× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মৃত মানুষকে জীবিত করার ক্যারিশমা

মত-মতান্তর

শামীমুল হক
৪ অক্টোবর ২০২০, রবিবার

সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত চরিত্র জিসা, মামুন ও দিলীপ। তিনজনই খুন হয়েছেন। আবার সবাইকে অবাক করে দিয়ে জীবিত ফিরে এসেছেন। পুলিশের ক্যারিশমায় হত্যার দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তাদের । ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন কেউ কেউ।
পৃথিবী এগুচ্ছে। বিজ্ঞানের জয়জয়কার বিশ্বজুড়ে। প্রতিযোগিতা- কে আগে আকাশ ছুঁবে। কিন্তু মানুষের বিবেকের অধঃপতন হচ্ছে দিন দিন।
যেন বিজ্ঞানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়ছে বিবেক। বিজ্ঞান কত সামনে যেতে পারে। আর বিবেক কত পেছনে ছুটতে পারে- এর নমুনা হলো জিসা মনি, মামুন আর দিলীপ। নারায়ণগঞ্জে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় কিশোরী জিসা মনিকে। পরে লাশ শীতলক্ষ্যা নদীতে ফেলে দেয়া হয়। এজন্য তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা এর দায় স্বীকার করে জবানবন্দিও দেয়। অথচ ইকবাল নামে এক যুবককে বিয়ে করে সুখে নিশ্চিন্তে সংসার করছিল জিসা। অন্যদিকে এ ঘটনাকে সাজানো হয় ধর্ষণ ও হত্যা হিসেবে। আর এর রহস্য উদ্ঘাটন করে পুলিশ নেয় বাহবা। কিন্তুসব কিছু ভেস্তে যায় যখন ওই কিশোরী জীবিত ফেরত আসে তখন। প্রশ্ন দেখা দেয় তাহলে গ্রেপ্তারকৃতরা কেন মিথ্যে জবানবন্দি দিলেন। পুলিশি নির্যাতনের ভয়ে? ঠিক তাই। নারায়ণগঞ্জের ওই কিশোরীই কেন চট্টগ্রামে খুন হওয়া দিলীপ রায়ের ক্ষেত্রেও ঘটেছে একই ঘটনা। অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে হালিশহর থানায় হত্যা মামলা করে। এ ঘটনায় জীবন চক্রবর্তী ও দুর্জয় আচার্য্য নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জীবন চক্রবর্তী ১৬৪ ধারায় সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গাঁজা খাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দিলীপ রায়কে হত্যা করেছে বলে জবানবন্দিতে জানান। কিন্তু ঘটনার কয়েকদিন পর দিলীপ রায়কে জীবিত অবস্থায় বিচারকের সামনে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। দুর্জয় আচার্য্যরে মা সন্ধ্যা আচার্য্য জানান, আমার ছেলে জিপিএইচ ইস্পাত কারখানায় চাকরি করতো। একদিন সন্ধ্যায় পাশের একটি চা দোকানে গিয়েছিল  সে। সেখান থেকে পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে যায়, সঙ্গে জীবন চক্রবর্তীকেও। এরপর ছেলের উপর নির্মম নির্যাতন করে। ছোট্ট ছেলে, পুলিশের মারধর সইতে না পেরে তাদের শেখানো তথ্যই আদালতে গিয়ে বলেছে। ভয়াবহ আরেক সাজানো ঘটনা ঘটে সেই নারায়ণগঞ্জেই। হত্যার পর লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দেয়া যুবক মামুন জীবিত হাজির হয় ৬ বছর পর। মামুনকে অপহরণের পর বিষাক্ত শরবত পান করিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে লাশ শীতলক্ষ্যায় ফেলে দিয়ে গুম করা হয়েছে। পুলিশের একটি রিমান্ড আবেদনে এমনটিই বলা হয়েছিল। পরে সিআইডি মামলাটি তদন্ত শেষ করে মামুনের খালাতো বোনসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট  দেয়। কিন্তু ৬ বছর পর গত বুধবার দুপুরে মামুন জীবিত এবং সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। জিসা মনির পর মামুনের ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ পুলিশে তোলপাড় শুরু হয়। কারণ জিসা ও মামুনের গল্প ঠিক একই। তবে মামুনের ঘটনায় তিন আসামি জবানবন্দি দেয়নি। যদিও আসামি দু’জন এক বছর করে জেল খাটে। বাকিরা এক মাস করে জেল খাটে। এখন তারা জামিনে আছে। নিয়মিত আদালতে হাজিরা দিচ্ছে। মূল ঘটনা হলো- মামুন পরিবারের সঙ্গে অভিমান করে বাড়ি ছেড়েছিল।  
জিসা, মামুন কিংবা দিলীপের মতো ঘটনা যে আরও ঘটছে না কে জানে? হয়তো বিনা দোষে কেউ কেউ জীবন কাটিয়ে দেবে কারাগারে। সমাজের চোখে খুনি হয়ে বেঁচে থাকবে। ওদের সন্তানরা খুনির সন্তান হিসেবে সমাজে বড় হবে। বসবাস করবে। নিরীহরা কি এভাবেই জীবনকে উপভোগ করবে? আর যারা সত্যিকার অর্থে খুনি, ধর্ষক তারা বুক ফুলিয়ে সমাজে চলাফেরা করবে? পুলিশ সচেতন হলে, সঠিক পথে থাকলে কখনো জিসা, মামুন কিংবা দিলীপ জীবিত থাকা সত্ত্বেও মৃত দেখিয়ে নিরীহ মানুষজনকে হয়রানি হতে হতো না। এখানেই বিজ্ঞানের প্রসঙ্গ আনতে হয়। এখনতো বিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে। আইনশৃঙ্গলা বাহিনীর কাছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আছে। তারা এসব যন্ত্র ব্যবহার করলেই আসল তথ্য বের করে আনতে পারে। এতে নিরীহ মানুষকে হয়রানি হতে হয় না।
গ্রামে-গঞ্জে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব এখনো প্রবল। প্রায়ই সংঘর্ষ হয় এসব নিয়ে। সংঘর্ষে কোনো পক্ষে একজন মারা গেলে হয় পাল্টাপাল্টি মামলা। মামলাতে নিঃশেষ হয় দু’পক্ষই। কখনো কখনো নারী নির্যাতনের মামলাকেও করা হয় হাতিয়ার। অথচ এমনও পুলিশ কর্মকর্তা আছেন যারা এ সবকে কোনো পাত্তা দেন না। তিনি সত্যকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে যান। কোনো অন্যায় তার কাছে জায়গা পায় না। সেসব থানা এলাকার মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে। পুলিশ প্রশাসন সঠিক পথে চললে বাস্তবিক অর্থে সমাজ বদলে যাবে। বদলে যাবে অনেক কিছুই। বাহবা পেতে নয়, পুলিশকে কাজ করা উচিত সাধারণের জন্য। বিজ্ঞান তো সে সুযোগ করে দিয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সমাজকে সন্ত্রাস মুক্ত করা একেবারেই সম্ভব। তা না করে ক্যারিশমা দেখাতে চাইলে এ সমাজে কখনো পরিবর্তন আসবে না। এটা হলফ করে বলা যায়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর