× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

তিস্তার ভাঙনে নিঃস্ব শত শত পরিবার

বাংলারজমিন

গঙ্গাচড়া (রংপুর) প্রতিনিধি
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, শনিবার

হামার বাড়ি বার বার তিস্তাত ভাঙি যায়, কায়ও কোনো কিছু করেনা আর তোমরা ছবি তুলি কি করেন বাহে, তোমরা কি কিছু হামার জন্যে করবেন। তিস্তার ভাঙন, ভাঙনে নিঃস্ব মানুষ ও পানিবন্দি মানুষের ছবি গতকাল সরজমিনে তুলতে গেলে এভাবে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে কথাগুলো আবেগে বলছিলেন লক্ষীটারী ইউনিয়নের পূর্ব ইচলীর তিস্তার ভাঙনে ৫ বার বাড়ি বিলীন হওয়া নিঃস্ব মিজানুরের মেয়ে মুক্তি বেগম। মুক্তিদের মতো এখন বাড়ি ও ভিটেমাটি হারা শত শত পরিবারের এমন নানা কথা আর কান্নায় যেনো মায়া হচ্ছেনা তিস্তার। তেমনি সরকারিভাবে নেই কোনো সাহায্য সহযোগিতার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও ভাঙন রোধে কার্যকরী পদক্ষেপ। এবার বর্ষা মৌসুমে টানা বৃষ্টি আর উজানে ভারতের ছেড়ে দেয়া পানিতে কয়েক দফায় বন্যা ও তিস্তার ভাঙনে উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত পরিবার যেমন কয়েক দফায় পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করে, তার চেয়েও দফায় দফায় ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে শত শত পরিবার বসবাসের অভাবে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। তাদের কষ্ট আর কান্নায় তিস্তাপাড় ভারি হয়ে উঠছে। গত কয়েকদিন ধরে টানা বৃষ্টি আর ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে ৫ম বারের মতো তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে তিনদিন ধরে বিপদসীমার ৩০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলসহ চরাঞ্চলের প্রায় ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
পানিবন্দি পরিবারগুলো বিশুদ্ধ পানি ও রান্নার অভাবে খাবার সংকটে পড়েছে, তেমনি প্রশ্রাব-পায়খানাসহ বৃদ্ধ ও শিশু এবং গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে। অনেকে বাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে ছাপড়া তুলে আবার কেউ পরিচিতদের বাড়িতে কোনো রকম দিন-রাত কাটিয়ে দিচ্ছে। এদিকে তিস্তার তীব্র স্রোতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত ৫দিনে তিস্তার ভাঙনে বিলীন হয়েছে লক্ষীটারী ইউনিয়নের পুর্ব ইচলী গ্রামের কয়েক জামায়াতের ঈদগা। এছাড়া আজিজুল, আশরাফ, মোবারক, হযরত, মিটু, মনোয়ারুল, আকতারুল, সাজু, আরিফুল, মমিন, নুর ইসলাম, সমসের, তালেব, সামাদ, আশরাফুল, আজিজুলসহ প্রায় ৫০ পরিবারের ভিটেমাটিসহ বাড়ি তিস্তায় ভেঙে গেছে। রাস্তা ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। চরবাসীকে বিদ্যুৎ সেবা দিতে সদ্য নির্মিত অনেক বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে ও হেলে গেছে। হুমকিতে পড়েছে মসজিদ, মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার, কয়েকটি ব্রিজ, শেখ হাসিনা সেতুসহ রংপুর টু লালমনিরহাট পাকা সড়কসহ ভাঙনের বাইরে থাকা কয়েক গ্রাম। অপরদিকে কোলকোন্দ ইউনিয়নের পুর্ববিনবিনাচরে আগের বন্যায় ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে নির্মিত বেড়ি বাঁধ ভেঙে ওই এলাকার প্রায় ৪০ পরিবারের বাড়ি ভেঙে গেছে। সৃষ্ট বন্যায় তলিয়ে গেছে শত শত একর আবাদি ধানক্ষেতসহ বিভিন্ন ফসল। এসব জমির ক্ষেত এখন বালুর নিচে পড়ে হয়েছে চর আর কিছু তিস্তায় পরিণত হয়েছে। পুকুর, মৎস খামার ও জলাশয়ের কয়েক লক্ষ টাকার মাছ ভেসে গেছে। অপরদিকে আগের কয়েক দফার বন্যা ও তিস্তার ভাঙনে লক্ষীটারী শংকরদহ, পশ্চিম ইচলী, জয়রামাঝা ও ইশরকুলের প্রায় ১ হাজার পরিবার ভিটেমাটি সব হারিয়ে এখন পথে বসেছে। অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে গেছে। বিলীন হয়েছে শংকরদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আশ্রয় কেন্দ্র ও হাফেজিয়া মাদ্রাসা। অন্যদিকে সিরাজ বাজার ও এসকেএসের বাজারের পাশ দিয়ে তিস্তার নালা দু’টি ভাঙন রোধসহ মূল তিস্তার শেখ হাসিনা সেতু হতে বিনবিনা পর্যন্ত বাঁধ নির্মাণের দাবি করেন এলাকাবাসী। কোলকোন্দ ইউপি চেয়ারম্যান সোহরাব আলী রাজু ও লক্ষীটারী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী বলেন, ভাঙন কবলিত মানুষের খোঁজখবর পাশে থেকে নিচ্ছেন এবং সাধ্যমত সহযোগিতা করছেন। এছাড়া সরকারিভাবে সহযোগিতার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছেন। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী তবিবুর রহমান জানান, ভাঙন রোধের জন্য জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাসলীমা বেগম বলেন, কোলকোন্দ ও লক্ষীটারী ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা দেয়ার জন্য সরকারিভাবে ৫ মেট্রিক টন করে ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া লক্ষীটারীতে খুঁজে খুঁজে ক্ষতিগ্রস্ত ৫৭ পরিবারকে গত বৃহস্পতিবার ত্রাণ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর