পাঁচবিবি-সালাইপুর সড়কের ১১ কিলোমিটার অংশ সংস্কারের নামে চলছে হরিলুট। পাথরের পরিবর্তে দেয়া হচ্ছে নিম্নমানের খোয়া। এদিকে, নিম্নমানের সামগ্রী সরিয়ে নিতে ঠিকাদারকে চিঠি দেয়ায় কাজ বন্ধ রেখেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, আর এতে সর্বসাধারণের ভোগান্তি পৌঁছেছে চরম পর্যায়ে।
এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গ্রামীণ সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় পাঁচবিবি থেকে সালাইপুর রাস্তার ১০.৬ কিলোমিটার অংশের কাজ পেয়ে ২০১৯ সালের ২৯শে আগস্ট এলজিইডি’র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ময়েন উদ্দীন এবং মেসার্স মাসুমা বেগম। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে কার্যাদেশ পায় তারা। চুক্তি অনুযায়ী ৯ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে এই কাজে ১৮ ফিট চওড়া এই রাস্তার পুরাতন পিচ তুলে গুড়া করে রাস্তায় দিতে হবে এবং তার উপর খোয়া ও বালুর মিশ্রন দিয়ে শক্ত বেড তৈরি করতে হবে। এরপর ৪০মিমি পাথরের কার্পেটিং করতে হবে। গত মার্চ মাস থেকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রাস্তার পিচ তোলার কাজ শুরু করে এবং শক্ত বেড তৈরি করে কিছু অংশে।
এই কাজে পাথরের ব্যবহার কমিয়ে নিম্নমানের ইটের খোয়া দিয়ে কাজ শুরু করলে এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা অভিযোগ করে সেই সঙ্গে এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী কাজের তদারকিতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার ও পিচের পাথর ব্যবহার না করায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দুদফা চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয় নিম্নমানের খোয়া সরিয়ে পাথর দিয়ে তার উপর ভালোমানের খোয়া ব্যবহার করতে বলা হয় কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চিঠি পেয়ে কাজ বন্ধ রাখেন। নির্বাহী প্রকৌশলী পাঁচবিবি উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল কাইয়ুমকেও ভালো কাজ বুঝে নেয়ার জন্য চিঠি দেন কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। নির্ধারিত সময়ে কাজ না করায় জনদুর্ভোগ এখন চরমে পৌঁছেছে। খানাখন্দে ভরা আর উঁচু নিচু থাকায় যানবাহন চলাচল নিয়ে বেকায়দায় চালক ও যাত্রীরা। একদিকে যেমন গাড়ি বিকল হচ্ছে তেমনি অসুস্থ হয়ে পড়ছে সাধারণ জনগণ আবার সময়ও বেশি লাগছে যাতায়াতে।
পাঁচবিবি উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল সহীদ মুন্না জানান, কাজের মান অত্যন্ত খারাপ হওয়ায় তিনি এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী এবং জেলা প্রশাসককে চিঠি দিয়েছেন। তিনি জানান, সরকার টাকা খরচ করে জনগণের সেবার জন্য রাস্তা ভালো করছেন আর ঠিকাদারের গাফিলতিতে কাজের মান খারাপ হবে এবং জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পাবে এটা মেনে নেয়া যায়না। তিনি দ্রুত এই রাস্তায় ভালোমানের কাজ শুরু করার দাবি জানান।
পাঁচবিবি পৌর মেয়র হাবিবুর রহমান হাবিব জানান, এই রাস্তার জন্য সরকার এবং দলের ভাবমূর্তি খারাপ হচ্ছে। তিনি বলেন যতো দ্রুত সম্ভব এই রাস্তার কাজ শুরু করতে হবে। তা না হলে সাধারণ জনগণ আন্দোলনে নামবে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, এই রাস্তার কাজে কোনো গাফিলতি হয়নি। সবকিছু ঠিকঠাক মতো হচ্ছে। রাস্তার পাথর সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, সাধারণ জনগণ কিছু পাথর নিয়ে গেছে এবং ঠিকাদারের আর্থিক সংকটের কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলীর গাফিলতি প্রমাণিত হওয়ায় নির্বাহী প্রকৌশলী তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছেন। কাজ বন্ধ এবং নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে জয়পুরহাট এলজিইিডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী খায়রুল ইসলাম জানান, উপজেলা প্রকৌশলী এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে নিম্নমানের মালামাল সামগ্রী অপসারণ করে চুক্তি অনুযায়ী কাজ করার জন্য দুদফা চিঠি দিলেও কাজ শুরু করছে না। তিনি বলেন, পাঁচবিবি উপজেলা প্রকৌশলী এবং এলজিইডি’র সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী রাস্তার ব্যবহারের জন্য যে মালামালের নমুনা পাঠিয়েছেন তার ল্যাবে পরীক্ষা করে নিম্নমানের প্রমাণিত হয়েছে।
এদিকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি মাসুদ হোসেন সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঈদ এবং বর্ষার কারণে কাজ বন্ধ রেখেছেন তারা। সব প্রক্রিয়া শেষ করে খুব দ্রুত কাজ শেষ করবেন তারা।