× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

সৈয়দ আশরাফের সমাধিতে অশ্রুসজল ছোটবোন লিপি

বাংলারজমিন

স্টাফ রিপোর্টার, কিশোরগঞ্জ থেকে
১৪ আগস্ট ২০২০, শুক্রবার

রাজনীতিতে সততা আর শিষ্টতার অনিবার্য আইকন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও প্রেসিডিয়াম সদস্য, সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম টানা পাঁচবার কিশোরগঞ্জ সদর আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের ১২ই জুনের নির্বাচনে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়েই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এরপর থেকে তার জয়রথ আর কখনো থামেনি। ২০০১ সালের নির্বাচনে দলের চরম ভরাডুবির সময়েও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এই আসন থেকে টানা দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালের ২৯শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও কিশোরগঞ্জ সদর ও হোসেনপুর উপজেলার মানুষ আস্থা রেখেছেন প্রিয় নেতা সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অবিস্মরণীয় নেতৃত্বের প্রতি। যে কারণে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থাতেও ২০০৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হন রাজনীতির কবি- সৈয়দ আশরাফ। নির্বাচনে বিজয়ী করা প্রিয় নেতাকে নিজেদের মাঝে ফিরে পেতে উন্মুখ ছিলেন কিশোরগঞ্জ-হোসেনপুরের মানুষ। কিন্তু থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ছয় মাস মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে শপথ নেয়ার আগেই ২০১৯ সালের ৩রা জানুয়ারি তিনি পাড়ি জমান না ফেরার দেশে।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে অতিকথন ও ক্ষমতার দম্ভ তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। একজন উদার পশ্চিমা গণতান্ত্রিক রাজনীতিবিদের মতোই তিনি নীরবে নিভৃতে পথ হেঁটেছেন। তদবিরবাজ, মতলববাজ, সুবিধাবাদীরা যেমন তার কাছে ভিড়তে পারেননি, তেমনি দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারে ন্যূনতম কলঙ্কের ছিটেফোঁটাও তার গায়ে লাগেনি।
পাঁচবারের সংসদ সদস্য সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে সংসদে একবারই মাত্র বিরোধী দলের আসনে বসতে হয়েছে। বাকি তিনবারই তিনি বসেছেন সংসদের ট্রেজারি বেঞ্চে। এই তিন সরকারে মন্ত্রীত্ব ছাড়াও টানা দুইবার তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। দফায় দফায় মন্ত্রী এবং দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকার পরও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গড়ে তুলেননি সম্পদের পাহাড়। বরং তার সম্পদ দিন দিনই কমেছে। পৈতৃক বাড়ি ছাড়া তার ব্যক্তিগত কোনো বাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট কিছুই ছিল না। এমনকি সরকারি সুবিধা পরিহার করে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য তিনি বিক্রি করেছিলেন উত্তরাধিকার হিসেবে পাওয়া গুলশানের বাড়িটি। গুলশানে জাতীয় চার নেতার নামে বরাদ্দ করা প্লট থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে হিসেবে তিনি ২ শতাংশ জমি পেয়েছিলেন। স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য সেই জমিও তিনি বিক্রি করে দিয়েছিলেন।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মৃত্যুতে কিশোরগঞ্জ-১ আসনে পুনঃনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে ভাইয়ের আসনে প্রার্থী হন ছোট বোন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রতি সম্মান দেখিয়ে পুনঃনির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমাদানকারী অপর দুই প্রার্থীই তাদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিলে একক প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। সম্প্রতি তিনি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে বনানীতে শায়িত বড় ভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কবরস্থানের উন্নয়ন করেছেন। এরমধ্য দিয়ে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কবরস্থানের সংরক্ষণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
কবরস্থানের সংরক্ষণ কাজ শেষ হওয়ার পর গতকাল ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি এমপি ছুটে যান বনানীতে শায়িত বড় ভাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের কাছে। কবর জিয়ারত করে প্রয়াত এই জননেতার রুহের মাগফেরাত কামনায় প্রাণভরে দোয়া করেন আদরের ছোটবোন লিপি। একপর্যায়ে ভাইয়ের সমাধিপাশে অশ্রুসজল হয়ে ওঠেন সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি এমপি। ভাইয়ের প্রতি বোনের এই অকৃত্রিম আবেগ, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা ছুঁয়ে যায় উপস্থিত সবাইকে।
এ সময় প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছোট ভাই অধ্যাপক ড. সৈয়দ শরীফুল ইসলাম, ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি এমপি’র স্বামী অধ্যাপক ড. আর.জি.এম. হাসান, প্রয়াত মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের এপিএস এ.কে.এম সাজ্জাদ হোসেন শাহীন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রাশেদুল মাহমুদ রাসেলসহ উপস্থিত অন্যরাও অশ্রুসজল হন। বনানী কবরস্থানেই শায়িত রয়েছেন প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের বাবা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম ও মা সৈয়দা নাফিসা ইসলাম।

 
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর