বীরকন্যা প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। অকুতোভয় স্বাধীনতা সংগ্রামী বিপ্লবী। আজ তার ৮৮তম আত্মাহুতি দিবস। মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য ১৯৩২ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর মাত্র ২১ বছর বয়সে তিনি আত্মদান করেন। বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে পরিচালিত সশস্ত্র সংগ্রামে প্রথম আত্মোৎসর্গকারী নারী ছিলেন প্রীতিলতা।
বীরকন্যা প্রীতিলতার আত্মদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি গান লিখেছেন এ প্রজন্মের কবি, গীতিকার ও সুরকার মাহবুবুল এ খালিদ। ‘প্রীতিলতা’ শিরোনামের গানটির সুরারোপ করেছেন প্রয়াত আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। সমবেত কণ্ঠে গানটি গেয়েছেন টিনা মোস্তারি, স্মরণ এবং রাফসান।
গানটি মাহবুবুল এ খালিদের সংগীত বিষয়ক ওয়েবসাইট ‘খালিদ সংগীত ডটকম’ (www.khalidsangeet.com)-এ প্রকাশিত হয়েছে।
‘রক্ষা করতে দেশের সম্মান/মাতৃভূমির মান।
প্রীতিলতা বীরকন্যা/করলো আত্মবলিদান।’ এমন হৃদয়গ্রাহী কথামালায় শুরু হয়েছে গানটি। মাহবুবুল এ খালিদের লেখা গানটির মাধ্যমে শ্রোতারা প্রীতিলতাকে আরো ভালো করে জানতে ও বুঝতে পারবেন।
উল্লেখ্য, প্রীতিলতার জন্ম ১৯১১ সালের ৫ই মে। চট্টগ্রামের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। অত্যন্ত মেধাবী প্রীতিলতা চট্টগ্রাম থেকে প্রথম বিভাগ পেয়ে ম্যাট্রিক পাশ করেন। এরপর ঢাকার ইডেন কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৩০ সালে আইএ পরীক্ষায় মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং সবার মধ্যে পঞ্চম স্থান লাভ করেন। পরে উচ্চ শিক্ষা লাভের উদ্দেশ্যে কলকাতার বেথুন কলেজে ভর্তি হন। ১৯৩২ সালে সেখান থেকে ডিসটিংশান নিয়ে বিএ পাশ করেন। পরে চট্টগ্রামের নন্দনকানন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে (বর্তমানে অপর্ণাচরণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়) প্রধান শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন।
ছাত্র জীবনেই প্রীতিলতা বিপ্লবী আদর্শে অনুপ্রাণিত হন। ওই সময় চট্টগ্রামে মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে বৃটিশদের বিপক্ষে সশস্ত্র আন্দোলন চলছিল। বিপ্লবের ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ প্রীতিলতা মাস্টারদা সূর্য সেনের মাধ্যমে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হন। তিনি টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ অফিস ধ্বংস এবং রিজার্ভ পুলিশ লাইন দখল অভিযানে যুক্ত ছিলেন। প্রীতিলতা জালালাবাদ যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেন।
সূর্য সেনের নির্দেশে ১৯৩২ সালের ২৪শে সেপ্টেম্বর রাতে কয়েকজন বিপ্লবীকে সঙ্গে নিয়ে প্রীতিলতা চট্টগ্রামের পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাবে ইংরেজদের ওপর আক্রমণ করেন। কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষিদ্ধ’ এমন অবমাননামূলক কথার জন্য ক্লাবটির দুর্নাম ছিল। অভিযান শেষে ফেরার সময় তার গায়ে একটি গুলি লাগে। ইংরেজদের হাতে ধরা পড়ার আশঙ্কায় তিনি নিজের পকেটে থাকা পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহনন করেন।
প্রীতিলতার আত্ম বলিদান বৃথা যায়নি। বরং প্রীতিলতার আত্মদানের মাহাত্বে উদ্বুদ্ধ হয়ে আরো বহু বিপ্লবীর জন্ম হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে ইংরেজরা এ দেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে।
উল্লেখ্য, মাহবুবুল এ খালিদের লেখা গান ও কবিতা বিভিন্ন শিক্ষামূলক বিষয়ে সমৃদ্ধ। তার লেখায় মূর্ত হয়ে ওঠে মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, মানুষের দুঃখ-কষ্ট, সমস্যা-সম্ভাবনা, দেশীয় ও সামাজিক বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান ও উৎসব, বিভিন্ন ধর্মের গুরুত্বপূর্ব পর্ব, খেলাধুলা, প্রকৃতি, দার্শনিকতা ইত্যাদি অসংখ্য বিষয়।