কিছু ভাবনা আসছে মনে। করোনার লকডাউন এর অর্থনৈতিক স্থবিরতায় ব্যবসা-বাণিজ্য যে সমস্যায় পড়েছিল তার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সরকার ১ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি প্রণোদনা দেয়। বড় শিল্পের জন্য বরাদ্দকৃত ৩০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা একটা বড় অংশ ইতোমধ্যে বরাদ্দ দেয়া হয়ে গেছে বলে শুনেছি। তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য বরাদ্দকৃত ২০ হাজার কোটি টাকার বেশিরভাগই এখনো ঋণ দেয়া হয়নি। এছাড়া, বিশেষায়িত ব্যাংক বা এনজিওর মাধ্যমে দেয়া প্রণোদনাগুলো দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে ।
আমি ভাবছি অন্য কথা। প্রণোদনার অর্থ যারা ঋণ নিতে পেরেছেন তারা সবাই কি
ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পপতি? ব্যাংকগুলোকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে সুবিধাভোগী বেছে নিতে । সেক্ষেত্রে যাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে ব্যবসায়, তাদেরকে ব্যাংক ভালো ক্লায়েন্ট না মনে করারই কথা। বরং যাদের ক্ষতি কম হয়েছে তাদেরকে ভালো ঋণ আবেদনকারী বলে মনে করার কথা ব্যাংকের ।
তাছাড়া ব্যাংকের মালিকানা ও পরিচালনায় আছেন অনেক শিল্পপতি। সব মিলিয়ে যদি এমন হয় যে কম ক্ষতিগ্রস্তরা ঋণ পেল, আর বেশি ক্ষতিগ্রস্তরা ঋণ পেল না অথবা কম পেল, তাহলে তো প্রণোদনার প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হবে না । আবার সব ধরনের ব্যবসায় আন্তর্জাতিক বাজারে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসেনি। সেই ধরনের পণ্যের ব্যবসায়ীরাও ঋণ পেলে তারা সেই ঝণ কি ব্যবহার করবেন? নাকি ফেলে রাখবেন ডিপোজিট হিসেবে কোন ব্যাংকে? এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা হওয়া দরকার । এই সময়ে ৩০০০ নতুন কোটিপতি আমানতকারী অর্থনীতিতে যুক্ত হয়েছে বলে শুনছি। কোটিপতি হওয়া খারাপ কিছু নয়। কিন্তু এই নতুন কোটিপতি হওয়া প্রমাণ করে যে করোনার কারণে সকলের অবস্থা খারাপ হয়নি। তাহলে এই কোটিপতিরাও কী প্রণোদনার ঝণ নিচ্ছেন?
প্রশ্নগুলো ভাবাচ্ছে। খুব ভালো উত্তর পাচ্ছিনা । অর্থনীতিকে প্রবৃদ্ধির স্বাভাবিক পথে আবার আনার জন্য এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা হওয়া দরকার । প্রকৃতই যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের কাছে প্রণোদনার অর্থ যেন পৌঁছায় সেই বিষয়ে নজর দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি ।
লেখকঃ ড. নাজনীন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ ও গবেষক, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিআইডিএস)।
লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া।