× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আ/ম/ব/য়া/ন /একটি স্বপ্নের চাকরি এবং...

মত-মতান্তর

সাজেদুল হক
২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, সোমবার

জাতি হিসেবে আমরা সম্ভবত ঈর্ষাপরায়ণ। একজন মানুষ অসামান্য সফলতা দেখিয়েছে। কোথায় সবাই মিলে বাহবা দিবে তা না! সবাই মশগুল তার সমালোচনায়। নাকি এটা এক ধরনের আফসোসও! বই, পুস্তক পড়ে, মোটিভেশনাল বক্তৃতা শুনে তো জীবনে এতোটা সফল হওয়া যায় না।

তার কাহিনী এরইমধ্যে মোটামুটি সবার জানা হয়ে গেছে। ‘ভদ্রলোকের’ নাম আবদুল মালেক। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পুলের একজন গাড়ি চালক। তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী।
১৯৮২ সালে তার চাকরি জীবন শুরু হয়েছিল। এরপর আস্তে আস্তে জীবনটা তার পাল্টাতে থাকে। আর এখন এমন সম্পদশালী তিনি যা অনেকের কল্পনারও বাইরে। ঢাকায় সাত তলা দু’টি ও ১০ তলা একটি বাড়ি। একটি বাড়িতেই ২৪টি ফ্ল্যাট। আর বেশি বিবরণ দিতে চাই না! আমরা কেউইতো আসলে ঈর্ষার বাইরে নই।

অবশ্য আবদুল মালেকরা একেবারে অভিনব কোনো চরিত্র নয়। মাঝে মাঝেই এমন সম্পদশালী তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের কাহিনী সামনে আসে। সংবাদপত্রে বড় বড় হেডলাইন হয়। একমুখী টিভি চ্যানেলে হয় বিস্তর বিশ্লেষণ। আবদুল মালেক, আবজালরা কীভাবে নিজেদের টাকার মেশিনে পরিণত করেন তা সবার জানা। কারা তাদের এই মেশিন হতে সহযোগিতা করে, মেশিনের উৎপাদনের বড় অংশ কারা নিয়ে যায় তাও সহজে অনুমান করা যায়। ড্রাইভারদের নাম তবু মাঝে-মধ্যে আলোচনায় আসে। কখনো কখনো তাদের কারাগারেও যেতে হয়। কিন্তু স্যারেরা প্রায় সব সময়ই থেকে যান আড়ালে। কিংবা তাদের স্যারেরা। বাংলাদেশে তা নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না, গবেষণা হয় না।

কোটিপতি ক্লাবে সদস্য সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে। বাড়ছে ভিনদেশি বেগমপাড়ায় বাংলাদেশি ভাবিদের প্রভাব-প্রতিপত্তি। প্রভাবশালী মানুষেরা বিপুল অর্থ পাচার করে দিচ্ছে বিদেশে। তাদের স্বজনদের স্বপ্ন আশা-আকাঙ্খা সব বেগমপাড়া ঘিরে। আবদুল মালেকের বিস্ময়কর কাহিনীর মধ্যেই পুরনো একটি বিষয় নিয়ে নতুন রিপোর্ট পড়ছিলাম। দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়াতে পাচার করেছেন ২২৭ কোটি টাকা। আর এর বেশিরভাগ টাকাই তিনি উড়িয়েছেন সিঙ্গাপুরে ক্যাসিনোর টেবিলে। ফরিদপুরে মাঝারি গোছের দুই নেতার (আপন দু’ ভাই) ২০০০ কোটি টাকা পাচারের কাহিনীতো এরই মধ্যে প্রকাশিত। কিন্তু সবাই জানেন, প্রকাশের বাইরে রয়ে গেছে আরো বহুকিছু।
এসব দেখেই কি-না আবদুল মালেকের সম্পদের পাহাড় বিস্মিত করতে পারেনি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে। তিনি লিখেছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ড্রাইভারের এত এত সম্পদ দেখে অবাক হচ্ছেন। মনে হচ্ছে এটা যেন খুব নজিরবিহীন একটা ঘটনা। খবরটা দেখে আমার মধ্যে তেমন কোন প্রতিক্রিয়াই হয় নি। এই লুটেরা সমাজের জন্য খুবই সাধারণ মানের একটা খবর। এই রকম ‘সফল’ মানুষ এই সমাজে যে কত আছে তার হিসেব নেই। বলি কি! এই ড্রাইভার সাহেবকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘মোটিভেশনাল স্পিকার’ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হোক। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারীদের তিনি কার্যকরীভাবে মোটিভেশন দিবেন যে কিভাবে এত ছোট চাকরি করেও এত সফল হওয়া যায়। এতে করে আমরা একটা সফল জাতি তৈরি করতে সক্ষম হব। যদিও ইতোমধ্যে আমরা এ ক্ষেত্রে বেশ সফল হয়েছি, আরো সফল হতে পারব। ড্রাইভারের ‘স্যার’রা সব দুধের ধোয়া তুলসী পাতা।

গত কয়েক বছর ধরে মাঝে মাঝেই বাংলাদেশকে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে। নিশ্চয়ই আমাদের এক গাড়ি চালকের সম্পদের বিবরণী শুনে সিঙ্গাপুরের গাড়ি চালকরাও তাজ্জব বনে যাবেন। দেশটির প্রখ্যাত উন্নয়ন গবেষক কিশোর মাহবুবানি। সম্প্রতি তার একটি ভিডিও ফেসবুকে শেয়ার করেছেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ওই ভিডিও শেয়ার দিয়ে তিনি লিখেছেন, ১৯৬৫ সনে স্বাধীনতা লাভের সময় সিঙ্গাপুর ছিলো একটি অত্যন্ত দবিদ্র তৃতীয় বিশ্বের দেশ, আর এখন দেশটি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশগুলোর অন্যতম। এই ভিডিওটিতে সে দেশের উন্নয়ন গবেষক কিশোর মাহবুবানি নিজের জীবনব্যাপী অভিজ্ঞতা থেকে এই উন্নয়নের পেছনে প্রধান তিনটি নিয়ামকের উল্লেখ করেছেন, যেগুলো হল

১. সকল পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ (স্বজনপ্রীতি বা অন্য কোন বিবেচনার বিপরীতে),

২. দেশ শাসনের সর্বস্তরে সততা ও কর্তব্যপরায়নতা (দুর্নীতির বিপরীতে), এবং

৩. বাস্তবতার বিবেচনায় নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর