× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

লেবাননে নিজ অভিজ্ঞতা-মানসিকতা ও বাংলাদেশ

প্রবাসীদের কথা

জসিম উদ্দীন সরকার
১৩ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার

২০১৩ সালে আমি তখন ছুটিতে বাংলাদেশে। তিন মাসের ছুটিতে, বিভিন্ন কাজে এদিক-সেদিক অনেক জায়গায় আসা যাওয়া হয়েছিলো। একদিন নিজের একটি প্রয়োজনে ঢাকায় গেলাম। মোহাম্মদপুর থেকে বাসে উঠে গন্তব্য ছিল গুলশান-১-এ। সেই বাসে সম্ভবত মহাখালী গিয়ে পৌঁছলাম। তবে আমার সঠিক মনে পড়ছে না। বাংলাদেশ এবং ঢাকা শহরে বাসের মধ্যে জনগণের ভিড় কেমন সেটা কারো অজানা নয়। তেমনি আমার বাসেও অনেক লোকের ভিড়ে একটি মাত্র সিট খালি।
আর খালি সিটের পাশেই অন্য সিটে এক ভদ্র মহিলা বসে আছেন। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে লেবাননের কালচার মনে করে আমি মহিলাকে বললাম, আপু আমি কি আপনার পাশে বসতে পারি। তিনি খুব বিনয়ী ও সুন্দর ভাষায় বসতে বলেন।
লেবাননসহ প্রায় দেশে পুরুষ-মহিলা পৃথক পৃথকভাবে কোনো সিট নাই। আমি পাশের সিটে বসার পর পরই অনেক ভাইকে আমার দিকে তাকাতে দেখলাম। দুই-এক মিনিট পর আপুটি আমাকে সরাসরি জিজ্ঞাসা করলেন ভাইয়া আপনি কি দেশের বাহিরে থাকেন? আমি উত্তরে হ্যা বলে তার নিকট জানতে চাইলাম কেন আমাকে এই কথা জিজ্ঞাসা করলেন। তিনি বললেন, আমাদের দেশের কিছু উগ্র লোকের জন্য বাসে মহিলা সিট থাকে। আপনাকে দেখেই ভেবেছি আপনি বাহিরে থাকেন। তাই বসতে মানা করলাম না।
আমি তো অবাক.....!!!
তখন সেই আপুটি বললেন, আমি ঢাকা ভার্সিটির ছাত্রী। এই বয়সে বাসসহ অনেক গাড়িতে চড়ে অনেক জায়গায় যাওয়া হয়। আমি জানি এবং বুঝি যে, বিদেশের কালচার আর আমাদের দেশের কালচার এক নয়। এরপর জানতে চাইলেন আমি কোন দেশে থাকি। আমি বললাম পর্যটক ভ্রমণের দেশ লেবাননে থাকি। তিনি লেবাননের ভাল-মন্দ, পরিবেশসহ এখানকার কালচার সম্পর্কে জানতে চাইলেন। কয়েক মিনিটের ভ্রমণে আমি লেবাননের ইতিহাস কালচার তাকে শুনাতে শুনাতে প্রায় আধা ঘণ্টা পার হয়ে গেল।
এছাড়াও অনেক কথা হয় তার সঙ্গে। এত কথা বা আলোচনার পরও আমার ধারণা ছিলো না যে আমি মহিলা সিটে বসে আছি, পরক্ষণে হঠাৎ স্মরণ হয় এটি বাংলাদেশ। এখানে পুরুষ ও মহিলার সিট আলাদাভাবে থাকে আর সেভাবে সবাই যার যার আসনে বসে থাকেন।
আসলে এমন কাহিনী বলার উদ্দেশ্য?
