দেশের ব্যান্ড সংগীতের পুরোধা ব্যক্তিত্ব ও গিটার লিজেন্ড আইয়ুব বাচ্চুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ২০১৮ সালের ১৮ই অক্টোবর দেশ-বিদেশের অসংখ্য ভক্তকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এই শিল্পী। চলে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ২৫ বছর কাটিয়েছেন নিজ হাতে তিলে তিলে গড়া ব্যান্ড এলআরবি’র সঙ্গে। ১৯৯১ সালের ৫ই এপ্রিল সোলস ছেড়ে এলআরবি গড়ে তুলেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। শুরুতে ব্যান্ডটির নাম রাখা হয়েছিল ‘লিটল রিভার ব্যান্ড (এলআরবি)। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে এই নাম বদল করে রাখা হয় ‘লাভ রানস ব্লাইন্ড’ (এলআরবি)। কিংবদন্তি ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু অনেক প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে সংগীতে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন। পিতা-মাতার আদরের সন্তান হলেও তার সংগীত চর্চায় ছিল ব্যাপক বাধা।
সংগীতপ্রেমী বাচ্চু পারিবারিক নিষেধ উপেক্ষা করেই নিজের স্বপ্নকে জয় করেছেন। তবে জয়ের নেপথ্যে রয়েছে কঠিন বাস্তবতার গল্প। ১৯৮৩ সালে মাত্র ৬০০ টাকা পকেটে নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। কিন্তু গানের প্রতি ভালোবাসা, অদম্য চেষ্টা, কঠোর পরিশ্রম ও সাধনায় তিনি অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগীর আইয়ুব বাচ্চু হয়ে উঠেন। কণ্ঠ-সুর আর গিটারের জাদুতে মাতোয়ারা করে রেখেছিলেন তিনি ভক্ত- শ্রোতাদের। আইয়ুব বাচ্চু মূলত রকস্টার। কিন্তু ব্যান্ড কিংবা রক তারকা হলেও অন্যান্য ঘরানার গানেও তিনি সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। আধুনিক এবং লোকগানেও তিনি ছিলেন স্বমহিমায় উজ্জ্বল। নিজের পাশাপাশি বিভিন্ন সময় অন্যান্য শিল্পীদের জন্য আধুনিক, লোক এবং ক্লাসিক্যাল ঘরানার গানও তৈরি করেছেন তিনি। তবে জিমি হেন্ডরিক্স, জো স্যাটরিনি, স্টিভ মুর তার গানের আদর্শ ছিলেন বলে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে আইয়ুব বাচ্চু জানিয়েছেন। চলচ্চিত্রের গানেও ছিলেন তিনি সফল। তার গাওয়া বেশকিছু সিনেমার গান পেয়েছে আকাশছোঁয়া শ্রোতাপ্রিয়তা। আইয়ুব বাচ্চুর জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘সেই তুমি’, ‘কষ্ট’, ‘নীল বেদনা’, ‘আসলে কেউ সুখী নয়’, ‘হাসতে দেখো গাইতে দেখো’, ‘সেই রূপালী গিটার ফেলে’, ‘একদিন ঘুম ভাঙা শহরে’ ‘কষ্ট পেতে ভালোবাসি’, ফেরারী মন’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। কিংবদন্তি ব্যান্ড তারকা আইয়ুব বাচ্চু ১৯৬২ সালের ১৬ই আগস্ট চট্টগ্রাম শহরের এনায়েতবাজারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা মোহাম্মদ ইসহাক ও মা নূরজাহান বেগম। সংসার জীবনে তিনি স্ত্রী, ফাইরুজ সাফরা নামে এক কন্যা ও তাজোয়ার নামে এক পুত্র সন্তান রেখে গেছেন। ২০১৮ সালের ১৮ই অক্টোবর মাত্র ৫৬ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দেশীয় ব্যান্ডসংগীতের অন্যতম এই দিকপাল।