চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে এক প্রবাসীর পরিবারকে তার স্বজন ও বহিরাগত সন্ত্রাসীরা ১৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখেছিল। পরে ভীত-সন্ত্রস্ত পরিবারটি বাঁচার তাগিদে ত্রিপল নাইনে (৯৯৯) ফোন করে পুলিশের নিকট আইনি সহায়তা চাইলে শাহরাস্তি থানা পুলিশ এসে অবরুদ্ধ পরিবারকে উদ্ধার শেষে মুক্ত করেন। এদিকে শুক্রবার দিনভর ওই ঘটনার ভিডিও লাইভে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ওই বাড়িতে ছুটে যান এবং পরিবারটির নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। শনিবার বিকালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি কয়েকজন সদস্য গণমাধ্যমের নিকট সন্ত্রাসী কর্তৃক অবরুদ্ধ ও হামলার লোমহর্ষক বর্ণনা প্রকাশ করেন। ভুক্তভোগী প্রবাসী পরিবারের স্ত্রী ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে রাতের আনুমানিক ১টায় দিকে ওই গৃহবধূর দেবর ফারুক হোসেন (৩৫) ও সাঈদ আলী স্বপন (৩৭), জ্যা শারমিন বেগম (২৮), শাশুড়ি-শ্বশুরসহ ১৫-২০ জনের একদল ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী তাদের পাকা দালানের কলাপসিবল গেট ভেঙে এ হামলা চালায়। ওই সময় বিষয়টি তিনি টের পেয়ে ডাকচিৎকার দিলে স্থানীয়দের সহযোগিতায় টহল পুলিশ অবগত হয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে এলে ওই যাত্রায় তিনি ও তার সন্তানাদি প্রাণে রক্ষা পান। সম্প্রতি তাদের পাকা ভবনের সংযোজিত পল্লী বিদ্যুতের মিটার নির্মাণ কাজের সংস্কারের জন্য বিচ্ছিন্ন করা হয়। ওই হিসেবে গত ২১শে সেপ্টম্বর কাজ শেষে পুনরায় বিদ্যুৎ কর্মীরা মিটার সংযোগ দিতে আসে।
এতে পূর্বের হামলাকারীরা আবার পরিবারটি দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। এতে আমি সোনিয়া সুলতানা হুমকিদাতাদের ভয়ে তটস্থ হয়ে শাহরাস্তি থানায় অভিযুক্তদের নামে একটি সাধারণ ডায়েরি লিপিবদ্ধ করি, যার নং ৯৯০। ওই হিসেবে বৃহস্পতিবার ২৪ সেপ্টম্বর থানা পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পুলিশ ফিরে এলে সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসীরা আবারো সোনিয়াকে হুমকি-ধমকি দেয়া শুরু করে। পরে ওই রাতে আমার স্বজনরা স্থানীয় সন্ত্রাসীদের সহযোগিতায় আমার পাকা ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ওই সময় রাতের বেলায় আমার স্বামী শাহিন এশার নামাজ আদায় করতে গেলে পরিস্থিতির টের পেয়ে সে শাহীন আর ঘরে ফিরতে পারেনি। এদিকে ২৫শে সেপ্টম্বর সকালে এ সুযোগে দুষ্কৃতকারীর দল আমার পাকা ভবনের প্রধান ফটক ও কলাপসিবল গেট হাতুড়ি, ড্রিল মেশিন, মোটর চালিত লোহা কাটার হেস্কো ব্লেড দিয়ে কাটা শুরু করে। সঙ্গে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভবনের থাই অ্যালমোনিয়াম এর গ্লাস ভেঙে দিয়ে অকথ্য গালাগালি শুরু করে। এ সময় আমি ও আমার ছোট ছেলে তানভীর (৭) আহত হই। প্রায় ১৬ ঘণ্টার তা-ব শেষে আমি বাঁচার তাগিদে ট্রিপল নাইনে ৯৯৯ ফোন দিয়ে প্রাণভিক্ষার সহায়তা চাই। অবশেষে শাহরাস্তি থানা পুলিশ এসে আমার অবরুদ্ধ অবস্থার অবসান করে। অবশ্য ওই সময় আমি হামলাকারীদের সচিত্র প্রতিবেদন জনসম্মুখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দৃষ্টিগোচরে জন্য একটি লাইভ ভিডিও ধারণ করি। পরে পুলিশের উপস্থিতি হামলাকারীরা টের পেয়ে কেটে পড়ে। ওই সময় পুলিশের সহায়তায় আমার স্বামী ঘরে প্রবেশ করে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের গৃহকর্তা শাহিন জানান, আমার পরিবারে ৪ ভাই ৩ বোন, তাদের মধ্য আমি সবার বড়। বিশাল পরিবারের সচ্ছলতা ফিরাতে ১৯৯৩ সালে গালফের দেশ সৌদি আরবে আমি পাড়ি জমাই। ওই হিসেবে ২০০১ সালে আমার স্ত্রীকে সৌদি আরব নিয়ে যাই। ওই সময় আমার রোজগার ও স্ত্রীর সেলাই কাজের ভালোই রোজকার হচ্ছিল। ওই টাকাকড়ি দিয়ে আমার দু’টি ভাইকে আমার নিকট নিয়ে আসি। পরে তারা এদেশের কাজে মনোনিবেশ না করে অন্তত ৪০ লাখ টাকার ক্ষতিসাধন করে দেশে ফিরে যায়। এদিকে আমি আমার উপার্জনের টাকা বাবার নিকট পাঠালে বাবা তার নিজ নামে সকল সম্পত্তি ক্রয় করেন। তাতে কোনো আপত্তি ছিল না। সম্প্রতি করোনাকালীন সময়ের পূর্বে লকডাউনে আমি দেশে ফিরে এলে শারীরিক অক্ষমতায় না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। এতে আমার বাকি ভাই ও বোনেরা পিতামাতাকে ফুসলিয়ে আমার অর্থকড়িও পিতার নামে ক্রয় করা সম্পত্তি থেকে আমাকে বঞ্চিত করার ফন্দি আঁটে। ওই হিসেবে প্রায় বিভিন্ন অজুহাতে স্থানীয়
কিছু সন্ত্রাসী নিয়ে আমার পরিবারের ওপর হামলা চালায়। এ নিয়ে শাহরাস্তি থানাসহ স্থানীয়ভাবে বেশকিছু সালিশ দরবার হলেও আমার ভাই গংরা বিষয়টি আমলে না নিয়ে দিনের পর দিন অত্যাচার করে আসছে। যার ফলে গত শুক্রবার বহিরাগত সন্ত্রাসীদের সহযোগিতা অবরুদ্ধ এ কাণ্ড ঘটায়। বর্তমানে বিষয়টি চাঁদপুর পুলিশ সুপারসহ স্থানীয় প্রশাসন অবগত হয়েছে। বর্তমানে ওই অবস্থা থেকে আমি ও আমার পরিবার নিষ্কৃতি চাই। আমার প্রাপ্য সম্পদ যেন আমার স্বজনরা আমাকে বুঝিয়ে দেয় সে জন্য সবাইকে সহযোগিতার অনুরোধ জানাচ্ছি।