লেবানন দেশটি বৃটিশ, ফ্রান্সসহ অনেক দেশ শাসন করেছেন। এখানকার আইন কানুন, সংবিধানসহ অনেক কিছু ভিন্ন রূপের। লেবাননের সভ্যতা হাজার বছরের। এই দেশের লোকাল বাসে পুরুষ এবং মহিলাদের জন্য আলাদা কোনো সিট নেই। দীর্ঘ লেবানন প্রবাসে অবস্থানকালে এমন একটা ঘটনা শুনি নাই যে কোন নারী যাত্রীকে গাড়ীতে ধর্ষণ বা ইপ্টিজিং করেছে। লেবানন এর সভ্যতা বা কালচার ফ্রান্সের চেয়েও খোলামেলা। কিন্তু এ দেশের লোকের মধ্যে অসভ্যতা নেই। রাস্তায় তারা নোংরামীও করেন না।
একটি মেয়ের পাশে বসা মানেই অনেক কিছু নয়, আবার অনেক কিছু বটেও। নোংরামী মনে থাকলে পাশে বসা মেয়েটির সঙ্গে যা-তা করতে মন চাইবে? আর যার যার গন্তব্যে যাওয়ার উদ্দেশ্য থাকলে চুপ করে মেয়েটির পাশে বসে থাকবে। বাস সবার জন্য একটি গণপরিবহন। একজন আরেকজনের সঙ্গে খারাপ আচরণ বা নোংরামী কেন করতে যাবে?
ভালো মনের মানুষ হতে পারলেই বাসে পুরুষ আর মহিলা সিট পৃথক পৃথকভাবে লাগবে না। আর একটি মহিলার পাশে বসতেও সমস্যা হবে না। মহিলাটিও আপনার জন্য বিব্রত হবে না।
আর এভাবে প্রতিটা ক্ষেত্রে আমাদের সবার মাঝে শালীনতা দরকার। বাংলাদেশের সভ্যতা মেনেই আমাদের চলতে হবে। এ ছাড়া প্রতিটা ক্ষেত্রে সবাই পোশাক-আশাকের দিকে যত্নবানও হতে হবে।
আমাদের দেশের কিছু সংখ্যক মানুষ শহর অঞ্চলে পোশাকের মর্যাদা না দিলেও প্রতিটি গ্রামাঞ্চলে আজো বাংগালীয়ানা দেখা যায়। বিদেশে আছি বলেই বিদেশি কালচারে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি। দেশে যেদিন ফিরে যাব সেদিন থেকে আমার দেশের কালচারেই চলব ইনশাআল্লাহ।
আমাদের সবার প্রয়োজন পোশাকের সঙ্গে মনকেও পরিষ্কার করা, সঙ্গে মানসিকতার পরিবর্তন অনিবার্য। ছোট বেলায় দেখতাম, একজন মহিলা যদি দেখতো রাস্তায় একজন পুরুষ আসছে, সেই মহিলাটি মুখে কাপড় দিয়ে রাস্তার এক সাইটে দাঁড়িয়ে সেই পুরুষটিকে আগে যেতে দিতেন। পরে তিনি চলে যেতেন। এতে আবার কেউ ভাববেন না যে এখানে সমান অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে। সমান অধিকার মানেই যা খুশি তাই করা নয়।
লেবাননে রাজনৈতিক নেতাদের কথা একটু না বললেই নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর সবচেয়ে ছোট একটা কর্মী বা নেতার কথাও শুনি নাই যে, কারো সঙ্গে কারো কোনো প্রকার নোংরামী করেছে। আর আমাদের দেশে রাজনীতি মানেই একে অন্যের চেয়ে ক্ষমতা বা পাওয়ারের খনি ভাবা শুরু করে দেয়া। বাস্তবে একজন নেতার মতো নেতা হওয়াটা খুবই কঠিন।
খোলা-মেলা মানেই যেন খোলা-মেলা না হয়। আসুন আমরা নিজেকে বদলাই এবং নিজ দেশকে বদলাই। নারী আমার মা, আমার বোন, আমার স্ত্রীসহ পরিবারের যে কেউ হতে পারে, তাই আমরা আমাদের বোনকে ধর্ষণ নয়, আসুন সবাই নারী জাতিকে সম্মান করি।
লেখক: সাংবাদিক ও মানবধিকার কর্মী, লেবানন প্রবাসী।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর