× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শ্রীমঙ্গলে ১৯ দিনেও উদ্‌ঘাটন হয়নি স্বাক্ষর হত্যার রহস্য

বাংলারজমিন

শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, শনিবার

কলেজছাত্র স্বাক্ষরের মা স্কুলশিক্ষিকা মিনা রানী দেবের কান্না কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। ছেলে স্বাক্ষরের টেবিলের বইপত্র গোছানো ও ছেলের ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে প্রতিদিন কান্নায় ভিজে যায় তার শাড়ির অঁাঁচল। আহাজারি-আর্তনাদ তার আদরের ছেলেকে হারিয়ে। কারো সান্ত্বনাই মানছেন না তিনি। আর স্বাক্ষরের বাবা শিক্ষক কল্যাণ দেব ছেলের বিছানা-বালিশ আগলে ধরে অঝোর ধারায় কাঁদছেন। সারা বাড়ি যেন কান্নার মাতম বইছে। মেধাবী শিক্ষার্থী স্বাক্ষর দেব শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের এইচএসসির দ্বিতীয় বর্ষের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তার বাবা মা দু’জনই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।
শ্রীমঙ্গল শহরতলির ইছবপুর গ্রামেই তাদের বাড়ি। দুই ছেলে সন্তানের মধ্যে স্বাক্ষর দেব সবার বড়।
পরিবার ও স্বজনরা জানান, ঘটনার দিন ২৯শে আগস্ট বিকাল ৪টার দিকে মোবাইলে ফোন এলে সে তার মাকে আসছি বলে বাবার মোটরসাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যায়। এরপর তার আর খোঁজ মেলেনি। পরদিন ৩০শে আগস্ট ভোরে লাখাইছড়া চা-বাগানের একটি নির্জন স্থানে তার মরদেহ পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে কল্যাণ দেব পরদিন পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড উল্লেখ করে শ্রীমঙ্গল থানায় অজ্ঞাতনামা পরিচয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। হত্যা মামলার ১৯ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা এখনো কোনো ক্লু জানা যায়নি। স্বাক্ষরের বাবা কল্যাণ দেব জানান, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি যে তার ছেলে আত্মহত্যা করবে। আর আত্মহত্যা করতে ১২ কিলোমিটার যাওয়ার দরকার ছিল না। তিনি জানান, কে বা কারা পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করেছে। তিনি তার ছেলের কথিত প্রেমিকাকে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করলেই প্রকৃত তথ্য জানা যাবে বলে দাবি করছেন। কল্যাণ দেব বলেন, ‘জানা যাচ্ছে মেয়েটির সঙ্গে স্বাক্ষরের গভীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল, এই সম্পর্ক নিয়ে টানাপড়েনও চলছিল।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, স্বাক্ষরের নিখোঁজ হওয়ার দিন ২৯ আগস্ট বিকাল ৪টা ৫২ মিনিটে শহরের কালিঘাট রোডের একটি সিসি ক্যামেরায় তাকে একাই মোটরসাইকেল চালিয়ে যেতে দেখা যায়। তার ফোন রেকর্ড অনুযায়ী বিকাল ৫টা ১৯ মিনিটের দিকে তার অবস্থান শনাক্ত হয় শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে লাখাইছড়া চা-বাগান। যেখানে তার মৃতদেহ পাওয়া যায়।
সেখানে পৌঁছে সে সিলেটের বাসিন্দা তার এক প্রেমিকার সঙ্গে দুই দফা ফোনে কথা বলে। ফোনালাপে স্বাক্ষর তার কাছে জানতে চায়- এমোনিয়াম ফসফেট খেলে কি হবে? এ সময় সে গুগলে সার্চ দিয়ে এ বিষয়ে জেনে উদ্বিগ্ন হয়ে একটি শর্ট ম্যাসেজ করে জানায়, ‘স্বাক্ষর ওটা ইঁদুর মারার বিষ, খাওয়া তো অনেক দূর, বাতাসে মিশেও ক্ষতিকর গ্যাস প্রডাকশন হয়’। এরপর স্বাক্ষর শ্রীমঙ্গল মাস্টারপাড়া এলাকার তার আরেক প্রেমিকার সঙ্গে ৫ মিনিট কথা বলে।
পুলিশ জানায়, এ সময় স্বাক্ষর তার প্রেমিকার সঙ্গে ‘যেখানে যার কাছে গেছো- ভালো থাক, তাকে সুখী করো। এছাড়া, আমার সঙ্গে প্রতারণা করলেও তার সঙ্গে প্রতারণা করো না- তোমাকে চিরমুক্তি দিলাম’ এ জাতীয় কথাবার্তা হয়। এরপর সিলেটের বান্ধবী ফোন দিলে স্বাক্ষর রিসিভ করলেও কোনো কথা বলতে পারেনি। পরদিন সকাল ৬টার দিকে চা বাগানের শ্রমিকদের থেকে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে স্বাক্ষরের মরদেহ উদ্ধার করে।
এ সময় সেখান থেকে ছড়িয়ে ছিটায়ে থাকা এমোনিয়াম ফসফেট, ঘুমের ওষুধের স্ট্রিপ ও তার ব্যবহৃত মোটর সাইকেল পাওয়া যায়। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া গেলে বোঝা যাবে এটি হত্যাকাণ্ড না ‘আত্মহত্যা’। মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ সুপার মো. ফারুক আহমেদ জানান, এ মামলার তদন্তে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। তবে তদন্তের স্বার্থে কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর