আগে থেকেই ওদের প্ল্যান বাস্তবায়ন করে। এরপর দেখেছেন, কীভাবে ওসি এসে আপনার লাশের ওপর লাথি দিয়ে নিজের জেদ মিটিয়েছেন। এখানেই থেমে নেই। এসপির সঙ্গে কথা বলে আপনাকে হজম করার সকল পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করে ফেলেছিল। এ ছাড়া উকিলের সঙ্গে কথা বলে আপনার লাশকে আরো কীভাবে ফাঁসানো যায় সে বন্দোবস্তও করে ফেলেছিল প্রায়। কিন্তু ওই যে বললাম, প্রদীপের পাপ বালেগ হয়েছে। এবার আর তার পার পাওয়ার কোনো উপায় ছিল না। তাইতো শেষ পর্যন্ত আর রক্ষা পায়নি। এখন একে একে সব কাহিনী বেরিয়ে আসছে। প্রদীপ নামের ঘৃণিত ওই ব্যক্তির ঘৃণিত সকল কাজ এখন সবার সামনে। প্রিয়, অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ, আপনার জন্য আজ গোটা দেশ কাঁদছে। আপনার জন্য আজ গোটা দেশ শোকাহত। আপনার ওপর জল্লাদ প্রদীপের এ আক্রোশ কেন? এটা তদন্তে বেরিয়ে আসবে। ওর পাপের বিচারও হবে। কিন্তু আপনার কাছে তো আমাদের ক্ষমা চাওয়ার পথও খোলা নেই। কারণ আমরা আপনাকে বাঁচাতে পারিনি জল্লাদের হাত থেকে। আমরা আপনার স্বপ্নকে অঙ্কুরেই বিনষ্ট করে দিলাম। আমরা আপনার আশা, ভালোবাসাকে গলাটিপে হত্যা করলাম। আমরা আপনার ভালোবাসার দাম দিতে পারলাম না। তবুও বলবো, আমাদের ক্ষমা করুন প্লিজ। ওপারে সদা সর্বদা ভালো থাকুন।