টানা ১৪ ঘণ্টা ধরে মুষলধারে অবিরাম বর্ষণ। জলজটে নাকাল রংপুর নগরবাসী। পানিতে সয়লাব নগরীর ঘরবাড়ি, অলিগলি, রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সাংস্কৃতিক অঙ্গন, কবরস্থান। পানিতে অর্ধেক অংশ ডুবে গেছে মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার গাড়ি। যেন ঘরের দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত পানিতে টইটুম্বুর। ১শ’ বছরের রেকর্ড ভাঙার ৪৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। তাই পানিবন্দিদের উদ্ধারে নগরীর রাস্তায় স্পিডবোট নামিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। ঘর-বাড়িতে পানি উঠায় নগরবাসীর অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন সড়কের উপরে।
সারারাত নির্ঘুম ও আতঙ্কে কাটিয়েছে নগরবাসী।
শনিবার রাত পৌনে ৯টা থেকে রংপুরে বৃষ্টিপাত শুরু হয়। প্রথমে হালকা বৃষ্টিপাত হলেও সাড়ে ৯টার পর থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। বৃষ্টির ভয়াবহ রুপের আভাস প্রকৃতি থেমে থেমে মেঘের গর্জনে জানান দেয় রংপুরবাসীকে। ভারী বর্ষণের কারণে নগরীর সব দোকানপাট তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। রাত ১০টা বাজতেই নগরীর মূল সড়কগুলো প্রায় ফাঁকা হয়ে পড়ে। এরপর সারা রাত অবিরাম বর্ষণ। রংপুর নগরীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণের একমাত্র পথ শ্যামাসুন্দরী খাল বৃষ্টির পানিতে টইটুম্বুর হয়ে পড়ে। থামার নাম না নেয়া বৃষ্টির পানিতে শ্যামাসুন্দরী খালের পানি উপচে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঢুকে পড়ে। ড্রেনের মাধ্যমে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নগরীর নিউ ইঞ্জিনিয়ারপাড়া, কেরানীপাড়ার, মুন্সিপাড়া, গোমস্তাপাড়ার, লিচুবাগান, পায়রা চত্ব্বর, সেনপাড়া, গুপ্তপাড়া, ঠিকাদারপড়া, আলমনগর, বাবুপাড়া, আশরতপুর, চকবাজার, পূর্ব শালবন, শালবন মিস্ত্রিপাড়া, শিয়ালুর মোড়, মাস্টারপাড়া, সিগারেট কোম্পানি মোড়, কামাল কাছনা, তিন মাথাসহ প্রায় সব এলাকা পানিবন্দি হয়ে পড়ে। পানি ঢুকে পড়ে ঘরবাড়িতে। ফলে সীমাহীন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয় নগরবাসীর। এছাড়া রাতভর বজ্রপাতে নগরীর অধিকাংশ বাড়িতে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বিকল হয়ে পড়ে। পানিবন্দি হয়ে পড়া নগরীর নিম্নআয়ের মানুষদের মাঝে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দেয়। রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান বলেন, মূলত শ্যামাসুন্দরী খালের সংস্কার কার্যক্রম না হওয়ার কারণে পানি বৃদ্ধি পেয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী সিটি করপোরেশন ছাড়া দেশের অন্যান্য সিটি করপোরেশনের প্রতি সরকারের বিশেষ দৃষ্টি নেই। রংপুর সিটি করপোরেশনের উন্নয়নে মাস্টার প্লান সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জমা দেয়া হলেও তা আজ অবধি পাশ হয়নি। ফলে পরিকল্পিত নগরীর উন্নয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া জনগণের অসচেতনতার কারণে শ্যামাসুন্দরী খাল দিয়ে অবাধে পানি প্রবাহিত হতে পারছে না।