× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপ / ডেঙ্গু ঝুঁকিতে ঢাকার ২৫ ওয়ার্ড

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
১৪ আগস্ট ২০২০, শুক্রবার

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২৫টি ওয়ার্ড এখনো ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। এডিস মশার পজেটিভ প্রজনন স্থানসমূহের শতকরা হার বহুতল ভবনে ৫১ দশমিক ৩৪ শতাংশ, নির্মাণাধীন ভবনে ২০ দশমিক ৩২ শতাংশ এবং বস্তি এলাকায় ১২ দশমিক ৮৩ শতাংশ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির আওতায় এই জরিপ চালানো হয়। গত ১৯ থেকে ২৮শে জুলাই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় চালানো বর্ষাকালীন এই জরিপের ফলাফল গতকাল বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ানস অ্যান্ড সার্জনস মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালায় প্রকাশ করা হয়। দুই সিটির মোট ১০০টি এলাকায় (ডিএনসিসি ৪১টি এবং ডিএসসিসি ৫৯টি), ২ হাজার ৯৯৯টি বাড়িতে ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসের ভেক্টরের ওপর মৌসুমি জরিপ কাজ পরিচালিত হয়।

সেখানে বলা হয়, উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯টি ও দক্ষিণের ১৬ ওয়ার্ড এখনো ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্বের সূচক ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। মশার লার্ভার উপস্থিতি হিসাব করা হয় ব্রুটো ইনডেক্স বা সূচকের মাধ্যমে।
জরিপে প্রতি একশ’ প্রজনন উৎসের মধ্যে ২০টি বা তার বেশিতে যদি এডিস মশার লার্ভা বা পিউপা পাওয়া যায়, তাহলে সেটাকে ঝুঁকিপূর্ণ উপস্থিতি বলা যায়। ঢাকা উত্তরের ১০, ১১, ১৭, ১৯, ২১, ২৩, ২৪, ২৯, ৩২ ওয়ার্ডে এবং দক্ষিণের ২, ৪, ৮, ৯, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৮, ২৫, ৩৪, ৪০, ৪১, ৪৫ এবং ৫১ নম্বর ওয়ার্ডে এডিস মশার উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে জরিপে। উত্তরে ১৭ নম্বর (খিলক্ষেত, কুড়িল, কুড়াতলী, জোয়ারসাহারা, অলিপাড়া (আংশিক), জগন্নাথপুর, নিকুঞ্জ-১ ও ২, এবং টানপাড়া) এবং দক্ষিণে ৫১ নম্বর ওয়ার্ড (মীর হাজারীবাগ, ধোলাইপাড় ও গেণ্ডারিয়া) সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানানো হয় প্রতিবেদনে। ডিএনসিসির ২৯ এবং ডিএসসিসির ৩৮টি ওয়ার্ডের ব্রুটো ইনডেক্স ১০ এর বেশি। দুই সিটির ৫টি ওয়ার্ডে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়নি।

সর্বোচ্চ ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই) ৪৩ দশমিক ৩ পাওয়া গেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১১নং ওয়ার্ডের কল্যাণপুর, পাইকপাড়া ও মধ্য পাইকপাড়া এলাকায় এবং বিআই ৪০ পাওয়া গেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৭নং ওয়ার্ডের খিলখেত, কুড়িল ও নিকুঞ্জ এলাকায় এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৫১নং ওয়ার্ডের মীর হাজারীবাগ, ধোলাইপাড় ও গেণ্ডারিয়া এলাকায় সর্বোচ্চ বিআই ৪০ পাওয়া গেছে। জরিপে সর্বাধিক পজেটিভ কনটেইনার সমূহের মধ্যে পানিপূর্ণ পাত্র ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ, প্লাস্টিক ড্রাম ১২ দশমিক ১৭ শতাংশ, প্লাস্টিক বালতি ৯ শতাংশ, ব্যবহৃত পরিত্যক্ত টায়ার ৮ দশমিক ৫২ শতাংশ, ফুলের টব এবং ট্রে ৮ দশমিক ২৭ শতাংশ, পানির ট্যাংক ৬ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ, মাটির পাত্র ৫ দশমিক ১১ শতাংশ, প্লাস্টিক বোতল ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ, টিনের বালতি ৩ দশমিক ১৬ শতাংশ এবং প্লাস্টিক মগ ২ দশমিক ৯২ শতাংশ সবচেয়ে বেশি পাওয়া গিয়েছে।

জরিপে প্রাপ্ত এডিস মশার পজেটিভ প্রজনন স্থানসমূহের শতকরা হার বহুতল ভবনে ৫১ দশমিক ৩৪ শতাংশ, নির্মাণাধীন ভবনে ২০ দশমিক ৩২ শতাংশ, বস্তি এলাকায় ১২ দশমিক ৮৩ শতাংশ, একক ভবন সমূহে ১২ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং পরিত্যক্ত জমি সমূহে ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ পরিলক্ষিত হয়। জরিপে প্রাপ্ত এডিস মশার পজেটিভ কনটেইনারে (পানির উপস্থিতিপূর্ণ) শতকরা হার (পজেটিভ প্রজনন স্থান অনুযায়ী)-বহুতল ভবনে ৫০ দশমিক ৬১ শতাংশ, নির্মাণাধীন ভবনে ২১ দশমিক ১৭ শতাংশ, বস্তি এলাকায় ১৩ দশমিক ১৪ শতাংশ, একক ভবন সমূহে ১২ দশমিক ৪১ শতাংশ ও খালি জমি সমূহে ২ দশমিক ৬ পাওয়া যায়। বিজি সেন্টিনেল ট্রাপের মাধ্যমে সংগৃহীত পূর্ণাঙ্গ এডিস মশার ঘনত্বের হার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ১ দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ পরিলক্ষিত হয়। জরিপে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জরিপকৃত স্থানসমূহের ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই) = ০, যা ৮টি স্থানে- (ডিএনসিসি ৩টি এবং ডিএসসিসি ৫টি), বিআই < ২০, যা ৬৭টি স্থানে (ডিএনসিসি ২৯টি এবং ডিএসসিসি ৩৮টি), বিআই > ২০, যা ২৫টি স্থানে (ডিএনসিসি ৯টি, ডিএসসিসি ১৬টি) এবং হাউজ ইনডেক্স (এইচআই) = ০, যা ৮টি স্থানে (ডিএনসিসি ৩টি এবং ডিএসসিসি ৫টি) এবং এইচআই > ১০, যা ৬৭টি স্থানে (ডিএনসিসি ২৯টি এবং ডিএসসিসি ৩৮টি) পরিলক্ষিত হয়। গত তিন বছরে (২০১৮, ২০১৯ ও ২০২০) জরিপে ডেঙ্গু জ্বরের প্রধান বাহক এডিস এজিপ্টাই এবং এডিস এলবোপিকটাস-এর গড় অনুপাত যথাক্রমে ৯৭ শতাংশ ও ৩ শতাংশ পাওয়া গেছে।
জরিপ শেষে সিদ্ধান্ত হয় যে, এডিস মশার পরবর্তী জরিপকার্য হতে ডেঙ্গু ভাইরাসের সেরোটাইপ সার্ভিলেন্স ব্যবস্থা যুক্ত হবে। সকল মন্ত্রণালয়কে তাদের অন্তর্ভুক্ত স্থাপনাসমূহে এডিস মশা প্রজননস্থল বিনাশের ওপর নজরদারি আরো বৃদ্ধি করতে হবে। ডেঙ্গু বিষয়ক অনলাইন ট্র্যাকিং সিস্টেমের কাজে এমআইকে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেয়ার কথা বলা হয়।

মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু গত বছর বাংলাদেশের বড় মাথাব্যথা হয়ে উঠেছিল। সরকারি হিসাবে পুরো বছরে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হন, মৃত্যু হয় ১৭৯ জনের। তবে দেশের সব হাসপাতালে ভর্তি এবং বাসায় থাকা রোগীদের তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে না আসায় প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হওয়ার কথা। এরপর চলতি বছর বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রকোপ বাংলাদেশে দেখা দেয় মার্চের শুরুতে। এই সংকটের সময়ে ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরে যেন আবার ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বাড়তে না পারে- সে বিষয়ে উচ্চ আদালত থেকেও সিটি করপোরেশনগুলোকে সতর্ক করা হয়। এদিকে চলতি বছরে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৩৭৯ জন রোগী বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বর্তমানে ভর্তি আছেন ১৩ জন। বাকিরা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় একজন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত মৃত্যুর কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহনীলা ফেরদৌসীর সভাপতিত্ব অনুষ্ঠিত সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) জুয়েনা আজিজ প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও আরো উপস্থিত ছিলেন এমআইএস’র পরিচালক ডা. মো. হাবিবুর রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিসবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. আফসানা আলমগীর খান।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর