আগেই বাতিল করা হয়েছিল দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক। তবে তার পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রে ভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে একযোগে উপস্থিত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প ও নির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেট জো বাইডেন। যথারীতি এতেও করোনা ভাইরাস ইস্যুতে সাড়া দেয়া নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন দুই প্রার্থী। ট্রাম্প করোনা মহামারিতে নিজেই ‘প্যানিকড’ বা আতঙ্কগ্রস্ত ছিলেন বলে তার সমালোচনা করেছেন জো বাইডেন। অন্যদিকে এরই মধ্যে করোনায় কমপক্ষে দুই লাখ ১৬ হাজার মার্কিন নাগরিকের মৃত্যু হলেও এ সঙ্কট মোকাবিলায় নিজের পক্ষাবলম্বন করেছেন ট্রাম্প। এ খবর দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ১৫ই অক্টোবর বৃহস্পতিবার ছিল পূর্ব নির্ধারিত দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্ক। কিন্তু ট্রাম্প করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তা বাতিল করা হয়। তার পরিবর্তে ভিন্ন টেলিভিশন নেটওয়ার্কে একযোগে টাউন হল সম্প্রচারে বক্তব্য রাখেন তারা।
এদিন জো বাইডেন ফিলাডেলফিয়ায় এবিসি নেটওয়ার্কে ভোটারদের কাছে করোনা ভাইরাসটির ডেডলাইন গোপন করার জন্য ট্রাম্পকে দায়ী করেন। ট্রাম্প সম্পর্কে তিনি বলেন, তিনি কাউকে (করোনা ভাইরাস সম্পর্কে) কিছুই বলেননি। কারণ, মার্কিনিরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়বেন বলে তিনি শঙ্কিত ছিলেন। বাইডেন বলেন, মার্কিনিরা কখনো আতঙ্কিত হন না। আতঙ্কিত তিনি (ট্রাম্প)।
অন্যদিকে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে গৃহীত পদক্ষেপ এবং নিজে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়ে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন ট্রাম্প। জো বাইডেন করোনা ভাইরাসের সময় নিজে দূরত্ব বজায় রেখে চলেছেন। এ জন্য তার সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেন, আমি প্রেসিডেন্ট। জনসাধারণকে দেখতে হয় আমার। আমি তো বেজমেন্টে লুকিয়ে থাকতে পারি না। মিয়ামিতে ভোটারদের উদ্দেশে কথা বলছিলেন ট্রাম্প। তার বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচার করে এনবিসি। তবে কবে আক্রান্ত হওয়ার আগে সর্বশেষ ট্রাম্পের করোনা নেগেটিভ পরীক্ষা করা হয়েছিল সে প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, তিনি যথার্থভাবে মনে করতে পারছেন না।
উল্লেখ্য, দু’ সপ্তাহ আগে প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কের সময় জো বাইডেনের কথার মাঝে বারে বারে বিঘœ ঘটাচ্ছিলেন ট্রাম্প। তবে এদিনও ট্রাম্পের উচ্চকিত কণ্ঠের পরিবর্তন হয়নি। বার বারই তিনি মডারেটর সামান্থা গুথরির সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ট্রাম্প বলেন, তিনি মাস্কের কার্যকারিতা সম্পর্কে নানা রকম তথ্য শুনতে পেয়েছেন। যদিও তার প্রশাসনের স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তারা বলেছেন, করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা হলো মাস্ক পরা। এদিন কিউআনোন-এর বিরুদ্ধে নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানান ট্রাম্প। উল্লেখ্য, কিউআনোন হলো একটি মিথ্যা ষড়যন্ত্র বিষয়ক তত্ত্ব, যেখানে বলা হয়েছে, ডেমোক্রেটরা হলো শিশুদের ওপর যৌনতা বিষয়ক বৈশ্বিক একটি চক্রের অংশ। কিউআনোন সম্পর্কে প্রথমেই ট্রাম্প প্রশংসা করেন শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়নের বিরোধিতা করার জন্য। পরক্ষণেই তিনি বলেন, তাদের কর্মকান্ড সম্পর্কে তিনি তেমন কিছু জানেন না।
অন্যদিকে দুই দশক ধরে তার আয়কর দেয়ার যে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে নিউ ইয়র্ক টাইমস, সে বিষয়ে প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়েছেন ট্রাম্প। এই আয়কর প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এসেছেন তিনি। তিনি জানান, তার ব্যক্তিগত গ্যারান্টিড লোন রয়েছে ৪০ কোটি ডলার। ট্রাম্প যুক্তি দেখান তার যে সম্পদ আছে এই অর্থ তার তুলনায় একটি চিনাবাদামের সমপরিমাণ। এর মধ্য দিয়ে তিনি নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট কার্যত মেনে নিয়েছেন বলে মনে হয়। হোয়াইট হাউজে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের প্রথম বছরে তিনি ফেডারেল মাত্র ৭৫০ ডলার আয়কর দিয়েছেন বলে যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ওই পত্রিকা, তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন নি। তবে এক পর্যায়ে তিনি বলেন, পত্রিকার ওই সংখ্যাটি ভুল।