× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নির্দেশনা মানছেন না ব্যবসায়ীরা

দেশ বিদেশ

আলতাফ হোসাইন
২০ অক্টোবর ২০২০, মঙ্গলবার

সিন্ডিকেট করে মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে চালের পাইকারি দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল সরকার। গত ৩০শে সেপ্টেম্বর খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে দেশের সব চালকল মালিকদের এই নির্দেশনা দেয়া হয়। নির্দেশনা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথায় বলা হয়। নতুন দর অনুযায়ী, প্রতিকেজি সরু মিনিকেট চাল ৫১ টাকা ৫০ পয়সা ও প্রতি ৫০ কেজির বস্তা ২ হাজার ৫৭৫ টাকায় বিক্রি করার কথা ছিল। আর মাঝারি মানের চাল প্রতিকেজি ৪৫ টাকা ও বস্তা ২ হাজার ২৫০ টাকায় বিক্রি করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবতা হলো বাজারে এখনো চালের দাম চড়া। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে ব্যবসায়ীরা আগের মতোই চড়া দামে চাল বিক্রি করছেন। চালের পর সম্প্রতি আলুর অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি ও নানা আলোচনা-সমালোচনার পর ভোক্তা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির নির্দেশ দিয়েছিল সরকার।
একই সঙ্গে খুচরা পর্যায়ে আলুর কেজি ৩৮ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রিকে অযৌক্তিক আখ্যা দেয়া হয়। কিন্তু খুচরা বাজারে এখনো আলুর কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। সরকারের কোনো নির্দেশনাকেই তোয়াক্কা করছেন না ব্যসায়ীরা। দর নির্ধারণ করে দেয়া হলেও কেউ মানছেন না। ব্যবসায়ীদের এমন বেপরোয়া আচরণে সবাই অবাক। অন্যদিকে, বাজারের এমন অস্থিরতার ফলে বিশেষ করে অসহায় হয়ে পড়ছে স্বল্প আয়ের সাধারণ ভোক্তারা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ার ফলেই দিনদিন অসাধু ব্যবসায়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে কনজ্যুমার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে দাম নির্ধারণ করে পণ্যের দাম নির্ধারণ করা সহজ নয়। সাধারণত আমরা যেটা জানি, যখন চাহিদা কম থাকে এবং সরবরাহ বেশি থাকে তখন পণ্যের দাম কমে। অপরদিকে, চাহিদা বেশি থাকলে সরবরাহ কম থাকলে মূল্য বাড়ে। এখন সাম্প্রতিকালে বেশকিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। বন্যায় ফসলি জমির ক্ষতি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার কারণে সরবরাহ কমেছে। উৎপাদনও কমেছে। এ কারণে শাক-সবজির দাম বেড়েছে। কিন্তু চাহিদাতো আর কমেনি, সে কারণে শাক-সবজির দাম বেড়েছে। আর শাক-সবজির দাম বাড়ায় বাজারে আলুর চাহিদা বেড়েছে। যদিও সরকারি হিসাবে চাহিদার তুলনায় আলুর উৎপাদন অনেক বেশি। এরপর করোনাকলে আলু ত্রাণ হিসেবেও বিতরণ হয়েছে। তবু সরকারি হিসাব যদি সঠিক হয়ে থাকে তাহলে আলুর দাম বাড়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।
ক্যাব সভাপতি আরো বলেন, যখন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি থাকে, কোনো পণ্যের দাম বাড়ে তখন ব্যবসায়ীদের মধ্যে যেসব পণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকে সেগুলোরও দাম বাড়ানোর প্রবণতা থাকে। এটা তারা বাড়তি মুনাফা লাভের আশায় করে থাকে। এর প্রেক্ষিতে সরকার পাইকারি ও খুচরা বাজারসহ বিভিন্ন পর্যায়ে দুই একটি পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু তারা কিছু শুনছে না। সেজন্য আমি প্রথমেই বলেছি, শুধু দাম নির্ধারণ করে দিয়ে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। এখন এ ক্ষেত্রে সরকারকে যেটা করতে হবে, সত্যিকারেই যদি কোল্ড স্টোরে আলুর পর্যাপ্ত মজুত থেকে থাকে, তাহলে যারা এই মজুত ধরে রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া এবং বিক্রি করতে বাধ্য করতে হবে। বাজারে সরবরাহ বাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তখন মূল্য স্বাভাবিক হবে। কিন্তু এমন যদি হয় যে, কিতাবে আছে বাস্তবে নাই তাহলে এসব করেও কোনো কাজ হবে না।
বাজারের এমন অব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিনের। বাজারে অভিযানও চালানো হয়। ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করা হয়। কিন্তু কোনো সুফল দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে গোলাম রহমান বলেন, সব রোগের চিকিৎসায় যেমন একই ওষুধ নয়, তেমনি সব পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ একই ব্যবস্থায় হতে পারে না। মূল কথা হলো- সরবরাহ বাড়াতে হবে। তাহলেই দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে, স্বাভাবিক থাকবে। কিন্তু যারা মজুত ধরে রেখেছে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের ব্যবস্থা নিতে হবে। তাদের ধরে শাস্তি দেয়া হোক, জেলে দেয়া হোক, তাহলেই বাজার নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো- তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না? তারাতো সরকারের চেয়ে শক্তিশালী না। আসলে সরকার যদি কাউকে আইনের আওতায় না আনতে চায় তখনই সংকট সৃষ্টি হয়। কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না? এক্ষেত্রে দু’টি কারণ থাকতে পারে; হতে পারে এখানে সরকারের তথ্য ভুল, অথবা সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে আগ্রহী না। সরকারের চেয়ে শক্তিশালী কেউ নাই। তিনি বলেন, কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেয়া হয় না- তা নয়। বাজারে অভিযান চালানো হয়, ব্যবসায়ীদের জরিমানা করা হয়। কিন্তু সার্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতির জন্য কেবল শাস্তি দিয়ে কাজ হয় না। এটার জন্য নানা রকমের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যারা অভিজ্ঞ সরকারের তারা সবই জানে। এটা শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন এটা ঠিক, তবে সরকার চাইলে সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে পারে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর