ওকালতনামায় স্বাক্ষর না দিয়েই আসামিকে কারাগার থেকে মুক্তি দেয়ার ঘটনায় হাইকোর্টে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পার পেলেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার খন্দকার মো. আল মামুন। একই সঙ্গে পাশাপাশি ওকালতনামায় ডেপুটি জেলারের স্বাক্ষর ছাড়াই মুক্তি পাওয়া আসামি জিওলোজাইজ সার্ভে করপোরেশনের প্রোপাইটর মো. মিজানুর রহমান কনককে চার সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। আদালতে আসামিপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও শামীমা আক্তার। ডেপুটি জেলারের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী আজম। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক। কারাগারে আসামি আছে কিনা তা যাচাই করে ওকালতনামায় স্বাক্ষর ও রেজিস্ট্রিভুক্ত করতে দেশের সকল কারা তত্ত্বাবধায়কের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ওকালতনামায় সংশ্লিষ্ট ডেপুটি জেলারের পূর্ণ নামসহ স্বাক্ষর দিতে বলা হয়েছে।
আদেশটি কার্যকর করতে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি), কারা মহাপরিদর্শকসহ (আইজি প্রিজন) সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
এর আগে, আসামি কারাগারের বাইরে থাকার পরেও তাকে কারাগারে দেখিয়ে ওকালতনামায় স্বাক্ষর করেন ডেপুটি জেলার। বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীমা আক্তার।
ঘটনার বিবরণে দেখা যায়, এনআরবি ব্যাংকের প্রায় এগারো কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতির অভিযোগের দুই মামলায় জিওলোজাইজ সার্ভে করপোরেশনের প্রোপাইটর মো. মিজানুর রহমান কনক গত ১৫ই জুন ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। তখন শর্ত দেয়া হয়, নিয়মিত আদালত খোলার এক সপ্তাহের মধ্যে জামিন নিয়মিত করে নিতে হবে। কারণ তখন হাইকোর্টে এভিডেভিট করে ই-মেইলে আবেদন করা হতো না। এরইমধ্যে আসামি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে যায়।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যখন এভিডেভিট করা চালু হলো তখন সুপ্রিম কোর্টের এভিডেভিট শাখা দেখতে পায়, আসামির দু’টি মামলার মধ্যে একটির ওকালতনামায় ডেপুটি জেলারের স্বাক্ষর নেই। পরবর্তীতে আসামিপক্ষ ডেপুটি জেলারের স্বাক্ষর নিয়ে ওকালতনামা এভিডেভিট শাখায় দাখিল করেন। এতে দেখা যায়, ডেপুটি জেলার যে তারিখ দিয়েছেন সে সময় আসামি কারাগারে ছিলেন। ডেপুটি জেলারের পেছনের তারিখ দিয়ে স্বাক্ষর করার বিষয়টি আদালতের নজরে আসায় আদালত গত ৫ই অক্টোবর ডেপুটি জেলারকে তলব করেন। এ আদেশে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডেপুটি জেলার খোন্দকার মো. আল মামুন গতকাল হাইকোর্টে হাজির হয়ে ভুল স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে আবেদন করেন।