× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

দাফনের আগে নড়ে ওঠা শিশু মারিয়ামকে গাইনি চিকিৎসক বানাবেন বাবা

শেষের পাতা

মরিয়ম চম্পা
২০ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার

গত শুক্রবার ঢাকা মেডিকেলে মৃত ঘোষণার পর সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুটিকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কবরস্থানে দাফন করতে। দাফনের ঠিক আগে কেঁদে ওঠে শিশুটি। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। বর্তমানে ৪ দিন বয়সী এই শিশুটি ঢামেকের দ্বিতীয় তলায় এনআইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শিশুটির মা শাহিনুর আক্তারের শরীরের অবস্থা ভালো না হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে আলাদাভাবে উন্নত চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন নবজাতকের হৃদযন্ত্রসহ শরীরে একাধিক সমস্যা রয়েছে। অনেকটা নাটকীয়ভাবে বেঁচে ফেরা মারিয়ামকে নিয়ে আশাবাদী তার বাবা মো. ইয়াসিন মোল্লা। পেশায় বিআরটিসি পরিবহন চালক ইয়াসিন মোল্লা বলেন, আমার দুই মেয়ে।
শিশু মারিয়ামের বেঁচে ফেরাটা এখনো আমার কাছে অনেকটা অবিশ্বাস্য। আমার স্বপ্ন মারিয়ামকে গাইনি চিকিৎসক বানাবো। তিনি বলেন, বড় মেয়ে ইশরাত জাহানের বয়স ৯ বছর। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজধানীর তুরাগের ধৌড় এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকি। ওইদিনের ঘটনা আর মনে করতে চাই না। চিকিৎসক জানিয়েছেন নবজাতক এখন ভালো আছে।
ওর চিকিৎসা চলছে। গতকাল সকালে গিয়ে মারিয়ামকে দেখে এসেছি। হাত-পা নাড়াচ্ছে। নিঃশ্বাস নিচ্ছে। শিশুর যাবতীয় খরচ আমিই বহন করছি। এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় এক লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। এত খরচ বহন করা আমার একার পক্ষে সম্ভব নয়। চিকিৎসার খরচ চালাতে আত্মীয় স্বজন যে যেখানে আছেন তাদের কাছে আর্থিক সহায়তা চাচ্ছি। প্রত্যেকে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কম বেশি সাহায্য করছে। তিনি আরো বলেন, শিশুটিকে চিকিৎসক কর্তৃক মৃত ঘোষণা করা সম্পর্কে যা শুনেছেন বিষয়টি সত্য। কারণ, চিকিৎসক মৃত ঘোষণা না করলে তো আর নবজাতকের লাশ নিয়ে হাসপাতালের গেটের বাইরে বেরিয়ে আসতে পারতাম না। পরবর্তীতে তাদের কাছে আমরা শিশুটিকে নিয়ে এসেছি। এখন তারা খুব ভালো চিকিৎসা দিচ্ছেন। সবসময় চিকিৎসকরা খোঁজখবর রাখছেন। গাইনি ও শিশু বিভাগের প্রধান মা ও শিশুকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন। তারা জানিয়েছেন, ‘আমাদের চিকিৎসা চলছে। আপনারা দুশ্চিন্তা করবেন না। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।’
সৃষ্টিকর্তা যদি মারিয়ামকে আমার কাছে সুস্থভাবে ফিরিয়ে দেন তাহলে সে যেভাবে এখানে মৃত্যুর দরজা থেকে ফিরে এসেছে আমি তাকে ঢামেকের ওই বিভাগের চিকিৎসক বানাতে চাই। এটাই এখন আমার একমাত্র স্বপ্ন এবং আশা। আমার স্ত্রীকে ইতিমধ্যে জানিয়েছি। যাতে করে এভাবে আর কোনো শিশুকে মৃত ঘোষণা না করা হয়। মারিয়াম বড় হয়ে ঢামেকের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক হতে পারলে হয়তো সে সাধারণ মানুষের সুচিকিৎসা করবে। চিকিৎসকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে যেন এরকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সে বিষয়ে তাদের যত্নশীল হতে হবে। কারণ, এখানে তাদের কাজের মুন্সিয়ানা নির্ভর করে। অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনা ঘটে গেছে। এটা তো প্রকৃতপক্ষে খুব খারাপ বিষয়। ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা যেন আর না হয় সে বিষয়ে নিজেদের শোধরানো প্রয়োজন বলে মনে করছি। আমাদের পক্ষ থেকে বলতে চাই, ভবিষ্যতে এই ঘটনা যেন আর না ঘটে। এ বিষয়ে তাদের সাবধানতা অবলম্বনের পাশাপাশি নবজাতকের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত।
শিশু ওয়ার্ডের এনআইসিইউ’র কর্তব্যরত একজন চিকিৎসক জানান, এখনই শিশুর শারীরিক উন্নতি বোঝার সুযোগ নেই। প্রথমত, শিশুদের স্বাভাবিক ওজন শুরু হয় সাধারণত আড়াই কেজি থেকে। কিন্তু এই শিশুটির ওজন অনেক কম (৯শ’ গ্রাম), হার্টে সমস্যা এবং জন্ডিস আছে। বিশেষ করে হার্টের সমস্যাটা বেশি গুরুতর। এই মুহূর্তে আমাদের যা যা করণীয় সব কিছুই করছি। এমনিতে শিশুটি স্থিতিশীল আছে। শিশুর শরীরের অবস্থা যখন ভালো হবে তখন আমরা হার্টের আলাদা চিকিৎসা করবো।               
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন মানবজমিনকে বলেন, শিশুটির শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে আরেকটু ভালো। এখন পর্যন্ত তার শরীরে পরিপক্বতা আসেনি। সাধারণত ২৮ সপ্তাহ বয়স হলে আমরা ধরে নেই যে শিশু সুস্থ এবং স্বাভাবিক। এই শিশুটি অপরিপক্ব অবস্থায় আছে। আমরা চেষ্টা করছি। একটু একটু করে উন্নতি হচ্ছে। এখনো নিশ্চিত করে কিছু বলা যাচ্ছে না। নবজাতকের যাবতীয় চিকিৎসা ব্যয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বহন করছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর