× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় বানভাসিরা

বাংলারজমিন

চিলমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
১৪ আগস্ট ২০২০, শুক্রবার

নেমে গেছে বানের পানি শুকাতে শুরু করেছে বন্যার্ত এলাকাগুলো কিন্তু শুকায়নি বানভাসিদের চোখের জল। দুঃখ-কষ্ট আর দুর্ভোগ সব মেনে নিয়ে বানভাসিরা নেমে পড়েছে জীবনযুদ্ধে। শুরু করেছে মেরামত, চেষ্টা চলছে ঘুরে দাঁড়ানোর। ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন তারা। বন্যা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরার কবলে প্রায় সময় কোনো কোনো দুর্যোগের কবলে থাকতে হয় এই অঞ্চলের মানুষকে আর ভাঙন যেন লেগে আছে আঠার মতো পিছু ছাড়ছেই না। ভাঙন কেড়ে নেয় বসতভিটা, বন্যা কখনো ভাসিয়ে নেয় সাজানো সংসার। খরা, কখনো অতিবৃষ্টি আবার বানে কেড়ে নেয় কৃষকের ফসল, ভাসিয়ে নেয় সম্পদ আর এনে দেয় চোখের জল। এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।
অনেকেই সর্বস্বান্ত করে বিদায় নিয়েছে বন্যা। আবার ভাঙন কেড়ে নিয়েছে অনেকের মাথা গোজার ঠাঁইটুকু। বন্যার পানি আর ব্রহ্মপুত্রের ভাঙন গ্রামের পর গ্রাম রাস্তা, সড়ক, গাছপালাসহ বাড়িঘর দিয়েছে ল-ভ- করে। রেখে গেছে ক্ষতচিহ্ন। চোখের জলই যেন এখন অনেকের নিত্যসঙ্গী। তবুও থেমে নেই বানভাসি ও ভাঙন কবলিত মানুষ, জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েছেন তারা। তারা হার মানতে চান না। নেই শক্তি, নেই সম্বলÑ তবুও চেষ্টা করছেন ঘুরে দাঁড়ানোর।
সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার সর্বনাশী খেলায় নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার হাজার হাজার পরিবার। বিভিন্ন উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়া পারিবারগুলো নিজ নিজ ঘরবাড়ি মেরামত করতে ব্যস্ত সময় পার করলেও বন্যা ও ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব পরিবারগুলো রয়ে গেছে বাঁধ, কেঁচি সড়কসহ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে। কথা হয় বাঁধে আশ্রয় নেয়া মেহেনা (৬০) সঙ্গে। তিনি বলেন, বানের পানি আমার সাজানো গোচানো সংসার তছনছ করে দিয়েছে। আমার স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে চলে গেছে বাড়িঘরÑ ঠিক করবো কোনো উপায় নেই। রমনা সাতঘড়িপাড়া বাঁধে মৃত ধজবুদ্দির স্ত্রী আলেয়া বেওয়ার (৭৫)। বাঁধ সংস্কারের সময় ভেঙে দেয়া হয় তার ঘরটুকু। আশ্রয় নিয়েছিল বাঁধের নিচে। কিন্তু বন্যা সেটুকু দিয়েছে তছনছ করে। সোলেখা বেগম স্বামী-সন্তান নিয়ে তার বসবাস। স্বামী গোলাপ উদ্দিন দিনমজুর। করোনার থাবায় ছিল গৃহবন্দি। তবুও চলতো টুকটাক কাজ। অভাব থাকলেও ছিল সুখ। কিন্তু গত বন্যায় তছনছ করে দিয়েছে তার সাজানো সংস্যার। বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে ঘর। ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই আবারো বন্যার হানায় দিশাহারা। এর উপর বন্যায় হাতে কাজ না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে রয়েছে সোলেখা গোলাপ উদ্দিন এর মতো অনেকে। পেটের খিদা মিটাতে ইতিমধ্যে অনেকেই বাড়িঘর বিধ্বস্ত রেখেই বেরিয়ে পড়েছেন কাজের সন্ধানে। অনেকে পাড়ি দিয়েছেন ঢাকায়। ঘরবাড়ি জমি হারিয়ে বিপাকে পড়েছেন মহিনুনেছা এখনো রয়েছেন আশ্রয়ণ কেন্দ্রে।  কথার প্রসঙ্গে আলেয়া বেওয়া অভিযোগ করে বলেন আপনাগো কি হইবে খালি ফটোক তোলেন আর নাম নিয়ে যান কিছু তো দেন না? শুধু আলেয়া, সোলেখা, গোলাম উদ্দিন, মহিনুনেছা নয় এদের মতো হাজার হাজার পরিবার বন্যা আর ভাঙনের শিকার হয়ে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছেন। এরপরও অনেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। চালিয়ে যাচ্ছে তাদের জীবনযুদ্ধ। তাদের চোখে জল শরীরেই নেই শক্তি কিন্তু হারিয়ে যায়নি তাদের মনোবল। তাদের এখন একটাই দাবিÑ ত্রাণ দিয়ে নয় কাজ দিয়ে সহযোগী করা হোক। তবে এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে ছিল শ্রমজীবী মানুষ জন। বন্যার পানি নেমে গেলেও দুর্গত এলাকার লোকজনের হাতে কাজ না থাকায় খাদ্য সংকটে পড়েছে তারা।
 
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর