× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মৃতপ্রায় হবিগঞ্জের সুতাং নদী

বাংলারজমিন

রাশেদ আহমদ খান, হবিগঞ্জ থেকে
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০, রবিবার

হবিগঞ্জের সুতাং নদী। এক সময়ের খরস্রোতা এ নদীটি এখন মৃত্যু পথযাত্রী। দীর্ঘদিন ড্রেজিং না করা ও শিল্পনগরীর বর্জ্য এ নদীটিকে মরণব্যাধিতে আক্রান্ত করেছে। এখন অস্তিত্ব হারাতে বসেছে এ নদীটি। শিল্প বর্জ্যের দূষণে সুতাং নদীটি এখন হবিগঞ্জবাসীর দুঃখ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মারাত্মক দূষণে পানি বিষাক্ত হয়ে মরে যাচ্ছে নদীর মাছ। এতে কর্মহীন হয়ে পড়েছে স্থানীয় হাজার হাজার জেলে। অন্যদিকে চাষাবাদে দুর্গন্ধযুক্ত বিষাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল।
এ ছাড়া নদীর পানি ব্যবহার করে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন নদী পাড়ের মানুষ। সরজমিন অলিপুর শিল্প এলাকার পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, স্বাস্থ্য ঝুঁকির চরম শঙ্কায় রয়েছেন স্থানীয় বসবাসকারীরা। স্থানীয়রা জানান, জেলার অলিপুরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা কলকারখানার দূষিত বর্জ্য সুতাং নদীতে ফেলা হচ্ছে। এখানে গড়ে উঠা অধিকাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠানে নেই প্রয়োজনীয় বর্জ্য শোধনাগার (ইটিপি)। যেসব কোম্পানিতে ইটিপি রয়েছে সেগুলো অতিরিক্ত খরচের ভয়ে নিয়মিত চালানো হচ্ছে না। সরকার ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে দেখাতে অনেক কোম্পানি ইটিপি স্থাপন করেছে। কিন্তু এগুলো বন্ধ রেখে কারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সুতাং নদীতে। এ ব্যাপারে নিয়মিত নজরধারী নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীলদের। এ সুযোগে অলিপুর শিল্প এলাকার ৩০/৩৫টি কারখানার বর্জ্য ফেলা হচ্ছে সুতাং নদীতে। এর ফলে নদী তীরবর্তী বুল্লা, করাব, লুকড়া, নূরপুর, রাজিউড়াসহ বেশক’টি ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে কৃষি, স্বাস্থ্য ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যাপক বিপর্যয়ের পাশাপাশি মানবিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। নদী তীরবর্তী করাব, ছড়িপুর, উচাইল, রাজিউড়া, সাধুর বাজার, মির্জাপুর, ঘোড়াইল চর, আব্দুর রহিমপুরসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জনা যায় শিল্পবর্জ্য দূষণে আক্রান্ত গ্রামবাসীর কথা। দেখা যায় সীমান্ত অতিক্রমকারী সুতাং নদীর পানি কালো কুচকুচে হয়ে আছে। পানি থেকে চরম দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। নদীর দূষিত পানিতে মরে আছে জলজ প্রাণী। সুতাং গ্রামের বাসিন্দা সৈয়দ মোহাম্মদ রাসেলসহ কয়েকজন কৃষক জানান, হাজার বছরের পুরনো এই সুতাং নদীটি ড্রেজিংয়ের অভাবে অস্তিত্ব হারাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও জনপ্রতিনিধিদের নজরধারীর অভাবে বহমান এ নদীটি কালের আবর্তে বিলীন হতে চলেছে। পাহাড়ি ঢল ও অতি বর্ষণের ফলে ভারত থেকে আসা উজানের পানি ও পলি মাটিতে ভরাট হয়ে নাব্যতা হারিয়েছে নদীটি। স্থানীয় কৃষকরা জানান, সুতাং নদীর পানি ব্যবহার করে লাখাই উপজেলার প্রায় ১০ হাজার হেক্টর বোরো জমিতে চাষাবাদ হয়। নদীর পানির অভাবে প্রতি বছর চাষাবাদ করতে কৃষকদের হিমশিম খেতে হয়। এতে ব্যাহত হচ্ছে বোরো উৎপাদন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জহিরুল হক শাকিল বলেন, সুতাংসহ হবিগঞ্জের ৫টি নদী সম্পূর্ণভাবে বিপন্ন হয়ে গেছে শুধুমাত্র হবিগঞ্জের শিল্পায়নের জন্য। এই শিল্পায়ন এবং প্রবৃদ্ধি মানুষের জন্য। এখন যদি মানুষই না থাকে তাহলে ভোগ করবে কে? নদীর পানি কালো আলকাতরার মতো প্রবাহিত হচ্ছে। আমরা দেখেছি নদীর পানিতে ব্যাঙ মরে ভেসে রয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও খোয়াই ওয়াটার কিপার  তোফাজ্জল সোহেল জানান, নদী, খাল, বিল, জলাশয়ে শিল্পবর্জ্য নিক্ষেপের ফলে এই অঞ্চলের পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সকল ধরনের শিল্পবর্জ্য ‘উৎসে পরিশোধন’ বাধ্যতামূলক হলেও এই অঞ্চলে তা একেবারেই মানা হচ্ছে না। কলকারখানাগুলো শুরু থেকেই বেপরোয়াভাবে দূষণ চালিয়ে আসছে। যা সংশ্লিষ্ট গ্রামসমূহের বাসিন্দাদের সাংবিধানিক অধিকারের উপর প্রত্যক্ষ আঘাত। অপরিকল্পিত শিল্পায়ন দেশের উন্নয়ন নয় বরং ধ্বংস ডেকে আনছে।
তা সুতাং নদী এবং আশেপাশের খাল-বিলের চিত্র দেখলেই বুঝা যায়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর