আন্তর্জাতিক আহ্বানকে তোয়াক্কা না করে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত তরুণ রেসলার নাভিদ আফকারির (২৭) মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে ইরান। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, ২০১৮ সালে যখন ইরানে সরকার বিরোধী আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে, তখন একজন সিকিউরিটি গার্ডকে হত্যার অভিযোগে নাভিদকে মৃত্যুদণ্ডের শাস্তি দেয়া হয়। তবে নাভিদের দাবি, এই হত্যায় স্বীকারোক্তি আদায়ে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। তার মৃত্যুদণ্ডকে হাস্যকর ন্যায়বিচার বলে আখ্যায়িত করেছে মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। আফকারির একটি রেকর্ড করা বক্তব্য ফাঁস করেছে অ্যামনেস্টি। তাতে তাকে বলতে শোনা যায়, যদি আমাকে ফাঁসি দেয়া হয়, তাহলে আপনাদের জানিয়ে যাচ্ছি আমি নিরাপরাধ। আমি সব সময় আমার শক্তি ব্যবহার করে আমার কথা বলার চেষ্টা করেছি। সেই আমাকে ফাঁসি দেয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়, দক্ষিণের শহর সিরাজে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে আফকারির।
তার আইনজীবী হাসান ইউনূসি বলেছেন, ইরানের আইন অনুযায়ী, ফাঁসি কার্যকরের আগে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার নিয়ম আছে। কিন্তু নাভেদ আফকারিকে সেই সুযোগ দেয়া হয়নি। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, তার মৃত্যুদণ্ড দেয়ার জন্য আপনাদের কি এতোটাই তাড়া ছিল যে, নাভিদকে তার আত্মীয়দের সঙ্গে জীবনের শেষ সাক্ষাৎটা করতে দেয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, নাভিদ আফকারির ফাঁসি বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল থেকে আহ্বান জানানো হয়েছিল। এর মধ্যে ছিলেন বিশ্বের ৮৫ হাজার অ্যাথলেটের একটি ইউনিয়ন। ওয়ার্ল্ড প্লেয়ার্স এসোসিয়েশন বলেছে, ২০১৮ সালের ওই বিক্ষোভে অংশ নেয়ার কারণে অন্যায়ভাবে তাকে টার্গেট করেছে কর্তৃপক্ষ। মৃত্যুদণ্ডের আগে সারা বিশ্বের স্পোর্টসের পক্ষ থেকে তার ফাঁসি মওকুফ করার আহ্বান জানানো হয়। তার প্রাণভিক্ষার আহ্বান জানান যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, শুধু সরকারবিরোধী বিক্ষোভে রাস্তায় অংশ নেয়ার জন্য এই রেসলারকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। এই মৃত্যুদণ্ডকে খুবই বেদনার খবর বলে আখ্যায়িত করেছে ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)। তারা নাভিদ আফকারির পরিবারের সদস্য ও বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছে। এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, সারা বিশ্বের অ্যাথলেটদের পক্ষ থেকে এবং আইওসির আহ্বান কোনো লক্ষ্য পূরণ করতে পারেনি। এটা অত্যন্ত গভীর হতাশার।
নাভিদ আফকারির ভাই ভাহিদ ও হাবিবকে এই মামলায় যথাক্রমে ৫৪ ও ২৭ বছরের জেল দিয়েছে সরকার। ইরানের মানবাধিকার বিষয়ককর্মীরা এ তথ্য দিয়েছে।